• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ইরানের পদক্ষেপ গুরুতর নয়, এটি সংশোধনযোগ্য : ইইউ

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৬ জুলাই ২০১৯, ১০:০৬
ইইউ
ইইউর পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মঘেরিনি। (ছবিসূত্র : ইয়াহু নিউজ)

মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ ইরান চলতি পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘন ইস্যুতে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা কোনো গুরুতর বিষয় নয় এবং তা সংশোধন সম্ভব বলে মনে করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। সোমবার (১৫ জুলাই) বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে পরমাণু ইস্যুতে চুক্তি স্বাক্ষরকারী ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে এক বৈঠক শেষে ইইউর পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মঘেরিনি এ দাবি করেন।

'বিবিসি নিউজের’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রাসেলসের এই বৈঠকে ইউরোপের তিন দেশ ফ্রান্স, জার্মানি ও ব্রিটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা চলমান ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সঙ্কট নিরসনের পথ অনুসন্ধান করেছেন। যেখানে তারা তেহরানকে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি বহাল রাখায় আগ্রহ বৃদ্ধির নানা ইস্যু নিয়েও দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন।

বৈঠক শেষে ইইউর পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান বলেন, 'ইরানের পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘন এখনো কোনো গুরুতর বিষয় হয়ে ওঠেনি। তাদের এই পদক্ষেপ যেকোনো সময় সংশোধন করা সম্ভব। ইউরেনিয়াম মজুদের বিষয়ে চুক্তি অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং চুক্তি লঙ্ঘন হয় এমন পদক্ষেপ থেকে সরে আসতে আমরা তেহরানের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।'

ফেডেরিকা মঘেরিনি আরও বলেন, 'প্রকৃতপক্ষে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরের পর পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো এখন পর্যন্ত যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে বর্তমানে তাদের এই পদক্ষেপ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। যদিও এগুলোর সবই সংশোধনযোগ্য। আমার মতে চুক্তি স্বাক্ষরকারী বাকি দেশগুলো এখনো ইরানের এই পদক্ষেপকে গুরুতর লঙ্ঘন বলে মনে করছে না। তাই এখনই তারা এমন কোনো বিরোধে জড়াতে চায় না, যাতে ভবিষ্যতে তেহরানের ওপর আরও বড় কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হয়।'

এ দিকে সম্প্রতি উপসাগরীয় অঞ্চলের জিব্রাল্টার প্রণালীতে ইরানের একটি তেলবাহী ট্যাংকার আটক করেছিল ব্রিটিশ মেরিন সেনারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ট্যাংকারটি সিরিয়ার উদ্দেশে যাচ্ছিল বলে অভিযোগ ব্রিটেনের।

ইরান ইস্যুতে বৈঠক

ইইউ পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মঘেরিনির সঙ্গে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-ইয়েভেস লে ড্রিয়ান, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিকো মা এবং ব্রিটেনের পররাষ্ট্র সচিব জেরেমি হান্ট। (ছবিসূত্র : এমএসএন)

এসবের জেরে গত শনিবার (১৩ জুলাই) ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফের সঙ্গে টেলিফোন কথা বলেছিলেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। যেখানে ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, 'ট্যাংকারের তেল কোথা থেকে এসেছে তা নিয়ে মোটেও ব্রিটেনের কোনো মাথাব্যথা নেই। তবে আমাদের চিন্তার বিষয় হচ্ছে এই তেল ঠিক কোথায় যাচ্ছে। এটি সিরিয়ায় যাচ্ছে না কেবল এমন গ্যারান্টি দিলেই ট্যাংকারটি মুক্ত করে দেওয়া হবে।'

তেহরানের সঙ্গে ট্যাংকার ইস্যুতে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ব্রাসেলসের বৈঠকে অংশ নিলেন ব্রিটেনের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। যদিও বৈঠকটি শুরুর আগেই জেরেমি হান্ট বলেছিলেন, 'ফ্রান্স ও জার্মানির পাশাপাশি পারমাণবিক চুক্তি রক্ষায় যা কিছু করা সম্ভব এবার তার সব কিছুই করা হবে। একই সঙ্গে ইরানকে চুক্তি মেনে চলতে উৎসাহ দিতে যুক্তরাজ্য কাজ করে যাবে।'

অপর দিকে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ইস্যুতে সৃষ্ট উত্তেজনা নিরসনে গত রবিবার (১৪ জুলাই) সংলাপের আহ্বান জানিয়ে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল চুক্তি স্বাক্ষরকারী ইউরোপের তিন ক্ষমতাধর দেশ। ২০১৫ সালের চুক্তিটি ফের ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে উল্লেখ করে ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানির পক্ষ থেকে বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, 'এটি টিকিয়ে রাখার নিশ্চয়তার বিষয়টি তেহরানের ওপর নির্ভর করছে। আমরা বিশ্বাস করি, সৃষ্ট উত্তেজনা নিরসনে উপায় খুঁজে বের করার জন্য ফের সংলাপের সময় এসেছে।'

এর আগে ২০১৫ সালে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কমানোর জন্য তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নেতৃত্বে বিশ্বের ক্ষমতাধর ছয় দেশের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছিল। যেখানে শর্ত ছিল ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি কমিয়ে আনবে, যার বিনিময়ে তাদের উপর আরোপিত সকল অবরোধ ক্রমশ তুলে নেওয়া হবে। এতে চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলো হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন ও জার্মানি।

পরবর্তীতে গত বছরের ৮ মে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়ে একে একটি অকার্যকর চুক্তি বলে মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে তিনি তেহরানের তেল বিক্রিতে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেন; যা এখনো অব্যাহত আছে।

যদিও গত ১ জুলাই ইউরোপীয় দেশগুলোর ব্যর্থতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে নিজেদের ইউরেনিয়াম মজুদের সীমা অতিক্রম করেছে বলে দাবি করেছিলেন ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। এক টুইটার পোস্টে তিনি বলেন, 'কোনো চাপের কাছে ইরান কখনোই নতি স্বীকার করবে না। যুক্তরাষ্ট্র যদি আলোচনা করতে চায়, তাহলে সকল হুমকি ধামকি পরিহার করে, সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে কথা বলতে হবে। আমাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির পরিমাণ ৩০০ কেজি অতিক্রম করেছে।'

আরও পড়ুন :- ইরানের পরমাণু ইস্যুতে বৈঠকে বসছে ইউরোপীয় দেশগুলো

মন্ত্রী আরও বলেছেন, 'ইউরোপের তিন দেশ এবং ইইউ যতদিন ইরানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত যাবতীয় প্রতিশ্রুতি মেনে চলবে; তেহরানও ঠিক ততদিন পরমাণু সমঝোতার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করে যাবে।'

ওডি/কেএইচআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড