• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান

  অধিকার ডেস্ক    ২৬ জুলাই ২০১৯, ১৩:০৮

উত্তাল পাকিস্তান
জাল ভোটে ইমরান ক্ষমতায় এসেছে বলে দিনটিকে কালো দিবস হিসেবে উদযাপন করে সরকারের পতন দাবি করে বিরোধী দলগুলো। ছবি : সংগৃহীত

পাক-প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলীয় সরকারের বিরুদ্ধে তথাকথিত 'কালো দিবস' বিক্ষোভে দেশটির প্রধান প্রধান শহরে সমাবেশ করেছে বিরোধী দলগুলো। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনের এক বছর পর ইমরানের বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতির অভিযোগে বিরোধী দলগুলোর হাজার হাজার সমর্থক বৃহস্পতিবার করাচি, পেশোয়ার, লাহোর, কোয়েটা এবং রাজধানী ইসলামাবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।

বিরোধী দলগুলোর মধ্যে প্রধানত পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং জামিয়াত উলেমা-ই-ইসলাম-ফজল (জেইআই-এফ) দুই রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রাথমিকভাবে বক্তব্য রাখেন। সেখানে তারা ইমরানের খানের পদত্যাগ দাবি করেন।

দক্ষিণ-পশ্চিম শহর কোয়েট্টার একটি ফুটবল স্টেডিয়ামে হাজার হাজার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার আহ্বান জানিয়ে পিএমএল-এন নেতা মরিয়ম নওয়াজ বলেন, 'ইমরানের খানের উপস্থিতিতে প্রতিটা দিনই কালো দিন'। ওয়াশিংটন সফরের সময় মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের 'হুকুম' গ্রহণের অভিযোগে খানকে অভিযুক্ত করেছেন এবং তারিখ উল্লেখ না করে ইসলামাবাদে একটি প্রতিবাদ মিছিল প্রস্তাব করেছেন।

দেশটির আরেক প্রধান বিরোধী দল ও খুন হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর পুত্র, পিপিপি-এর নেতা বিলওয়াল ভুট্টোর বক্তব্য শুনতে এদিন পাকিস্তানের বাণিজ্যিক রাজধানী করাচিতে হাজির হন পিপিপি-এর হাজার হাজার সমর্থক।

বিভিন্ন ব্যানারে পিটিআইয়ের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে 'মূল্য বৃদ্ধি', 'মূল্যস্ফীতি', 'বেকারত্ব বৃদ্ধি', 'অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদ আনার' উল্লেখ করে বিভিন্ন স্থানে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। লাহোর ও পেশোয়ারসহ অন্যান্য শহরে অনুরূপ প্রতিবাদ ছিল।

পেমেন্ট সঙ্কটের ভারসাম্য নিয়ে পাকিস্তান যখন হিমশিম খাচ্ছিল, সেই মুহূর্তে দেশটির সরকারের ক্ষমতায় গ্রহণ করে ইমরান খান। দেশটিতে আরও কর আরোপ এবং রুপির মুদ্রাস্ফীতিসহ ব্যয়হ্রাসের শর্তে এই মাসেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাথে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে ব্যালাউটে রাজি হয়েছে ইমরান খানের সরকার।

ছবি : সংগৃহীত

ইমরানের দল বিরোধী দলের প্রতিবাদকে প্রত্যাখান করেছে এবং পূর্ববর্তী সরকারগুলোকে ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থের অপব্যবহারের জন্য দোষারোপ করেছে। বিরোধী দলের নেতাদের দেশ থেকে অবৈধভাবে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার সরানোর দায়ে অর্থনৈতিক মন্দায় পড়েছে পাকিস্তান, এমন অভিযোগ আনেন ক্ষমতাসীন দল।

এ দিকে, মরিয়ম নওয়াজ উপস্থিত হাজার হাজার জনতার কাছে জানতে চান, 'যদি এই জাল সরকার, যারা ক্ষমতায় আসার জন্য ভোট চুরি করে, এটিকে তার চূড়ান্ত ধাক্কাটা দিতে, যদি ... তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ইসলামাবাদে যেতে হয়, বেলুচিস্তান কি তাহলে আমাদের সাথে যোগ দেবে?'।

