আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধ, ব্রেক্সিট, জলবায়ু সংকট ও অ্যামাজন মহাবনে আগুনসহ নানা ইস্যুতে ক্রমশ উত্তপ্ত হতে চলেছে ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলীয় বায়ারিতজ শহরে আয়োজিত এবারের জি-৭ সম্মেলন। যদিও এর আগে এতো মতভিন্নতা নিয়ে কখনোই কোনো সম্মেলনের আয়োজন করেনি জি-৭। তবে বৈঠক শেষে বিশ্বনেতারা এসব ইস্যুতে একমত হবেন বলে আশাবাদ প্রকাশ করে গত শনিবার (২৪ আগস্ট) শীর্ষ সাত দেশের রাষ্ট্র প্রধানের উপস্থিতিতে শুরু হয়েছে এবারের সম্মেলন।
জার্মান গণমাধ্যম 'ডয়চ ভেলে'র খবরে বলা হয়, ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক অবশ্য এসব ইস্যুতে এরই মধ্যে আয়োজকদের সতর্ক করে দিয়েছেন। তার মতে, এবারের সম্মেলনই হতে পারে রাজনৈতিক একতায় পৌঁছানোর শেষ সুযোগ।
শনিবার গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন, 'মুক্ত বিশ্ব ও এর নেতৃবৃন্দের জন্য এবারের সম্মেলন এক কঠিন পরীক্ষার সামিল।' যদিও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রো ইতোমধ্যে বলেছেন, 'এবারের সম্মেলনে আমার একমাত্র লক্ষ্য আগত সকল নেতাদের এটা বোঝানো যে, পারস্পরিক উত্তেজনা বিশেষ করে বাণিজ্য সঙ্কট সব দেশের জন্যই ক্ষতিকর।'
এ দিকে প্রতি বছরের মতোই এবারও সম্মেলন স্থলের বাইরে জড়ো হয়েছেন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। বায়ারিতজের পার্শ্ববর্তী শহর হেনদায়েতে এরই মধ্যে জি-৭ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অর্থনৈতিক ও পরিবেশ নীতি পাল্টানোর দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্যান্য ইস্যুতে কর্তৃপক্ষের কার্যকর ভূমিকা গ্রহণে দাবি তাদের।
চলমান বাণিজ্য সংকটের কেন্দ্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প
বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর সংগঠন 'গ্রুপ অব সেভেনে'র (জি-৭) ৪৫তম সম্মেলন যোগ দেওয়ার পূর্বেই আয়োজক ফ্রান্সকে হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত প্রতিষ্ঠানের ওপর ডিজিটাল কর আরোপের পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসবে ফরাসি মদের ওপর নতুন করে অতিরিক্ত কর বসানোর ঘোষণা দেন তিনি।
তবে দ্রুতই পাল্টা জবাব দিয়েছেন ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক। তিনি বলেছেন, 'মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার হুমকি বাস্তবায়ন করলে ইইউ তাৎক্ষণিক পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত।'
স্ত্রী মেলানিয়াকে নিয়ে এরই মধ্যে ফ্রান্সে পৌঁছে গেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত শনিবার স্থানীয় সময় বিকালে ফরাসি প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে ট্রাম্প দম্পতিকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানানো হয়। যদিও সম্মেলনের পূর্বেই নিজেদের বিভিন্ন পণ্যে কর বাড়ানোয় ঘোষণায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়ার পরাশক্তি চীনের মধ্যে চলমান উত্তেজনা ক্রমশ বাণিজ্য যুদ্ধের দিকে রূপ নিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, চীন-মার্কিন বাণিজ্য সঙ্কটকেই এখন পৃথিবীজুড়ে চলতে থাকা অর্থনৈতিক ধীরগতির অন্যতম কারণ। এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে আবারও এক বিরাট অর্থনৈতিক মন্দার মুখে পড়তে পারে গোটা বিশ্ব।
অ্যামাজন মহাবন ইস্যুতে সরব ম্যাক্রো
জি-৭ এর এবারের আলোচ্য সূচিতে 'পৃথিবীর ফুসফুস' খ্যাত দক্ষিণ আমেরিকার অ্যামাজন মহাবনে জ্বলতে থাকা দাবানলও এক বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোরানো এখনি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ইইউ'র সঙ্গে দেশটির সব ধরনের বাণিজ্য চুক্তি এরই মধ্যে বাতিলের হুমকিও দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
ম্যাক্রো বলেছেন, 'আগুন থামাতে এবং পুনরায় বনায়নে শুধু আহ্বানই জানাব না; আমরা অ্যামাজনিয়া অঞ্চলের অন্যান্য রাষ্ট্রকে সঙ্গে নিয়ে সর্বশক্তি প্রয়োগ করব।' যদিও প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোর এই বক্তব্যকে এরই মধ্যে সমর্থন জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলসহ বিশ্বের বেশ কিছু রাষ্ট্র প্রধান।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এই জি-৭-এর প্রতিনিধিত্ব করে। পূর্বে এটি জি-৮ নামে পরিচিত ছিল। ২০১৪ সালের ক্রিমিয়া সঙ্কট নিয়ে রুশ সংশ্লিষ্টতার কারণে রাশিয়াকে তাৎক্ষণিক জি-৮ থেকে বাদ দেওয়া হয়। মূলত এরপর থেকেই জি-৭ নামে পরিচিতি পায় সংগঠনটি।
আরও পড়ুন :- চীনকে 'চোর' বলে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিকল্প খোঁজার পরামর্শ ট্রাম্পের
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও এই সম্মেলনের সদস্য দেশগুলো হলো- কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড