আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চলমান চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের অংশ হিসেবে এবার এশিয়ার পরাশক্তি খ্যাত চীনা পণ্যের ওপর পুনরায় শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বেইজিং থেকে আমদানিকৃত প্রায় ৫৫ হাজার কোটি ডলার মূল্যমানের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত পাঁচ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাস্প।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা 'রয়টার্সে'র প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াশিংটনের পূর্বে আরোপিত শুল্কের প্রতিক্রিয়া হিসেবে গত শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বেইজিং অতিরিক্ত সাড়ে সাত হাজার কোটি ডলারের মার্কিন আমদানি পণ্যে শুল্ক বসানোর ঘোষণা দেয়। মূলত এর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মাথায় এক টুইট বার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অতিরিক্ত এই শুল্কারোপের ঘোষণা দেন।
একই দিন নিজের ভেরিফায়েড টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে করা পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনকে একটি 'চোর' বলে আখ্যায়িত করেছেন। একই সঙ্গে দেশটিতে বাণিজ্যরত সকল মার্কিন কোম্পানিগুলোকে তাৎক্ষনিক নিজেদের কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'বহু বছর যাবত চীন আমাদের ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করে যাচ্ছে। তারা বছরে আমাদের কয়েকশ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরি করছে। তাই তারা এ কাজ অব্যাহত রাখতে চায়। যদিও আমি এটা কখনোই হতে দিতে পারি না।'
চীনকে আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে মার্কিন এ প্রেসিডেন্ট আরও বলেছেন, 'সত্যি বলতে তাদের ছাড়াই আমরা অনেক ভালো থাকতে পারি। বছরের পর বছর যাবত, এমনকি যুগের পর যুগ ধরে তারা আমাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন ও চুরি করে নিয়েছে। মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই এটা বন্ধ করতে হবে।'
টুইট বার্তায় ট্রাম্প আরও বলেন, 'আমাদের মহান আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে তাৎক্ষণিকভাবে চীনের বিকল্প খোঁজার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে আপনাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং পণ্যসামগ্রী যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনের বিষয়টিও রয়েছে।'
এর আগে একই দিন মার্কিন পণ্যে অতিরিক্ত ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল চীন। একই সঙ্গে দেশটি থেকে আমদানিকৃত গাড়িতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কথাও জানিয়েছিল বেইজিং।
বিশ্লেষকদের মতে, চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্কারোপের প্রেক্ষিতে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বেইজিংয়ের এই পদক্ষেপ। যদিও এর পরপরই নিজের টুইটার পোস্টে চীনকে 'চোর' হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। একই সঙ্গে তিনি মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে এর বিকল্প পথ খোঁজার জন্যও পরামর্শ দিয়েছিলেন।
এ দিকে চলতি মাসের গোঁড়ার দিকে চীনা পণ্যে নতুন করে ১০ শতাংশ হারে ৩০ হাজার কোটি ডলারের শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল ওয়াশিংটন। ট্রাম্প। যা আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে বেইজিং থেকে পাঠানো স্মার্টফোন, পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যে কার্যকর হতে যাচ্ছে।
গত ১ আগস্ট নিজের টুইটার পোস্টে ট্রাম্প নতুন এ শুল্ক আরোপের ঘোষণাটি দেন। যেখানে ২৫ হাজার কোটি ডলার সমমূল্যের চীনা পণ্যে আগে থেকেই ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক জারি করা ছিল। মূলত এসবের প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ এক বিবৃতিতে চীনের স্টেট কাউন্সিল জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের ফলে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বেইজিং এমনটা করতে বাধ্য হয়েছে।
অপর দিকে এশিয়ার পরাশক্তি চীনের সঙ্গে বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে গত বছর থেকে বেইজিংয়ের রফতানিকৃত পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। 'মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন' এবং 'আমেরিকা ফার্স্ট' নামে কথিত সংরক্ষণশীল দুটি নীতির ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় আসা ট্রাম্প প্রশাসনের এসব পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বেইজিংও মার্কিন পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়।
শনিবার (২৪ আগস্ট) থেকে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বিশ্বের বেশ কয়েকটি অর্থনীতির দেশের শীর্ষ নেতাদের দেখা হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও বিশ্লেষকদের ধারনা, সেখানেও এই বাণিজ্য উত্তেজনা ব্যাপক উত্তাপ ছড়াতে পারে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে চীন অবশ্য এ জোটে নেই।
আরও পড়ুন :- চীনকে 'চোর' বলে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিকল্প খোঁজার পরামর্শ ট্রাম্পের
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও এই সম্মেলনের সদস্য দেশগুলো হলো- কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড