আন্তর্জাতিক ডেস্ক
দাউ দাউ করে জ্বলছে 'পৃথিবীর ফুসফুস' খ্যাত ব্রাজিলের অ্যামাজন মহাবন। ভয়ঙ্কর হয়ে উঠা এই দাবানলকে নিয়ন্ত্রণে আনতে এরই মধ্যে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামতে নির্দেশ দিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোরানো। সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি সরকারি আদেশ জারি করা হয়।
প্রেসিডেন্ট বলসোরানো কর্তৃক ব্রাজিলিয়ান বনাঞ্চল বিভাগের প্রধানকে অপসারণের পর পরই ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় যাবত জ্বলছে চিরহরিৎ অ্যামাজনের বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল।
ব্রাজিল স্পেস রিসার্চ সেন্টার জানিয়েছে, সাম্প্রতিক কালে অ্যামাজনের গভীর জঙ্গলে এই নিয়ে প্রায় ৭২ হাজার ৮৪৩ বার আগুন লেগেছে; যা গত বছরের তুলনায় ৮৪ শতাংশ বেশি।
'বিবিসি নিউজ' এক প্রতিবেদনে জানায়, পরিবেশ, আদি ভূমি ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলকে সংরক্ষণের জন্য এবার সেনাবাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রাজিল সরকার। মূলত ইউরোপিয়ান নেতাদের দেওয়া প্রচণ্ড চাপের পর পরই এমন সিদ্ধান্ত নিলেন প্রেসিডেন্ট বলসোরানো।
ব্রিটেনভিত্তিক এই গণমাধ্যমটির দাবি, অ্যামাজন বনের আগুন থেকে আসা কালো ধোঁয়ার কারণে ব্রাজিলের সাও পাওলো শহর অন্ধকারে ঢেকে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে অ্যামাজনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা স্বাভাবিক হলেও গবাদিপশুর চারণভূমি সৃষ্টি করতে এর অনেক এলাকায় ইচ্ছা করেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় পরিবেশবিদদের ধারণা, এই আগুন প্রাকৃতিক কারণ নয়। অ্যামাজনের এই আগুনের পিছনে রয়েছে মানুষের ষড়যন্ত্র। চাষ ও বাসের জমি পাওয়ার জন্য স্থানীয় লোকজন জঙ্গলের গাছ কাটা ও আগুন ধরানো শুরু করেছে।
দাবানলের কবলে 'পৃথিবীর ফুসফুস' খ্যাত অ্যামাজন মহাবন। (ছবিসূত্র : ইউরো পোস্ট)
যদিও এর আগে এই অ্যামাজন ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট বলসোরানোকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি নাকি এই বন রক্ষার্থে ব্যাপক উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন।
যে কারণে এসবের প্রেক্ষিতে ফ্রান্স ও আয়ারল্যান্ড অ্যামাজনে সৃষ্ট দাবানল নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্নের হুমকি দেয়। মূলত এর পরপরই একটু নড়ে চড়ে বসেন ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট এবং দেশের সেনাবাহিনীকে এই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার নির্দেশ দেন।
স্যাটেলাইট ইমেজ থেকে দেখাচ্ছে, আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি যে ধোঁয়া প্রায় ১৭০০ কিমি দূরত্ব পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। অ্যামাজনের আগুনের ওপর নজর রাখছে নাসা। স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে আগুনের তীব্রতার ছবি পাঠাচ্ছে নাসার একাধিক স্যাটেলাইট।
বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ অ্যামেরিকার আমাজন নদের পাশে প্রায় ৫৫ লাখ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে উঠেছে সুবিশাল রেইন ফরেস্ট অ্যামাজন। যে কারণে এই অ্যামাজন থেকেই আমদানি হয় পৃথিবীর প্রায় ২০ শতাংশ অক্সিজেনের।
আরও পড়ুন : অ্যামাজন ছাড়া মানবসভ্যতা টিকবে না কেন?
বিভিন্ন নাম জানা না জানা উপজাতির বসবাস রয়েছে এই অ্যামাজনে; যেখানে রয়েছে প্রায় ১৬ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ। যদিও 'পৃথিবীর ফুসফুস' খ্যাত এই বনাঞ্চলটি আজ ভীষণ বিপন্ন। আগুনের লেলিহান শিখা ক্রমশ গ্রাস করছে ওই চিরহরিৎ বনভূমিকে। তাই এই বন রক্ষার্থে তাৎক্ষনিক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান বিশ্লেষকদের।
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড