আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গণতন্ত্রকামীদের চলমান সরকার বিরোধী বিক্ষোভে ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ইউরেশিয়ার দক্ষিণপূর্ব উপকূলীয় দেশ হংকং। এবার সড়কে আগত সেই বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। গত শনিবার (২৪ আগস্ট) স্থানীয় সময় দিবাগত রাতভর চলা এই অভিযানে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অন্তত ২৯ জনকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা 'রয়টার্সে'র প্রতিবেদনে জানান হয়, দেশটির কাউলুন উপদ্বীপের পূর্বাঞ্চলীয় ঘনবসতিপূর্ণ কয়ুন টং শিল্পাঞ্চলে শনিবার গোটা রাত বিক্ষোভ চলে। মূলত গণতন্ত্রকামীদের সেই কর্মসূচিতে জন সমাগম ঠেকাতে কয়ুন টংয়ের চারটি এমআরটি সাবওয়ে স্টেশন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। যদিও এরপরও কয়েক হাজারের বেশি লোক সড়কে আসতে সক্ষম হন।
পরবর্তীতে সড়কে বিক্ষোভরত জনতা পুলিশের দিকে মলোটোভ ককটেল ও ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করে; ঘটনার এক পর্যায়ে তারা এলাকার সকল সিসি ক্যামেরা সম্বলিত 'স্মার্ট' ল্যাম্পপোস্টগুলোকে ভেঙে ফেলে। মূলত এর পরপরই উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে পুলিশ। এ সময় সড়কে থাকা লোকজন বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করে পুলিশকে প্রতিহত করেন।
আয়োজকদের দাবি, বিক্ষোভকারীরা 'আমাকে গণতন্ত্র দাও অথবা মৃত্যু দাও' স্লোগানকে দেয়ালে লিখে এবং প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে চীনপন্থি শাসক ক্যারি ল্যামের বিরুদ্ধে সড়কে বিক্ষোভ করতে থাকে।
হংকংয়ের সড়কে বিক্ষোভরত গণতন্ত্রকামীরা। (ছবিসূত্র : এনবিসি নিউজ)
গণমাধ্যমের দাবি আসামি প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবিতে প্রায় পাঁচ মাসের বেশি সময় যাবত চলা সরকার বিরোধী এই বিক্ষোভে বর্তমানে উত্তাল হয়ে উঠেছে চীনা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটি। যার অংশ হিসেবে গত শুক্রবার (২৩ আগস্ট) শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হিসেবে দেশব্যাপী মানববন্ধনের আয়োজন করেছিল হংকংয়ের জনগণ।
মূলত এসবের প্রেক্ষিতে গত শনিবার হংকংয়ের কিয়োন তুং জেলায় এবং পরদিন রবিবার জিউন অন এবং কোই চিং জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন হাজারো গণতন্ত্রকামীরা।
যদিও এর আগে ক্যারি ল্যাম প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, অঞ্চলটিতে বসবাসরত সকল নাগরিকের জন্য এসব বিক্ষোভকারীরা এক বড় রকমের হুমকি হয়ে উঠেছে। যে কারণে আন্দোলনরতদের বারংবার সতর্ক করার পরও তা কার্যকর হয়নি। মূলত এর পরই তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ সদস্যরা বাধ্য হয়ে কাঁদানে গ্যাস ও হালকা বল প্রয়োগ করেছেন।
আসামী প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবিতে প্রায় পাঁচ মাসের বেশি সময় যাবত চলা এই বিক্ষোভে বর্তমানে উত্তাল হয়ে উঠেছে চীনা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটি। যে কারণে গত শুক্রবার দেশব্যাপী এক মানববন্ধনের আয়োজন করেছিল হংকংয়ের সর্বস্তরের জনগণ। মূলত এসবের প্রেক্ষিতে গত শনিবার দেশটির কিয়োন তুং জেলায় এবং পরদিন রবিবার জিউন অন এবং কোই চিং জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন গণতন্ত্রকামীরা।
হংকংয়ের বিমানবন্দর চত্বরে বিক্ষোভরত গণতন্ত্রকামীরা। (ছবিসূত্র : সিএনএন)
এর আগে গত মাসে ইউরেশিয়ার দক্ষিণপূর্ব উপকূলের এই দেশটিতে চীনপন্থি সরকার বিতর্কিত একটি আসামি প্রত্যর্পণ বিল পাসের উদ্যোগ নিলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে নামেন অঞ্চলটির লক্ষাধিক সাধারণ জনগণ। তাদের আশঙ্কা, বিলটি পাস হলে হংকংয়ের রাজনীতিতে চীনের হস্তক্ষেপ অনেকাংশে বেড়ে যাবে। পরবর্তীতে ব্যাপক আন্দোলনের মুখে বিলটি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। যদিও আন্দোলনকারীদের দাবি, বিলটি স্থগিত না রেখে পুরোপুরি বাতিল করা হোক।
প্রায় ১৫০ বছর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকদের অধীনে থাকার পর ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই লিজ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় অঞ্চলটি শক্তিশালী চীনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। ঐতিহাসিক এই দিবসটির ২২ বছর পূর্তিতে গত ১ জুলাই আন্দোলনে সড়ক অবরোধ করেন গণতন্ত্রকামী লোকজন। প্রতি বছরের এই দিনে কর্মকর্তারা এক দিকে সরকারি ভবনগুলোতে উৎসব পালন করেন আর অপর দিকে গণতন্ত্রকামীরা অবস্থান নেন রাজপথে।
আরও পড়ুন : বিক্ষোভের পর এবার হংকংয়ে মানববন্ধন, আরও কর্মসূচির আভাস
দীর্ঘদিন যাবত হংকং চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হলেও ২০৪৭ সাল থেকে অঞ্চলটিকে স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা দেয় দেশটি। এর আগে গত মাসেও চীনপন্থি এক বিল নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছিল ইউরেশিয়ার দক্ষিণপূর্ব উপকূলের এই দেশ।
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড