আন্তর্জাতিক ডেস্ক
তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উভয় পক্ষের স্থগিতাবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের করা মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তাকে সতর্ক করে দিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র 'আগুন নিয়ে খেলছে' বলে সোমবার (১৫ জুলাই) জারিফ এনবিসিকে জানান।
তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে করা একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে সরে যায় যুক্তরাষ্ট্র। কার্যতই চুক্তিটি তখন এক ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছে এবং ইরান-মার্কিন উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
সম্প্রতি তেলবাহী জাহাজে হামলা এবং হরমুজে মার্কিন গোয়েন্দা ড্রোনকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত করার মাধ্যমে দুদেশের মধ্যে যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ড্রোন হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের ওপর হামলার নির্দেশ দিয়েও শেষমুহূর্তে তা বাতিল করে দেয় ট্রাম্প।
জারিফ এনবিসি নিউজকে বলেন, 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে বলেই আমার মনে হচ্ছে'। চুক্তি অনুযায়ী ইউরোনিয়াম সমৃদ্ধির ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় গত সপ্তাহে সমৃদ্ধির পরিমাণ বাড়ানোর ঘোষণা দেয় তেহরান। একইসঙ্গে ইউরোনিয়াম মজুদের ৩০০ কিলোগ্রামের মাত্রাও পার করে ইরান।
জারিফ বলেন, 'কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই সিদ্ধান্ত উল্টানো যেতে পারে। আমরা পারমাণবিক অস্ত্র বিকাশের কথা ভাবছি না। আমরা যদি পারমাণবিক অস্ত্র বিকাশ করতেই চাইতাম তাহলে তা অনেক আগেই করতে পারতাম।'
জাতিসংঘের সফরকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জারিফের চলাফেরার ওপর অস্বাভাবিক কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরেই তার এমন মন্তব্য। জাতিসংঘের কার্যালয় যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত, যার ফলে জারিফের জাতিসংঘে যোগদানে যুক্তরাষ্ট্র সফর করতে হয়। সেখানে তার চলাফেরার ওপরে কয়েক সপ্তাহ আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব মাইক পম্পেও ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন যে, ওয়াশিংটনে তার ভিসা জারি করবে তবে, ম্যানহাটানের মিডটাউনে ইরানের জাতিসংঘ মিশনের ছয়টি ব্লকের অতিরিক্ত অতিক্রম করার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে। মার্কিন কূটনীতিকরা তেহরানে ঘুরে বেড়ায় না, তাই আমরাও ইরানের কূটনীতিকদের জন্য নিউইয়র্কজুড়ে অবাধে ঘুরে বেড়ানোর কোনো কারণ দেখি না।'
জাতিসংঘের উদ্বেগ
১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামী বিপ্লবে পশ্চিমা সমর্থিত রেজা শাহকে উৎখাতের পর থেকেই দুদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবসান ঘটে। তারপর থেকে ইরানে আর কোন মার্কিন কূটনৈতিক অবস্থান করেনি।
মার্কিন এই শীর্ষ কূটনৈতিক বলেন, 'পররাষ্ট্রমন্ত্রী জারিফ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাধীনভাবে এসে ক্ষতিকারক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।'
জাতিসংঘের মুখপাত্র ফারহান হক সাংবাদিকদের বলেন যে, জাতিসংঘ সচিবালয়ে জারিফের ভ্রমণের ওপর বিধিনিষেধ সম্পর্কে মার্কিন ও ইরান মিশনের সাথে তারা যোগাযোগ করেছেন এবং 'হোস্ট দেশের কাছে তার উদ্বেগও প্রকাশ করেছে।'
জাতিসংঘের হোস্ট হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের কারবারে বিদেশি কূটনীতিকদের অবিলম্বে ভিসা ইস্যু করার চুক্তি রয়েছে এবং শুধুমাত্র খুব কম ক্ষেত্রেই ভিসা বাতিল বা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সাধারণত শত্রু দেশগুলির কূটনীতিকদের ওপর নিউ ইয়র্কের কলম্বাস চত্ত্বরের ৪০ কিলোমিটার (২৫ মাইল) ব্যাসার্ধের বাইরে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন।
ফরাসী বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, আগামীকাল বুধবার (১৭ জুলাই) জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ টেকসই উন্নয়নে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক আয়োজন করেছে, জারিফের যেখানে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। জারিফের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের 'সর্বোচ্চ চাপ' প্রয়োগের অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
কোষাগার সচিব স্টিভেন নুশিন ২৪ জুন বলেছেন যে, পরের সপ্তাহেই জারিফের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আসবে। জারিফকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য আইনি যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সমালোচকরা জানান, এমন নিষেধাজ্ঞাগুলি সংলাপের সম্ভাবনার সমাপ্তি ঘটবে - যে সংলাপকে ট্রাম্প তার লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন।
নিষেধাজ্ঞার দ্বারা তাকে প্রভাবিত করা যাবেনা বলে দা নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে জারিফ বলেন। ইরানের বাহিরে জারিফের কোনো সম্পদ নেই বিধায় এমন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তার ক্ষতি করা যাবেনা।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড