আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সেই ১৯৫০ সাল থেকেই একটা প্রশ্ন বারবার দেখা দিয়েছে, আর তা হলো তাইওয়ান কি কোনো স্বাধীন রাষ্ট্র নাকি চীনের অংশ। এই বিতর্কের ফল যাই হোক, সম্প্রতি তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে ঘিরে চীন-মার্কিন উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাইওয়ানের স্বাধীনতার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পদক্ষেপ নিলে চীন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত বলে বুধবার (২৪ জুলাই) ঘোষণা করে।
বুধবার প্রকাশিত একটি জাতীয় প্রতিরক্ষা পরিকল্পনায় চীন বিশ্বব্যাপী কৌশলগত স্থিতিশীলতা নষ্ট করা এবং স্ব-শাসিত রাষ্ট্র তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রির জন্য ওয়াশিংটনকে অভিযুক্ত করেছে। তাইওয়ানের স্বাধীনতা নিয়ে ওয়াশিংটনের হস্তক্ষেপ চীন বরদাস্ত করবে না বলে জানায়। তারা আধুনিক, উচ্চ-প্রযুক্তির সেনা নির্মাণের পরিকল্পনা তুলে ধরার সময় যুক্তরাষ্ট্রকে এভাবে সতর্ক করে।
চলতি মাসেই পেন্টাগন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাইওয়ান কর্তৃক অনুরোধকৃত অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে বলে জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের কাছে আনুমানিক প্রায় ২ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ট্যাংক এবং স্টিংগার মিসাইল বিক্রির কথা জানায়।
চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রির এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় চীন যেকোনো চুক্তিতে জড়িত মার্কিন সংস্থাগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করবে বলে জানায়।
একটি প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার হোয়াইট পেপারের ওপরে করা এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র উয় কিয়ান বলেন, 'গত কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রথম বারের মতো সামরিক বাহিনীর কৌশলগত উদ্বেগগুলোর রুপরেখা প্রণয়ন করেছে চীন। তাইওয়ানের সাথে শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর অংশই হচ্ছে এই রূপরেখা। তবে, তাইওয়ানের স্বাধীনতার বাসনা যে এক কাণাগলি তাতে আমাদের অবশ্যই দৃঢ়ভাবে ইঙ্গিত করা উচিত।'
তিনি বলেন, 'যদি এমন কিছু মানুষ থাকে যারা দেশ থেকে তাইওয়ানকে বিভক্ত করার সাহস দেখায়, তাহলে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, ঐক্য ও আঞ্চলিক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য চীনের সামরিক শক্তি যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত।'
চীনের স্বেচ্ছাচারী প্রদেশ হিসেবে বর্ণিত তাইওয়ানের প্রধান অস্ত্র সরবারহকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দ্বীপটি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেইজিং কখনোই ক্ষমতা প্রয়োগ বন্ধ করেনি। গণতান্ত্রিক তাইওয়ানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই, কিন্তু তাইওয়ানের নিজেকে রক্ষা করার সরঞ্জাম সরবরাহ করতে সহায়তা করাতে আইনত আবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র।
ছবি : সংগৃহীত
চীনা মন্ত্রণালয় বলেছে, 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র 'প্রধান দেশগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতাকে উত্তেজিত করে তুলেছে, যা উল্লেখযোগ্যভাবে চীনের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী কৌশলগত স্থিতিশীলতাকে হ্রাস করেছে।'
'মারাত্মক আইন'
তাইওয়ানে চীনা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো ও যুদ্ধের মতো এমন মারাত্মক হুমকি প্রদানের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তাইওয়ান। দেশটির মেইনল্যান্ড অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছে যে, বেইজিংয়ের 'উত্তেজক আচরণ ... আন্তর্জাতিক আইন ও সম্পর্কে শান্তির নীতি লঙ্ঘন করেছে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও আদেশকে চ্যালেঞ্জ করছে।'
'আমরা বেইজিং কর্তৃপক্ষকে অযৌক্তিক, ক্ষতিকর পদক্ষেপগুলো ত্যাগ করতে এবং ক্রস-স্ট্রেট সম্পর্কগুলো উন্নত করতে বলিষ্ঠভাবে আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে যুক্তিযুক্তভাবে হংকংসহ অন্য সমস্যাগুলো পরিচালনা করতে বলছি, যাতে এটি একটি আঞ্চলিক দায়িত্বশীল সদস্য হতে পারে।'
বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিল নিয়ে হংকংয়ের চলমান সহিংস বিক্ষোভ যদি বেইজিং এ ছড়িয়ে পড়তো তাহলে তা দমনে চীনা সামরিক বাহিনী কীভাবে ব্যবস্থা নিত, এমন এক প্রশ্নে উয় শুধুমাত্র অঞ্চলটির 'গ্যারিসন আইনের' কথা উল্লেখ করেছিলেন। যাতে 'ইতোমধ্যেই একটি পরিষ্কার শর্ত রয়েছে'।
সেই আইনটি বলছে যে, হংকং সরকার জনগণের মধ্যে আদেশের প্রবণতা বা শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) গ্যারিসনের সহায়তার জন্য অনুরোধ করতে পারবে।
কিন্তু আইনি পণ্ডিতরা একে একটি খুবই উচ্চমানের থ্রেশহোল্ড বলছে এবং কিছু অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলছেন যে, হংকংয়ের নিরাপত্তার মধ্যে পিএলএ ইউনিটগুলির যে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা 'এক দেশ, দুই সিস্টেমের' নীতিকে হ্রাস করবে। যে নীতির আওতায় ১৯৯৭ সালে সাবেক এই ব্রিটিশ উপনিবেশকে চীনের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল।
চীনের সশস্ত্র বাহিনীকে থাইল্যান্ডের উপসাগরীয় অঞ্চলে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় জাতির রেম ন্যাভাল বেসের অংশে একচেটিয়া অ্যাক্সেস দেওয়ার বিষয়ে কম্বোডিয়ার সঙ্গে একটি গোপন চুক্তি সম্পর্কেও উ বলেন, 'ঘটনার সঙ্গে এর মিল নেই'।
চীনের সশস্ত্র বাহিনীকে থাইল্যান্ডের উপসাগরীয় অঞ্চলে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় জাতির রিয়াম নৌঘাঁটির অংশে একচেটিয়া প্রবেশের সুযোগ দেয়ার বিষয়ে কম্বোডিয়ার সঙ্গে একটি গোপন চুক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে উয় বলেন, 'ঘটনার সঙ্গে এর মিল নাই'।
তিনি বলেন, 'চীন ও কম্বোডিয়া অতীতে ইতিবাচক বিনিময় এবং সামরিক মহড়া, কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও সরবরাহ সম্পর্কিত সহযোগিতা চালিয়ে এসেছে। এই ধরনের সহযোগিতা কোনো তৃতীয় পক্ষকে লক্ষ্য করে করা না।'
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড