আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কুলভূষণ যাদব যে আদতে 'অপরাধী' আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতের (আইসিজে) রায়ের পরেও সেই অবস্থান থেকে সরে আসতে রাজি নয় পাকিস্তান। বরং আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত কুলভূষণকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করেনি বা ভারতের হাতে তুলে দিতে বলেনি বলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। টুইটে লিখেছেন, 'আন্তর্জাতিক আদালত বেকসুর খালাস ঘোষণা করেনি, ছেড়ে দিতে বা ভারতের হাতে তুলে দিতেও বলেনি কুলভূষণ যাদবকে। এই রায়ের প্রশংসা করছি।'
ভারতীয় নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসার কুলভূষণকে 'পাক নাগরিকদের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য অপরাধী' বলে চিহ্নিত করেছেন ইমরান খান। এও বলেছেন, আইন মেনেই চলবে ইসলামাবাদ। ২০১৬ সালে ইরান সীমান্তের বেলুচিস্তানে গুপ্তচরবৃত্তি ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগে পাক নিরাপত্তা বাহিনী গ্রেফতার করে কুলভূষণকে। তারপর ২০১৭ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের সামরিক আদালত কুলভূষণকে মৃত্যদণ্ড দেয়।
বুধবার পাক সামরিক আদালতের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পুনর্বিবেচনা করতে পাকিস্তানকে নির্দেশ দেয় নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত। সেই রায় পুনর্বিবেচনার আগে পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড স্থগিত থাকবে। পাশাপাশি ভারতীয় কূটনীতিকদের যাদবের সঙ্গে দেখা করতে দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছে আইসিজে-এর।
আইসিজে-এর ১৬ সদস্যের বেঞ্চের ১৫ জন সদস্য এই রায়ের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন আন্তর্জাতিক আদালতের ভাইস প্রেসিডেন্ট চীনা বিচারপতিও। বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন কেবল পাকিস্তানি বিচারপতি তাসাদুক হুসেন জিলানি।
২০১৬ সালের মার্চে ভারতীয় নৌসেনার প্রাক্তন অফিসার কুলভূষণকে গ্রেফতার করে পাক বাহিনী। পাকিস্তান দাবি করে, বেলুচিস্তানে জঙ্গি কার্যকলাপে মদদ দেয়ার সময়ে কুলভূষণ গ্রেফতার হয়েছেন। পাক সামরিক আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ভারত পাল্টা দাবি করে, ইরানে কুলভূষণের ব্যবসা আছে। তাকে সেখান থেকে অপহরণ করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
২০১৭ সালের ৮ মে ভারত কুলভূষণ কাণ্ড নিয়ে দা হেগের আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতের দ্বারস্থ হয়। কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ডে স্থগিতাদেশ দেয় আন্তর্জাতিক আদালত। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পুলওয়ামা হামলা-পরবর্তী উত্তপ্ত পরিবেশে আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতে প্রশ্ন করেন ভারত ও পাকিস্তানের কৌঁসুলিরা
ভারতের কৌঁসুলি হরিশ সালভে জানান, ভিয়েনা সনদ লঙ্ঘন করে ভারতীয় কূটনীতিকদের কুলভূষণের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি পাকিস্তান। পাশাপাশি পাক সামরিক আদালতের কাজের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। মৃত্যুদণ্ড খারিজ করে কুলভূষণকে দেশে ফেরত পাঠানোর আর্জি জানান সালভে। পাক কৌঁসুলি খাওয়র কুরেশি পাল্টা প্রশ্নে জানান, এ নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার এখতিয়ারই নেই ভারতের। যাদব চরবৃত্তিতে যুক্ত ছিলেন বলেই ভারতীয় কূটনীতিকদের তার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
বুধবার (১৭ জুলাই) আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতের প্রেসিডেন্ট সোমালিয়ার বিচারপতি আব্দুলওয়াকি আহমেদ ইউসুফের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে জানায়, ভারতের আর্জি গ্রহণযোগ্য। পাকিস্তান ভিয়েনা সনদ লঙ্ঘন করেছে। ভারতীয় কূটনীতিকদের কুলভূষণের সঙ্গে দেখা করতে দিতে হবে। তার আইনি প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থাও করতে হবে। পুনর্বিবেচনা করতে হবে তার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ।
তবে, কুলভূষণকে মুক্তি দেয়া বা তাকে ভারতে ফেরত পাঠানো নিয়ে ভারতের আর্জি মানতে রাজি হয়নি দা হেগের আদালত। রায়ের অংশ উদ্ধৃত করে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার বক্তব্য, 'রায়কে স্বাগত জানাই। কিন্তু কুলভূষণের ফেরা নিশ্চিত হয়নি। পাকিস্তানের বেছে নেওয়া মঞ্চে ফের তার বিচার হবে। তিনি ফের অবিচারের শিকার হতে পারেন। রায়ের এই অংশের পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাতে সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি।'
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড