হংকংয়ে বিক্ষোভ : গণতন্ত্রকামী নেতা জশুয়াকে গ্রেফতারের পর জামিন

ইউরেশিয়ার দক্ষিণপূর্ব উপকূলের দেশ হংকংয়ে গণতন্ত্রকামীদের সরকার বিরোধী বিক্ষোভে ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজপথ। তবে এরই মধ্যে গত শুক্রবার (৩০ আগস্ট) গণতন্ত্রের দাবিতে দেশটির আন্দোলনকারী রাজনৈতিক নেতা জশুয়া ওয়াংকে আটক করেছিল পুলিশ। যদিও এর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে জামিন দিতে বাধ্য হয় ক্যারি ল্যাম প্রশাসন।

কর্তৃপক্ষের বরাতে ব্রিটিশ গণমাধ্যম 'বিবিসি নিউজ' জানায়, শুক্রবার স্থানীয় সময় সকালে ওয়াংকে ছাড়াও আরও দুই বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অ্যাগনেস চো এবং অ্যান্ডি চ্যানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে তাদেরও জামিন প্রদান করেন আদালত।

এ দিকে নেতাদের আটকের প্রতিবাদে আজ শনিবার (৩১ আগস্ট) হংকংয়ে অবস্থিত বেইজিংয়ের লিয়াজোঁ অফিস প্রাঙ্গণে বিক্ষোভের ডাক দেন গণতন্ত্রকামীরা। যদিও পুলিশ এরই মধ্যে তা নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।

নেতার মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে ওয়াংয়ের রাজনৈতিক দল ডেমোসিস্টো এক বিবৃতিতে জানায়, পুলিশ তাকে জোরপূর্বক গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। হংকংয়ের ক্যারি ল্যাম প্রশাসনের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের সমর্থক দলটির আটক অন্য সদস্য আগনেস চৌকেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এই দুই রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে স্থানীয় পুলিশ সদর দপ্তর চত্বরে বেআইনিভাবে সমাবেশ আয়োজনের অভিযোগ রয়েছে। আগামী ৮ নভেম্বর পর্যন্ত আদালতে মামলাটি মুলতুবি রাখার সিদ্ধান্ত নেন বিচারক।

হংকংয়ের সড়কে বিক্ষোভরত জনগণ। (ছবিসূত্র : গ্লোবাল ফিউচার)

অপর দিকে সিভিল হিউম্যান রাইটস ফ্রন্টের (সিএইচআরএফ) কাছে পাঠানো খোলা চিঠিতে পুলিশ দাবি করে, 'অংশগ্রহণকারী কিছু লোক সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। গত ৯ জুন থেকে হংকংয়ে চলমান আন্দোলনে পুলিশ একই অভিযোগে প্রায় নয় শতাধিক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে।'

বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৪ সালে গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনে মূল ছাত্রনেতা ছিলেন এই জশুয়া। সে সময় টানা ৭০ দিন যাবত চলা আমব্রেলা আন্দোলনে তিনিই মূল নেতৃত্ব দেন। তখন বিশ্বজুড়েই হংকংয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠেন এই জশুয়া। যদিও এ জন্য পরবর্তীতে তাকে দীর্ঘদিন আটক করে রাখা হয়।

চলতি বছরের ১৭ জুন কারাগার থেকে মুক্তি পান জশুয়া। যদিও এর মাত্র চারদিনের মাথায় ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে পুনরায় পুলিশ সদর দপ্তর ঘেরাও করেন তিনি।

প্রায় ১৫০ বছর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকদের অধীনে থাকার পর ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই লিজ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় অঞ্চলটি শক্তিশালী চীনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। ঐতিহাসিক এই দিবসটির ২২ বছর পূর্তিতে গত ১ জুলাই আন্দোলনে সড়ক অবরোধ করেন গণতন্ত্রকামী লোকজন। প্রতি বছরের এই দিনে কর্মকর্তারা এক দিকে সরকারি ভবনগুলোতে উৎসব পালন করেন আর অপর দিকে গণতন্ত্রকামীরা অবস্থান নেন রাজপথে।

হংকংয়ে বিক্ষোভরত এক গণতন্ত্রকামীকে পুলিশি আগ্রাসন থেকে রক্ষা করছেন সাংবাদিক। (ছবিসূত্র : রয়টার্স)

দীর্ঘদিন যাবত হংকং চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হলেও ২০৪৭ সাল থেকে অঞ্চলটিকে স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা দেয় দেশটি। এর আগে গত মাসেও চীনপন্থি এক বিল নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছিল ইউরেশিয়ার দক্ষিণপূর্ব উপকূলের এই দেশ।

মূলত চীন এবং তাইওয়ানে আসামি প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত প্রস্তাবিত একটি বিলের বিপক্ষে তখন গোটা দেশে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এতে আন্দোলনকারীদের মূল ক্ষোভ দাঁড়ায় চীনের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে।

আরও পড়ুন :- হংকংয়ে বিক্ষোভ : ধস নেমেছে অর্থনীতিতে

বেইজিংয়ের দুর্বল আইন ব্যবস্থা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ডের কারণে হংকংয়ের সাধারণ মানুষ সেখানে কাউকে ফেরত পাঠাতে চাইছেন না। তাদের মতে, পার্লামেন্টে বিলটি পাস হলে তা অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে চীনা হস্তক্ষেপের সুযোগ অনেকাংশে বাড়িয়ে দেবে।

ওডি/কেএইচআর