পাকিস্তানের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের কন্যা মরিয়ম। ২০১৭ সালে পাকিস্তানি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারা পদ থেকে বরখাস্ত হন এবং এর এক বছর পর দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন। সংশ্লিষ্ট আরেকটি দুর্নীতির মামলায় মরিয়ম নিজেও দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন, কিন্তু তার আপিলের শুনানির জন্য তার শাস্তি স্থগিত করা হয়েছিল।

ইমরানের খানের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগে এনে গত বছর থেকেই নওয়াজ ও তার দল এক ধারাবাহিক জনবিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। বৃহস্পতিবারকে (২৫ জুলাই) জাল ভোটের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বর্ষপূর্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।

তবে, পাকিস্তানের একমাত্র ক্রিকেট বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দেশটিতে পিটিআইয়ের নেতৃত্বে দুর্নীতি দমন অভিযান পরিচালনা করেন, যাতে দেশটির বিরোধী দলের অনেক নেতাই আটক হন।

এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ, তার ভাই শেহাবাজ, আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শহীদ খাকান আব্বাসি এবং অন্যান্য নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। পাকিস্তানের অন্যান্য বিরোধী দলীয় নেতাও অভিযানে আটক হয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি বর্তমানে দুর্নীতির অভিযোগে জেলে রয়েছেন।

দেশটির বিরোধী দলগুলো ইমরানের খানকে দুর্নীতি দমন অভিযানের নামে রাজনৈতিক বিরোধীদের লক্ষ্যবস্তু বানানোয় অভিযুক্ত করেছে। যদিও পিটিআই বলছে, তারা পাকিস্তানের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে পরিষ্কার করছে।

সাজাপ্রাপ্ত পাকিস্তানের সাবেক প্রধানরা। ছবি : সংগৃহীত

'যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো চোরদের কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে আমরা শুধু সেসব প্রতিষ্ঠানের রূপান্তর চাই। চোরেরা কেবল পাকিস্তানে লুটপাট করতে চায়' বলে বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রে তিন দিনের সফর শেষ করে দেশে ফিরেই সমর্থকদেরকে উদ্দেশ্যে এই কথা বলেন।

মিডিয়া ব্ল্যাকআউট

পাকিস্তানের স্থানীয় সংবাদ টেলিভিশন চ্যানেলে বেশ কিছু বিরোধীদলের প্রতিবাদ সরাসরি সম্প্রসারিত হলেও পিএমএল-এন নেতা মরিয়মের বিক্ষোভের বিষয়টি কোথাও দেখানো হয়নি। চলতি মাসের শুরুতে ফেডারেল মন্ত্রীসভার আদেশে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তাধীন বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদেরকে কভার করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

পাকিস্তানে 'বর্বর সেন্সরশিপ' গ্রহণের বিষয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা সেন্সর করা বা বিরোধী দলের ঘটনাগুলো কভারেজের বিষয়ে।

দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লাহোরে পিএমএল-এনের নেতা শেহবাজ শরীফ দলটির সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিয়েছেন। অন্য দিকে দলটির হাজার হাজার সমর্থক উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পেশোয়ারে আরেকটি প্রতিবাদ সমাবেশের জন্য জড়ো হয়েছে।

ছবি : সংগৃহীত

দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন, পিএমএল-এন এবং একটি ধর্মীয় ডানপন্থি দল জেইআই-এ-এর কয়েকশত সমর্থক প্রতিবাদ জানাতে শহরের প্রেস ক্লাবের বাইরে জড়ো হয়েছিল।

'নির্বাচন সঠিক ছিল না এবং ইমরান খান আমাদের ওপর আরোপিত হয়েছে। আমরা এটা গ্রহণ করি না' বলে পিএমএল-এনের এক কর্মী ফারজানা কাওসার (৪০) তার ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ‘আল-জাজিরা’

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড