• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

লুইজিয়ানা, আলাস্কার পর এবার গ্রীনল্যান্ড কিনতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র

  এস এম সোহাগ

১৬ আগস্ট ২০১৯, ২০:০৫
গ্রীনল্যান্ড
ছবি : সংগৃহীত

ড্যানিশ অধীনে থাকা বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপ গ্রীনল্যান্ডকে কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করে কথাবার্তা বলেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন গণমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে এই খবর জানিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরে দ্বীপটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায় যে, 'গ্রীনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়'।

'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গ্রীনল্যান্ডকে কিনতে পারে কি না তা সভা, ডিনার এবং কথোপকথনের সময় পরামর্শকদের কাছে ট্রাম্প জানতে চান' বলে ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে জানানো হয়। যদিও একটি সূত্র জার্নালকে জানায়, রাষ্ট্রপতি সম্ভবত এক ধরনের রসিকতা করছেন- যেহেতু মি ট্রাম্প এখনো কোনো প্রচার সমাবেশে এই ধারণা প্রকাশ করেননি, সম্ভবত তিনি গুরুত্ব সহকারে এটি বিবেচনা করছেন না' বলে পত্রিকাটি জানিয়েছে। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের আইনজীবীদের বিষয়টি তদন্ত করতে বলেছেন।

কিন্ত গ্রীনল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিক্রির ধারণাটি প্রত্যাখ্যান করে জানায়, 'আমরা ব্যবসায়ের জন্য উন্মুক্ত, বিক্রয়ের জন্য নয়'। ডাচ রাজনীবিদরাও দ্রুত ট্রাম্পের এই বাসনার পরিকল্পনার প্রতিবেদনকে উড়িয়ে দিয়েছেন। দেশটির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লার্স লোককে রাসমুসেন টুইট করে বলেন, 'এটি অবশ্য একটি এপ্রিল ফুল দিবস রসিকতা হতে পারে ... তবে, (মৌসুমের) পুরোপুরি বাইরে!'

ছবি : সংগৃহীত

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল প্রথম এই সংবাদটি জানায়, মিস্টার ট্রাম্প 'উচ্চ মাত্রার গুরুত্ব' নিয়ে এই ক্রয়ের কথা বলেছিলেন। অন্যান্য গণমাধ্যমে উদ্ধৃত সূত্রগুলোও ট্রাম্পের এই আচরণকে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড সম্প্রসারণের বিষয়ে তামাশা বা গুরুতরভাবে প্রত্যাশা করছেন কি না তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। হোয়াইট হাউস এই প্রতিবেদনে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।

কোথায় গ্রীনল্যান্ড ?

গ্রীনল্যান্ড হলো বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ (অস্ট্রেলিয়ার পরে, যা তার নিজস্ব অংশে একটি মহাদেশ হিসেবে পরিচিত)। এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত ড্যানিশ অঞ্চলটি উত্তর আটলান্টিক এবং আর্কটিক মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত। এটির উপকূলরেখা ঘিরে প্রায় ৫৬ হাজার লোকের বাস যার প্রায় ৯০ শতাংশ আদিবাসী গ্রীনল্যান্ডীয় ইনুইট লোক। এটির একটি ছোট স্ব-সরকার এবং নিজস্ব সংসদ রয়েছে।

দ্বীপটির ৮০ শতাংশেরও বেশি অংশ বরফের টুপিতে আচ্ছাদিত। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে বরফের আচ্ছাদন দ্রুত গলে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে তবে, এর খনিজ সম্পদের অ্যাক্সেসও বেড়েছে। গ্রিনল্যান্ডের প্রধান কিম কিয়েলসন ট্রাম্পের প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি।

কয়লা, দস্তা, তামা এবং লোহা আকৃতির প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে গ্রিনল্যান্ডের কিছু অংশে ট্রাম্প আগ্রহী হয়েছেন বলে জানা গেছে। যদিও গ্রীনল্যান্ড খনিজ সমৃদ্ধ হলেও দেশটি এখনো তার বাজেটের আয়ের দুই তৃতীয়াংশের জন্য ডেনমার্কের ওপর নির্ভর করে। এখানে আত্মহত্যা, মদ্যপান ও বেকারত্বের উচ্চ হার রয়েছে।

ছবি : সংগৃহীত

দুজন ব্যক্তি এই আলোচনার বিষয়ে সংক্ষিপ্ত করে নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্টও গ্রীনল্যান্ডের 'জাতীয় সুরক্ষা মান' সম্পর্কে আগ্রহী ছিলেন কারণ এর অবস্থানটাই তেমন। আমেরিকা দীর্ঘকাল এই দ্বীপটিকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখেছে এবং স্নায়ু যুদ্ধের শুরুতে সেখানে একটি রাডার বেসও স্থাপন করেছিল।

রিপাবলিকান প্রতিনিধি মাইক গ্যালাগার প্রতিবেদনকৃত মি. ট্রাম্পের ধারণাকে 'স্মার্ট ভূ-রাজনৈতিক পদক্ষেপ' হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি টুইট করে বলেছেন, 'গ্রীনল্যান্ডের প্রতি জোরাল কৌশলগত আগ্রহ রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবং এটি অবশ্যই আলোচনার টেবিলে থাকা উচিত।'

গ্রীনল্যান্ড কি বিক্রিযোগ্য?

দ্বীপটি বাজারে নেই বলে প্রথমেই জানায় গ্রীনল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, 'গ্রীনল্যান্ড খনিজ, বিশুদ্ধ জল এবং বরফ, মাছের মজুদ, সিফুড, নবায়নযোগ্য জ্বালানির মতো মূল্যবান সম্পদে সমৃদ্ধ এবং অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের জন্য এক নতুন সীমান্ত। আমরা ব্যবসায়ের জন্য উন্মুক্ত, বিক্রয়ের জন্য নয়।'

গ্রীনল্যান্ডের সাংসদ আজা চেমনিটস লারসনও মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই আগ্রহের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি টুইটারে লিখেছেন 'গ্রীনল্যান্ডকে কিনতে ট্রাম্পকে কোনো ধন্যবাদ নয়! ডেনমার্কের সাথে আরও ভালো এবং আরও সমান অংশীদারিত্ব নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে গ্রীনল্যান্ড'।

ছবি : সংগৃহীত

ডেনমার্কের রাজনীতিবিদরা সম্ভাব্য মার্কিন অধিগ্রহণের ধারণাটিকে উপহাস করেছেন। জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যমে ডিআরকে-এর কাছে জনসম্প্রদায়িক ডেনিশ পিপলস পার্টির পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র, সোরেন এস্পারসেন বলে, 'তিনি যদি সত্যই এটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে থাকেন, তবে তিনি যে পাগল হয়ে গেছেন এটিই তার চূড়ান্ত প্রমাণ।'

ড্যানিশ কনজারভেটিভ এমপি রাসমুস জারলভ টুইটারে লিখেছেন,'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ডেনমার্কের ৫০,০০০ নাগরিক বিক্রি করার চিন্তাভাবনাটি সম্পূর্ণ হাস্যকর। যেটি ঘটছে না, তার কোনো সম্ভাবনা নাই। এটি ভুলে যান'। ঠিক কীভাবে বা কার কাছ থেকে ট্রাম্প গ্রীনল্যান্ড কিনবেন তা অস্পষ্ট বলে জানায় ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

চলতি বছরের শুরুর দিকে দায়িত্ব গ্রহণ করা ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন এই প্রতিবেদনে কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি এই মাসেই গ্রীনল্যান্ড সফর করতে চলেছেন এবং সেই সফরের 'অনেক প্রত্যাশায়' রয়েছেন তিনি।

সেপ্টেম্বরে ট্রাম্পের ডেনমার্ক সফরে যাওয়ার কথা থাকলেও সেই কার্যসূচিতে গ্রীনল্যান্ডের সম্ভাব্য অধিগ্রহণের বিষয়টি রয়েছে কি না এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

দেশ কি অঞ্চল কিনতে পারে?

ঐতিহাসিকভাবে, দেশগুলো কেবল সামরিক বিজয়ের মাধ্যমেই নয়, আর্থিক চুক্তির মাধ্যমেও বিভিন্ন অঞ্চল অধিগ্রহণ করতে পারে। ১৮০৩ সালে লুইসিয়ানা ক্রয়ের অধীনে আমেরিকা ফ্রান্সের কাছ থেকে ১৫ মিলিয়ন ডলারে প্রায় ৮ লাখ ২৭ হাজার বর্গ মাইল (২১ লাখ বর্গ কিলোমিটার) জমি অধিগ্রহণ করেছিল।

বামে লুইজিয়ানা ও ডানে আলাস্কা। ছবি : সংগৃহীত

১৮৬৭ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৭ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে রাশিয়ার কাছ থেকে আলাস্কাকে কিনেছিল। ১৯১৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডেনিশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিনে তাকে মার্কিন ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ নামকরণ করেছিল।

তবে, আইনজীবী অধ্যাপক জোসেফ ব্লোচার ২০১২ সালে লিখেছিলেন যে, 'সার্বভৌম অঞ্চলগুলোর বাজার শুকিয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য, সরকারি জমিতে মালিকানা স্বার্থের জন্য এখনো একটি সক্রিয় বাজার রয়েছে ... তবে সীমানা - সার্বভৌম অঞ্চল, সম্পত্তির পরিবর্তে - বিক্রিযোগ্য বলে মনে হয় না। আমেরিকান ইতিহাসের বেশিরভাগ অংশে সার্বভৌম অঞ্চল কেনা বেচা করা হয়েছিল ... তবে বর্তমানে তেমন কোনো বাজার বিদ্যমান নেই।'

আমেরিকা কি এর আগে গ্রীনল্যান্ড কেনার চেষ্টা করেছিল?

গ্রীনল্যান্ড কিনতে আগ্রহী ট্রাম্পই একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট নয়। ১৯৪৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান অঞ্চলটির জন্য ডেনমার্ককে ১০০ মিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব দিয়েছিল। এর আগে তিনি গ্রীনল্যান্ডের কৌশলগত অংশগুলোর জন্য আলাস্কার জমি বদল করার ধারণাও দিয়েছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড