আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের সদ্য সমাপ্ত চন্দ্রাভিযান শতভাগ সফল না হলেও দেশটির সকল প্রচেষ্টাই এবার নজরে এসেছে আন্তর্জাতিক মহলের। যদিও চাঁদের যে অংশে বিক্রম অবতরণ করেছে; তা সফ্ট ল্যান্ডিংয়ের পক্ষে যথেষ্ট সুবিধার নয়। এমনকি সেখানে বড় কোনো বাধা আছে, যার জন্য বিজ্ঞানীরা ল্যান্ডারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) এমনটাই দাবি করেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো।
এর আগে গত শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) চন্দ্রপৃষ্ঠের মাত্র ২ দশমিক ১ কিলোমিটার দূরত্বে 'চন্দ্রযান-২' এর ল্যান্ডার অংশ বিক্রমের সঙ্গে গ্রাউন্ড স্টেশনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও এরই মধ্যে ইসরো চেয়ারম্যান কে শিবান বলেছেন, 'আমরা বিক্রমের অবস্থান শনাক্ত করেছি। 'চন্দ্রযান-২' এর অর্বিটার কাজটি করতে সফল হয়েছে; এখন যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা চলছে। পরবর্তীতে সর্বশেষ তথ্য জানানো হবে।'
তবে চাঁদে অবতরণ করলেও উপগ্রহের উপরিভাগে থাকা বাধার জন্যই পৃথিবী থেকে পাঠানো সিগন্যাল গ্রহণ করতে পারছে না ল্যান্ডার বিক্রম। রবিবার এমন দাবি করেছেন ইসরোর 'চন্দ্রযান-১' প্রকল্পের ডিরেক্টর মাইলস্বামী আন্নাদুরাই।
এ দিন বার্তা সংস্থা 'এএনআই'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, 'চাঁদের উপরিভাগে ল্যান্ডারের সন্ধান পাওয়ার পরেই এখন আমরা সেটির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছি। ধারনা করা হচ্ছে, চাঁদের যে অঞ্চলে বিক্রম নেমেছে, তা সফ্ট ল্যান্ডিংয়ের জন্য যথেষ্ট সুবিধাজনক নয়। হতে পারে সেখানে বড় কোনো বাধা আছে, যে কারণে এখনো ল্যান্ডারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা যাচ্ছে না।'
'চন্দ্রযান-১' প্রকল্পের এই ডিরেক্টর আরও বলেন, 'এর আগে যদিও ল্যান্ডারের দিকে নিশানা করে অর্বিটার থেকে বেশ কয়েকটি সিগন্যাল পাঠানো হয়েছে। যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে ল্যান্ডার আদৌ সিগন্যালটি ধরতে পারে কি না, এবার তা-ই দেখার বিষয়। অর্বিটার ও ল্যান্ডারের মধ্যে প্রায়শই পারস্পরিক বার্তা বিনিময়ের ব্যবস্থা থাকে। সেক্ষেত্রে আমাদের শুধু একপিঠের বার্তার উপরই নির্ভর করতে হচ্ছে।'
চাঁদের মাটিতে অবতরণের অপেক্ষায় ভারতের 'চন্দ্রযান- ২'। (ছবিসূত্র : দ্য হিলস টাইমস)
যদিও যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হলেও এর মেয়াদ মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিটের বেশি হবে না বলেই দাবি ইসরোর এই কর্মকর্তার। তাছাড়া ইসরোর বিজ্ঞানীরা বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রচণ্ড পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বলেও তিনি জানান।
এ দিকে ইসরোর বিজ্ঞানীদের মতে, 'চন্দ্রযান-২' এর অর্বিটারকে কাজে লাগিয়েই এবার বিক্রমের সন্ধান পাওয়া গেছে। মূলত অর্বিটের পাঠানো থার্মাল ছবি থেকে তারা এর খোঁজটি পেয়েছেন। 'থার্মাল ইমেজে'র মাধ্যমে প্রধানত যেকোনো ছবির তাপমাত্রাকে বিভিন্ন রঙে চিহ্নিত করা হয়। আর এর মাধ্যম কোনো বস্তুর তাপমাত্রা আলাদা হলে তাকে সহজেই শনাক্ত করা যায়। মূলত এভাবেই চন্দ্রপৃষ্ঠের থার্মাল ছবি ধারণের মাধ্যমে আলাদা রঙে চিহ্নিত করা গেছে ল্যান্ডার বিক্রমের প্রকৃত অবস্থান।
যদিও বিক্রমের সঙ্গে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি। তাই প্রাথমিকভাবে বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা চলছে। যদিও কাজটি সফল হলে খুব শিগগিরই বেশ কিছু জরুরি তথ্য পাওয়া যাবে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।
অপর দিকে গণমাধ্যমের দাবি, শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় দিবাগত রাত ২টা ২০ মিনিটে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের মাত্র কয়েক সেকেন্ড আগেই 'চন্দ্রযান-২' এর ল্যান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবন বলেছিলেন, 'রাত ১টা ৩৮ মিনিটে আমাদের অবতরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। চন্দ্রযান চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ২.১ কিলোমিটার পর্যন্ত পুরোপুরি স্বাভাবিকভাবেই চলছিল বিক্রমের অবতরণ প্রক্রিয়া। মূলত এর পরপরই রাত ২টা ২০ মিনিটে যেকোনো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে যানটির সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যা এখনো স্থাপন করা যায়নি।'
বিশ্লেষকদের মতে, প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের মাধ্যমে প্রথম দেশের স্বীকৃতি পাওয়ার কথা ছিল ভারতের। যদিও শেষমেশ মিশনকে আর সফলের বার্তা দিতে পারেনি ইসরোর বিজ্ঞানীরা।
ভারতীয় বিজ্ঞানীদের মতে, ইসরো চাঁদে নতুন অভিযানের জন্য সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল। যেখানে অভিযানে ব্যবহার করা হয়েছিল 'চন্দ্রযান-২' নামে নতুন স্যাটেলাইট। এবার যানটি চাঁদে অবতরণ করতে পারলে এটি হতো বিশ্বের চতুর্থ কোনো দেশের সফলভাবে চন্দ্র অভিযান। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন) সফলভাবে নিজেদের অভিযানটি সম্পন্ন করেছিল।
ইসরো জানায়, চাঁদ থেকে পানি, খনিজ ও পাথর সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করার জন্য ১৫ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল এই 'বিক্রম' নামে যানটিকে। চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের সঙ্গে সঙ্গেই এর ল্যান্ডার থেকে বেরিয়ে আসার কথা ছিল ভীষণ ছোট একটি রোভার 'প্রজ্ঞান'। যার ওজন মাত্র ২০ কিলোগ্রাম। আর 'চন্দ্রযান-২' এর সার্বিক ওজন ৩ হাজার ৮৫০ কিলোগ্রাম। ল্যান্ডারটি নেমে আসার সময় 'চন্দ্রযান-২' এর অরবিটারটি চাঁদের পিঠ (লুনার সারফেস) থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার ওপরে ছিল।
আরও পড়ুন :- তীরে এসে তরী ডুবাল ভারতের ‘চন্দ্রযান-২’
এর আগে ভারতের প্রথম চন্দ্রাভিযান হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন চাঁদের কক্ষপথে গিয়েছিল 'চন্দ্রযান-১'। চাঁদে পানির অন্যতম উপাদান হাইড্রক্সিল আয়নের খোঁজ দিয়েছিল যানটি।
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড