আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পারস্য উপসাগরের হরমুজ প্রণালিতে মার্কিন মেরিন সেনারা ভুল করে নিজেদের ড্রোনই ভূপাতিত করে থাকতে পারে বলে দাবি ইরানের। শুক্রবার (১৯ জুলাই) এক টুইট বার্তায় দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি এ তথ্য জানান।
আব্বাস আরাঘচি বলেন, 'আমদের হরমুজ প্রণালি কিংবা অন্য কোথাও কোনো ড্রোন হারাইনি। মনে হয়, 'ইউএসএস বক্সার' ভুল করেই নিজেদের ড্রোনকে ভূপাতিত করেছে।'
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) ইরানের একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট তার বক্তব্যে জানান, গতকাল ইরানের একটি ড্রোন মার্কিন যুদ্ধজাহাজের অনেক কাছে চলে আসায় রক্ষণাত্মক কারণেই সেটিকে ভূপাতিত করা হয়। ড্রোনটি জাহাজের কাছ থেকে মাত্র এক হাজার মিটার দূরে ছিল বলে দাবি ট্রাম্পের।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে দেওয়া এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, 'আমি আজ আপনাদের প্রত্যেককে হরমুজ প্রণালিতে অবস্থানরত মার্কিন উভচর জাহাজ 'ইউএসএস বক্সার' সংক্রান্ত একটি ঘটনা জানাব। ইরানের একটি ড্রোন একাধিক সতর্ক বার্তা দেওয়া সত্ত্বেও বক্সারের খুব কাছে চলে আসে। প্রায় এক হাজার মিটার দূরত্বে চলে আসায় জাহাজ ও ক্রুদের নিরাপত্তার স্বার্থে সঙ্গে সঙ্গেই সঙ্গে এটিকে গুলি করে ধ্বংস করা হয়।'
ট্রাম্প আরও বলেন, 'এই হলো আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমায় জলযান চলাচলে তেহরানের একের পর এক বৈরী আচরণের সাম্প্রতিকতম নমুনা। নিজেদের যেকোনো স্বার্থে ও জানমাল রক্ষার অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের আছে। তাই আমরা এসব ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় দিব না।'
মার্কিন বিমানবাহী রণতরী 'ইউএসএস বক্সার'। (ছবিসূত্র : ডিফেন্স পোস্ট)
তবে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এ দাবি অস্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ ইরান। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে পৌঁছে তেহরানের অন্যতম শীর্ষ কূটনীতিক মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ এই ড্রোন ভূপাতিতের ইস্যুতে নিজের বক্তব্য দেন।
যেখানে তিনি বলেন, 'আমাদের কাছে এখনো ড্রোন হারানোর কোনো খবর আসেনি।' যদিও গত মাসে এই একই অঞ্চল থেকে ইরানি সেনা সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্পাই ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছিল।
সম্প্রতি ইরানের জাতীয় সংসদের স্পিকার আলী লারিজানি বলেছিলেন, 'আমাদের সীমান্তের বিরুদ্ধে যেকোনো আগ্রাসন এড়ানোর জন্য তাদের ড্রোনটি বিধ্বস্ত করা তাদের জন্যে ভালো অভিজ্ঞতা ছিল। যদি তারা আমাদের সীমানা লঙ্ঘনের ভুলটির পুনরাবৃত্তি করে তবে, ইরানের প্রতিক্রিয়া আরও শক্তিশালী হবে।'
যার অংশ হিসেবে তেহরান দাবি জানিয়েছিল, মার্কিন ড্রোনটি অবৈধভাবে ইরানের আকাশ সীমায় প্রবেশ করেছিল; যে কারণে নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে অতি ক্ষমতা সম্পন্ন এই ড্রোনটিকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়। যদিও তখন এসব অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছিল ওয়াশিংটন।
অপর দিকে এর পরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশোধ স্বরূপ ইরানে বিমান হামলা চালানোর অনুমোদন দেন। যদিও অনেক লোক হতাহতের আশঙ্কা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়টি বিবেচনা করে শেষ মুহূর্তে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তিনি।
এর আগে ২০১৫ সালে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কমানোর জন্য তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নেতৃত্বে বিশ্বের ক্ষমতাধর ছয় দেশের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছিল। যেখানে শর্ত ছিল ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি কমিয়ে আনবে, যার বিনিময়ে তাদের উপর আরোপিত সকল অবরোধ ক্রমশ তুলে নেওয়া হবে। এতে চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলো হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন ও জার্মানি।
পরবর্তীতে গত বছরের ৮ মে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়ে একে একটি অকার্যকর চুক্তি বলে মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে তিনি তেহরানের তেল বিক্রিতে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেন; যা এখনো অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুন :- এবার ইরানি ড্রোন ভূপাতিতের দাবি যুক্তরাষ্ট্রের
গত মাসে নিজেদের আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোয়েন্দা ড্রোন ভূপাতিত করে ইরান। এরপর থেকে দু’দেশের মধ্য চলমান দ্বন্দ্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে।
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড