আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চলমান চুক্তিহীন ব্রেক্সিট ইস্যুতে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা থেকে এবার পদত্যাগ করলেন যুক্তরাজ্যের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রুড। পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ হুইপকে পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেও তিনি বলেন, 'মডারেট কনজারভেটিভদের যেখানে কোনো দায়িত্ব নেই সেখানে আমি থাকতে পারি না।'
এ দিকে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে দেওয়া পদত্যাগ পত্রে অ্যাম্বার রুড বলেছেন, 'আমি পুরোপুরি সরল বিশ্বাসে আপনার মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলাম। কেননা তখন আমি ভেবেছিলাম, চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের বিষয়টি আলোচনায় আছে।'
তিনি বলেন, 'আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আমাদের নতুন চুক্তিতে যাওয়ার দারুণ একটি সুযোগ ছিল। যদিও আমি এখন আর তা বিশ্বাস করি না, যে এটা সরকারের মূল লক্ষ্য।'
এর আগে এই একই ইস্যুতে কোনো ধরনের সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারায় চলতি বছরের মে মাসে আচমকা পদত্যাগের ঘোষণা দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। মূলত তার এই পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর পরই দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন কট্টর ব্রেক্সিটপন্থি নেতা বরিস জনসন।
পরবর্তীতে এক ভাষণে তিনি আগামী ৩১ অক্টোবর নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। প্রয়োজনে একটি চুক্তিহীন ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের পক্ষেও ইঙ্গিত দেন জনসন। যদিও এবার পার্লামেন্টের বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির একাধিক আইনপ্রণেতা এই চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটটি আটকাতে মরিয়া।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বরিস বলেছিলেন, '১৫ অক্টোবর আগাম নির্বাচন কিংবা ৩১ অক্টোবর প্রয়োজনে চুক্তিহীন ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করা না গেলে আমিও পদত্যাগ করতে পারি।' বর্তমানে মূলত এসব বিষয় নিয়েই এক রকম দ্বন্দ্বে রয়েছে বরিসের দল। যার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন তার ছোট ভাই জো জনসন।
৩১ অক্টোবরের মধ্যে চুক্তি বিহীন ব্রেক্সিট প্রতিহতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কাছে সময়সীমা বর্ধিত করার আহ্বান সম্বলিত একটি বিল পাঠানো হয়েছে। যা এখন রাজকীয় অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। ব্রেক্সিটের সময় বাড়ানো সংক্রান্ত আন্তঃদলীয় বিলটি গত শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) পার্লামেন্টে পাস করানো হয়। তবে প্রধানমন্ত্রী বরিসের মতে, 'ব্রেক্সিট বিলম্বিত করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছে আবেদন করার চেয়ে আমি খাদে পড়ে মরে যাওয়াকে বেছে নিতে চাই।'
তাছাড়া ব্রিটেনের চাকরি ও অবসরভাতা বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাম্বার রূপ বলেছেন, 'আমি মনে করি না যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে চুক্তি নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সরকারের মূল উদ্দেশ্য ছিল। গত মঙ্গলবার পার্লামেন্টের মোট ২১ জন টরি এমপিকে বরখাস্ত করা বরিসের একটি গণতন্ত্র ও শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ। যা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।'
ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অ্যাম্বারের মতো একজন প্রতিভাবান মন্ত্রীর পদত্যাগে তারা পুরোপুরি হতাশ। যদিও হাউস অব লর্ডসের একজন মুখপাত্র বলেন, 'মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়া সকল সদস্যই আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ব্রেক্সিটে সমর্থন দেওয়ার কথা রয়েছে।'
তার মতে, 'মানুষ ব্রেক্সিট চায়। কারও পদত্যাগে কিংবা পরিবর্তন নয়। কেননা এর মাধ্যমে সৃষ্ট সংকটের কোনো সমাধান হবে না।'
অপর দিকে ব্রিটিশ লেবার পার্টি থেকেও রুডের আচমকা এই পদত্যাগে সরকার স্পষ্টই ভেঙে পড়ছে বলে দাবি করা হয়। বিরোধী এই পার্টিটির নেতা জেরেমি করবিন মনে করেন, 'প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কখনোই জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নন। তিনি কেবলই নিজ দলের সদস্যের ভোটে নির্বাচিত; তাই তাকে কোনোদিন গণতন্ত্রের পক্ষের লোক বলে বিবেচনা করা যাবে না।'
আরও পড়ুন :- বন্দি বিনিময় : রুশ-ইউক্রেন সম্পর্কে নতুন অধ্যায় রচনা
করবিনের ভাষায়, তিনি (বরিস) রাজনীতিতে সবসময়ই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অনুসরণ করছেন। আর এ কারণেই ব্রিটিশ জনগণ বর্তমানে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও চাকরিতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।'
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড