আন্তর্জাতিক ডেস্ক
দিল্লীর সর্ব ভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানে (এইমস) ৬৬ বছর বয়সে দীর্ঘকালীন অসুস্থতাজনিত কারনে ভারতের সাবেক কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ও মোদী সরকারের শক্তিশালী রক্ষক অরুণ জেটলি মারা যান। আগস্টের ৬ তারিখে বিজেপি তার শক্তিশালী যোদ্ধা সুষমা স্বরাজকে হারান, শনিবার (২৪ আগস্ট) বাংলাদেশ সময় বেলা ১২টা ৩৭ মিনিটে আরেক সেনাপতিকে হারালেন মোদী।
সুষমা স্বরাজের মতো অরুণ জেটলিও আইনজীবি থেকে রাজনীতিতে নাম লেখান, দেশজুড়ে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে পুরোদমে রাজনীতিবিদে পরিণত হন। বিজেপি নেতৃত্বাধীন মোদী সরকারের প্রথম মেয়াদের ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে জেটলি চূড়ান্ত ব্যাকরুম কৌশলবিদ হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেন।
ভারতের সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে বিজেপি দ্বিতীয়বারের মতো জয়লাভ করার পরে, জেটলি নরেন্দ্র মোদীকে চিঠির মাধ্যমে তার স্বাস্থ্যের কারণে 'নতুন সরকারের কোনও দায়িত্ব নিতে অসম্মতির' কথা জানান।
ছবি : সংগৃহীত
টুইটে প্রকাশিত সেই চিঠিতে অরুণ জেটলি লিখেছিলেন, 'আপনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করার জন্য আমি আপনাকে আমায় নিজের জন্য, আমার চিকিত্সা এবং আমার স্বাস্থ্যের জন্য একটি যুক্তিসঙ্গত সময় দেয়ার কথা লিখছি। অতএব, বর্তমান নতুন সরকারে কোনও দায়িত্বে অংশ নেয়া উচিৎ নয়।'
'কিছু গুরুতর শারীরিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছি এবং আমার চিকিত্সা এবং স্বাস্থ্যের প্রতি মনোনিবেশ করতে যেকোনও দায়বদ্ধতা থেকে দূরে থাকতে' চান বলে চিঠিতে সাবেক এই অর্থমন্ত্রী যোগ করেছিলেন। তবে,বিজেপির প্রবীণ এই নেতা এই কথা বলে স্বাক্ষর করলেন যে, তিনি সরকার বা দলকে সমর্থন করার জন্য কোনও কাজ 'অনানুষ্ঠানিকভাবে' গ্রহণ করতে 'অবশ্যই' সম্মত থাকবেন।
গত কয়েকমাস ধরে জেটলিকে খুব একটা জনসমক্ষে দেখা যায়নি এবং বেশিরভাগ সময়েই নিজের ব্লগ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বার্তাগুলো প্রকাশ করেছিলেন। বিজেপির প্রধান সমস্যাগুলো সমাধানে এবং প্রধান অর্থনৈতিক আইন পরিচালনায় সরকারের পক্ষে বিতর্কিত নীতিমালাকেও রক্ষা করেছিলেন।
২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীর প্রথম দায়িত্ব গ্রহণের পরে জেটলিকে তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন- অর্থ, প্রতিরক্ষা এবং তথ্য ও সম্প্রচার।
ছবি : সংগৃহীত
গত বছর মে মাসে কিডনি প্রতিস্থাপনের পরে জেটলির স্বাস্থ্যের অবস্থার আরও অবনতি হয়েছিল। ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট ঘোষণার সময় তিনি ডায়াবেটিস চিকিত্সার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালে ছিলেন।
সুষমা স্বরাজের মতো জেটলিও এলকে আদভানির মূল দলের অংশ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তবে, গুজরাট ও নয়াদিল্লির মধ্যে একটি সেতুবন্ধক হিসাবে জেটলির ভূমিকা ছিল।
২০১৪ সালের নির্বাচনে রাজ্যসভার সদস্য হয়ে জেটলি পাঞ্জাবের অমৃতসর থেকে লড়াই করেছিলেন। মোদী জোয়ারের মধ্যেও সেই নির্বাচনে জেটলি পরাজিত হন, তবে তাকেই মোদী দেশটির কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। জেটলি একজন ক্রিকেট অনুরাগী ছিলেন এবং দিল্লী ক্রিকেটের প্রধান ও ছিলেন।
অরুণ জেটলির প্রয়াণে ইতোমধ্যেই শোকপ্রকাশ করেছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘অরুণ জেটলির প্রয়াণে শোকাহত আমি। দীর্ঘদিন শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করছিলেন। একজন বুদ্ধিদীপ্ত আইনজীবী এবং অভিজ্ঞ সাংসদ ছিলেন উনি। দেশ গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল ওর।'
ছবি : সংগৃহীত
দেশের বাইরে থাকা নরেন্দ্র মোদী টুইটারে লেখেন, 'অরুণ জেটলিজির প্রয়াণে এক জন বন্ধু হারালাম আমি। ওকে জানার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। ওর মতো দূরদর্শিতা এবং উপলব্ধি খুব কম মানুষের রয়েছে। বহু সুখস্মৃতি রেখে গেলেন। আমরা ওর অভাব অনুভব করব।'
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটারে লেখেন, 'অরুণ জেটলিজির প্রয়াণে মর্মাহত আমি। অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছেন উনি। একজন অসাধারণ সাংসদ এবং বুদ্ধিদীপ্ত আইনজীবী ছিলেন। সব রাজনৈতিক দল ওকে শ্রদ্ধা করত। ভারতীয় রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন উনি। ওর স্ত্রী, সন্তান, বন্ধু এবং সমর্থকদের সমবেদনা জানাই।'
অরুণ জেটলির মৃত্যুর খবর পেয়ে হায়দারাবাদ থেকে দিল্লি গেছেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। টুইটারে তিনি লেখেন, 'অরুণ জেটলিজির প্রয়াণে শোকাহত আমি। এটা আমার কাছে ব্যক্তিগত ক্ষতি। শুধুমাত্র দলের একজন শীর্ষ নেতাকেই হারাইনি, পরিবারের এক সদস্যকে হারিয়েছি, আমার কাছে যিনি চিরকাল পথপ্রদর্শক হয় থাকবেন।'
ছবি : সংগৃহীত
পাঞ্জাবী আইনজীবী পিতা ও গৃহিণী মায়ের সংসারে দিল্লীতে ১৯৫২ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেছিলেন অরুণ জেটলি। দিল্লীর সেইন্ট জ্যাভিয়ার স্কুল থেকে পাশ করে নয়াদিল্লীর শ্রী-রাম বাণিজ্য মহাবিদ্যালয় থেকে বি.কম পাশ করেন ১৯৭৩ সালে। ১৯৭৭ সালে দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.বি. সম্পন্ন করেন জেটলি। বর্তমানে তার এক কন্যা ও এক পুত্র রয়েছে।
দীর্ঘদিন সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিসও করেছেন। দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়ই অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) ছাত্র নেতা নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭৫-৭৭ সালের ভারতের জরুরি অবস্থার সময়, যখন ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস সরকার মৌলিক অধিকারকে কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ করেছিল এবং বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক বিরোধীদের জেলে পাঠিয়েছিলেন, জেটলি তখন জয় প্রকাশ নারায়ণের সাথে যুক্ত ছিলেন, যিনি 'জেপি' নামে পরিচিত। তাকেও কারাগারে রাখা হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে অটল বিহারি সরকারের প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছিলেন। পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভাতেও জায়গা করে নেন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড