• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

হংকংয়ে বিক্ষোভ : ধস নেমেছে অর্থনীতিতে

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৪ আগস্ট ২০১৯, ১২:০০
ক্রেতা শুন্য হোটেল
হংকংয়ের ক্রেতা শূন্য হোটেল চত্বর। (ছবিসূত্র : ডয়চে ভেলে)

গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে ইউরেশিয়ার দক্ষিণপূর্ব উপকূলীয় দেশ হংকং। ওয়াল্ট ডিজনি থেকে শুরু হয়ে ম্যারিয়ট পর্যন্ত চলা এই আন্দোলনের উত্তাপ এবার লেগেছে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গায়ে। যার অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বাতিল করা হয়েছে বিমানবন্দরগুলোর বিদেশগামী সকল ফ্লাইট।

জার্মান বার্তা সংস্থা 'ডয়চে ভেলে' জানিয়েছে, মঙ্গলবার হংকংয়ের গণতন্ত্রকামীদের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে এরই মধ্যে সব ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। দেশটির চীনপন্থি প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম বলেছেন, 'আন্দোলনকারীদের কারণে দেশে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, যেখান থেকে খুব সহজেই ফিরে আসা অনেকটা কঠিন হয়ে যাবে।'

বিক্ষোভকারীরা দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব শহরে আতঙ্ক আর সহিংসতা ছড়িয়ে দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন চীনপন্থি এই শাসক। এবার শুধু আসামি প্রত্যর্পণ বিল বাতিলই নয়, ক্যারি ল্যাম সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ফুঁসতে শুরু করেছে গোটা হংকং।

বিশ্লেষকদের মতে, হংকংয়ের ওয়াল্ট ডিজনির ডিজনিল্যান্ডে নেই কোনো মানুষের আনাগোনা। চলমান বিক্ষোভের ফলে এই বিনোদন কেন্দ্রটির ওপর থেকে আগ্রহ হারিয়েছেন অনেক লোক। মার্কিন নিয়ন্ত্রণাধীন এই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী বব ইগার এরই মধ্যে এমন দুরবস্থার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন।

এ দিকে হংকংয়ের ফ্ল্যাগশিপ এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠান 'ক্যাথে প্যাসিফিকে'র একজন মুখপাত্র বলেছেন, 'চলমান বিক্ষোভের ফলে গত জুলাই থেকে আমাদের টিকিটের চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে। কেননা এরই মধ্যে অতি স্বল্পসংখ্যক লোকের উপস্থিতি দেখা গেছে গোটা শহরে।'

হংকংয়ে বিক্ষোভ

হংকংয়ে বিক্ষোভরত এক গণতন্ত্রকামীকে পুলিশি আগ্রাশন থেকে রক্ষা করছেন সাংবাদিক। (ছবিসূত্র : রয়টার্স)

'ক্যাথে প্যাসিফিকে'র এ কর্মকর্তা আরও বলেন, 'আমাদের কাছে আগাম বুকিং হিসেবে সেসব টিকেট কাটা ছিল, ইতোমধ্যে সেগুলোও বাতিল করেছেন যাত্রীরা। ব্যবসার ক্ষেত্রে না হয় কিছুটা খারাপ সময়ই এলো, কিন্তু এখন সামনে এসেছে আরও একটি সংকট। এয়ারলাইন্স কর্মরতদের মধ্যে যারা এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন; এবার তাদের নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেইজিং। যা অত্যন্তই দুর্ভাগ্যজনক।'

দেশটির ইন্টারকন্টিনেন্টালের ক্রাউন প্লাজা আর হলিডে ইন চলতি মাসের শুরু থেকেই বলে আসছে, এখন আর তাদের কাছে গ্রাহকদের চাহিদা বলে কিছুই নেই। এবার আন্দোলনের পর থেকে পর্যটকরা যেমন আসছেন না, তেমনি এই অস্থিরতার মধ্যে নেই কোনো কর্পোরেটদেরও আনাগোনা। তাছাড়া সংকটের বাইরে নেই জনপ্রিয় ম্যারিয়ট হোটেলের নামও।

চলমান অস্থিরতায় মন্দা লেগেছে 'কারটিয়ের' কিংবা 'প্রাদার' মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোর গায়েও। এতদিন চীনের ধনাঢ্য ক্রেতাদের কাছে ব্র্যান্ডগুলো ছিল বেশ জনপ্রিয়। 'কারটিয়ের' মালিক রিচেমন্ট বলেন, 'দোকান বন্ধ রাখা আর পর্যটকদের ঘাটতি, বিশেষ করে চীনা পর্যটক না আসায় আমাদের বেচা-বিক্রি একদমই নেই বললেই চলে।'

অপর দিকে এখন পর্যন্ত খুচরা ব্যবসাই ছিল শহরের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। গত জুন মাসের শেষ দিকে দেখা গেছে, শহরের বিক্রি কমে গেছে প্রায় ৯৩ শতাংশের বেশি। তাছাড়া গণতন্ত্রকামীদের এই আন্দোলনের প্রভাবে পড়েছে জুলাই মাসেও। বিক্রেতাদের মতে, 'সেই মাসেও হয়নি তেমন কোনো বেচা-বিক্রি।' যার প্রেক্ষিতে চলতি আগস্টে অনেক আশা করেও হয়নি পরিস্থিতির কোনো উত্তরণ। এবার সকলের কাছে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়াটাই এক বড় চ্যালেঞ্জ।

সংশ্লিষ্টদের মতে, হংকংয়ের অর্থনীতি এখন একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত রবিবার (১১ আগস্ট) এ কথা জানিয়েছেন দেশটির অর্থ সচিব পল চান। তার মতে, 'দীর্ঘদিন যাবত এই বিক্ষোভ অব্যাহত থাকায় দেশ এক বাণিজ্য সংকটের মুখে পড়েছে; তাছাড়া আমাদের অর্থনীতির গতিটাও এক রকম শ্লথ হয়ে গেছে।'

অর্থ সচিব পল চান আরও বলেন, 'এতদিন ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের কাছে এটি নিরাপদ অঞ্চলের যে খ্যাতিটা অর্জন করেছিল, এবারের আন্দোলন সেই সুনামকেও আঘাত করেছে। কেননা এই অর্থনৈতিক মন্দার বিষয়ে অনেক আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম।'

হংকংয়ে বিক্ষোভ

হংকংয়ের বিমানবন্দর চত্বরে বিক্ষোভরত গণতন্ত্রকামীরা। (ছবিসূত্র : সিএনএন)

প্রায় ১৫০ বছর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকদের অধীনে থাকার পর ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই লিজ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় অঞ্চলটি শক্তিশালী চীনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। ঐতিহাসিক এই দিবসটির ২২ বছর পূর্তিতে গত ১ জুলাই আন্দোলনে সড়ক অবরোধ করেন গণতন্ত্রকামী লোকজন। প্রতি বছরের এই দিনে কর্মকর্তারা এক দিকে সরকারি ভবনগুলোতে উৎসব পালন করেন আর অপর দিকে গণতন্ত্রকামীরা অবস্থান নেন রাজপথে।

দীর্ঘদিন যাবত হংকং চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হলেও ২০৪৭ সাল থেকে অঞ্চলটিকে স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা দেয় দেশটি। এর আগে গত মাসেও চীনপন্থি এক বিল নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছিল ইউরেশিয়ার দক্ষিণপূর্ব উপকূলের এই দেশ।

মূলত চীন এবং তাইওয়ানে আসামি প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত প্রস্তাবিত একটি বিলের বিপক্ষে তখন গোটা দেশে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এতে আন্দোলনকারীদের মূল ক্ষোভ দাঁড়ায় চীনের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে।

আরও পড়ুন :- চীনে মুসলিম নারীদের জোর করে বন্ধ্যা বানানো হচ্ছে

বেইজিংয়ের দুর্বল আইন ব্যবস্থা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ডের কারণে হংকংয়ের সাধারণ মানুষ সেখানে কাউকে ফেরত পাঠাতে চাইছেন না। তাদের মতে, পার্লামেন্টে বিলটি পাস হলে তা অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে চীনা হস্তক্ষেপের সুযোগ অনেকাংশে বাড়িয়ে দেবে।

ওডি/কেএইচআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড