আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন তালিবান নেতাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যদিও সম্প্রতি তালিবান হামলায় একজন মার্কিন সেনা নিহতের প্রেক্ষিতে গোষ্ঠীটির সঙ্গে আসন্ন শান্তিচুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মূলত ট্রাম্পের সেই ঘোষণার প্রেক্ষিতে সশস্ত্র বিদ্রোহী এই সংগঠনটির পক্ষ থেকেও একটি বিবৃতি দেওয়া হয়, যেখানে শান্তি আলোচনা ভেঙে গেলে যুক্তরাষ্ট্রেরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে। এমনকি সেনাদের জীবনহানির শঙ্কাও বৃদ্ধি পাবে বলে জানানো হয়।
রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) তালিবানের পাঠানো সেই বিবৃতির বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা 'রয়টার্স' জানায়, চলমান শান্তি আলোচনা বাতিল করার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। কেননা এতে মার্কিনীদের আরও বেশি জীবনহানি ঘটবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এর মাধ্যমে সকলের কাছে আমেরিকার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে যাবে। তাছাড়া বিশ্বের কাছে মার্কিন প্রশাসনের শান্তি বিরোধী অবস্থান আরও বেশি পরিষ্কার হবে। একই সঙ্গে তাদের জীবন এবং সম্পদের ক্ষতি বৃদ্ধি পাবে।
চলমান শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর অপর এক বিবৃতিতে তালিবান মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ মার্কিন প্রশাসনকে অভিযুক্ত করে বলেন, 'কোনো একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে শান্তি আলোচনা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণই পরিপক্বতা। আমার ধারণা তা মূলত কোনো অভিজ্ঞতার অভাবেই ঘটেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আফগান সরকারের সঙ্গে তালিবান আগামী ২৩শে সেপ্টেম্বর একটি শান্তি আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে। যদিও বিষয়টি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।'
দীর্ঘ ১৮ বছরের যুদ্ধ পরিচালনার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং হতাহতের পর অবশেষে সংকট নিরসনের লক্ষ্যে গত বছরের জুন থেকে কাতারের রাজধানী দোহায় মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা শুরু করেন তালিবান নেতারা। টানা নয় দফা বৈঠক শেষে এরই ধারাবাহিকতায় চলতি সপ্তাহে আফগান ও মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ মধ্যস্থতাকারী জালমে খলিলজাদ ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা 'রয়টার্স'কে বলেছেন, 'আফগানিস্তানের মোট ৫টি সেনাঘাঁটি থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়ে একটি খসড়া কাঠামো নিয়ে আমরা এরই মধ্যে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছি।'
চলমান শান্তি আলোচনার অন্যতম মধ্যস্থতাকারী জালমায় খালিজাদ আরও বলেন, 'আগামী সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) তালিবান নেতাদের সঙ্গে মূল চুক্তিটি স্বাক্ষর হওয়ার কথা ছিল। যার অংশ হিসেবে পরবর্তী ২০ সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রায় ৫ হাজার চার শতাধিক সেনা প্রত্যাহার করে নেবে।'
তার মতে, যদিও গত বৃহস্পতিবারের (৫ সেপ্টেম্বর) সেই বিধ্বংসী হামলার পর থেকে আমাদের মধ্যে এক বিরাট শঙ্কা তৈরি হয়েছে যে; শান্তি চুক্তিটি স্বাক্ষরের পরও তারা (তালিবান) হামলা চালিয়ে যেতে পারে। মূলত এমন শঙ্কা থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন।'
এর আগে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হামলার পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের নির্দেশে আফগানিস্তানে শুরু হয় মার্কিন অভিযান। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে যার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। যদিও এর পরও আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে তাদের সেনা মোতায়েন অব্যাহত রাখলেও সেখানকার অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ রয়ে যায় তালিবানের হাতেই।
এমন প্রেক্ষাপটে ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে দেশটিতে সংঘাত বন্ধের নামে তালিবান নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় শান্তি আলোচনায় বসেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যদিও আফগান সরকারকে মার্কিন পুতুল হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রথমে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল তালিবান। তবে পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চাপের কারণে অবশেষে বৈঠকে বসতে সম্মত হয় সকল পক্ষ।
আরও পড়ুন :- তালিবান-মার্কিন শান্তিচুক্তি বাতিল করলেন ট্রাম্প
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা 'রয়টার্স' জানায়, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের মাত্র ৫৬ শতাংশ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সরকারের হাতে। যদিও ২০১৫ সাল পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিল ৭২ শতাংশ। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে তালিবান যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সরকারি বাহিনীকে হটিয়ে বহু এলাকার দখল নিজেদের করে নেয়।
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড