• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ট্রাম্পের 'শান্তি পরিকল্পনার’ বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল লেবানন

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৬ জুন ২০১৯, ০৯:০৫
লেবাননে বিক্ষোভ
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে লেবাননে বিক্ষোভ। (ছবিসূত্র : ফক্স নিউজ)

চলমান ফিলিস্তিন সংকট নিরসনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইনে আয়োজিত কর্মশালায় আরব দেশগুলোর কাছ থেকে অর্থ সাহায্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যার বিরোধিতা করে এরই মধ্যে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

কর্তৃপক্ষের বরাতে বার্তা সংস্থা 'রয়টার্স' জানায়, মঙ্গলবার (২৫ জুন) বৈরুতে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে ট্রাম্প প্রশাসনের কথিত এই পরিকল্পনাকে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র; এবং এটি কখনোই মেনে নেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিক্ষোভে আগত লোকজন।

গত মঙ্গলবার (২৫ জুন) শুরু হওয়া এই কর্মশালা চলবে আজ বুধবার পর্যন্ত; দুই দিনব্যাপী চলা এই সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথিত ‘ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি’ অংশবিশেষ উন্মোচন করা হতে পারে। এবারের সম্মেলনে অধিকৃত ফিলিস্তিনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মোট ৫ হাজার কোটি ডলার সংগ্রহ করা হবে। আয়োজকদের দাবি, এসব অর্থের অধিকাংশই আসবে বিভিন্ন অনুদান থেকে আর বাকিটা দীর্ঘমেয়াদি ঋণের মাধ্যমে আনা হবে।

এ দিকে ইরানের বার্তা সংস্থা 'ইকনা' জানায়, ফিলিস্তিনের উদ্বাস্তুরা লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর তাইয়েরে ধর্মঘট ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। যে কারণে জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। তাছাড়া আরও বন্ধ রাখা হয় ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোও। আগত বিক্ষোভকারীদের এসব কর্মসূচি থেকে বাহরাইন অনুষ্ঠিত সম্মেলনের তীব্র নিন্দা ও সমালোচনা করা হয়।

বিক্ষোভকারীদের মতে, ফিলিস্তিন চলমান সঙ্কট নিরসনের নামে বাহরাইনে যে সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়েছে; তা এরই মধ্যে বয়কট করেছে খোদ ফিলিস্তিনের সমস্ত রাজনৈতিক গোষ্ঠী ও সংগঠন। কেননা এই সম্মেলন ফিলিস্তিনিদের জন্য এক চরম অপমানের সামিল।

বিশ্লেষকদের মতে, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসন 'শান্তির লক্ষ্যে সমৃদ্ধি' নামে যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে; এটা তারই প্রথম ধাপ। যেখানে দীর্ঘদিন যাবত চলা জটিল রাজনৈতিক সমস্যা নিরসনের পরিবর্তে প্রথম ধাপে ফিলিস্তিনের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করাই পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্য। যদিও চলতি বছরের শেষ নাগাদ পরিকল্পনার রাজনৈতিক অংশটিও প্রকাশ করা হবে বলে এরই মধ্যে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিভিন্ন সূত্র। তবে মধ্যপ্রাচ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথিত শান্তি পরিকল্পনায় ইসরাইলের সম্মতি থাকলেও ফিলিস্তিনিরা এরই মধ্যে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

এবারের শান্তি পরিকল্পনাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে 'শতবর্ষের সেরা চুক্তি' নামে অভিহিত করেছেন। সম্মেলনের আগে পরিকল্পনাটির প্রণেতা ট্রাম্প জামাতা জ্যারেড কুশনার এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, 'দীর্ঘ সময় যাবত ফিলিস্তিনের জনগণ একটি অদক্ষ ব্যবস্থাপনায় বন্দি ছিল। 'শান্তির লক্ষ্য সমৃদ্ধি' নামে পরিকল্পনাটি এমন একটি কাঠামো দেবে যা বাস্তবায়নের ফলে ফিলিস্তিনি জনগণসহ অঞ্চলের সবাই এক উজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ পাবে।'

অপর দিকে হোয়াইট হাউস নিজেই এখনো বিশ্বাস করতে পাড়ছে না যে, এই পরিকল্পনা কোনো দিন বাস্তবায়ন সম্ভব। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এরই মধ্যে স্বীকার করেছেন, এই পরিকল্পনা যেকোনো সময় ব্যর্থ হতে পারে; যাতে তিনি মোটেই বিস্মিত হবেন না। পম্পেও এই সন্দেহের কারণ, যাদের জন্য এই কর্মশালার আয়োজন সেই ফিলিস্তিনিদের কেউই এই বৈঠকে উপস্থিত নেই।

চলমান রাজনৈতিক জটিলতা এড়াতে আয়োজকরা ইসরায়েলকেও এই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানায়নি। যদিও মার্কিন চাপে পড়ে জর্ডান, মিসর এবং মরক্কোর প্রতিনিধিরা কর্মশালায় উপস্থিত থাকছে। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবসহ আমিরাতের অর্থমন্ত্রীরাও উপস্থিত থাকছেন। তাছাড়া বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের পক্ষ থেকেও পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে বলে এরই মধ্যে জানানো হয়েছে।

ফিলিস্তিনকে সহায়তার জন্য এই বৈঠকে যে অর্থ তোলা হবে, তার অধিকাংশই আসবে আরবের ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী যার অর্ধেক ব্যয় হবে অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং গাজার উন্নয়নের কাজে।

ট্রাম্প জামাতা কুশনার বলেছেন, 'আমি চাই এই অঞ্চলকে একটি প্রথম শ্রেণির পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে। পরিকল্পনার সবচেয়ে 'সাহসী' প্রস্তাব হলো ইসরায়েলের ভেতর দিয়ে পশ্চিম তীর ও গাজাকে সংযোগকারী একটি করিডর নির্মাণ।'

যদিও ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এবং ইসরায়েলের কোনো ধরণের সম্মতি ছাড়া এই করিডর নির্মাণ ঠিক কেমন করে সম্ভব, সে কথা কুশনার অবশ্য তার টুইটে ব্যাখ্যা করেননি। কর্মশালায় অংশ নেওয়া অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের মতে, নিজেদের নিরাপত্তা জনিত কারণে ইসরায়েলের রক্ষণশীল সরকার কোনো দিন এই করিডরে নির্মাণে সম্মত হবে না।

অপর দিকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মতে, বর্তমানে তাদের অর্থনৈতিক সাহায্য প্রয়োজন সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তবে সবার আগে চাই জনগণের রাজনৈতিক অধিকার। গত রবিবার (২৩ জুন) রামাল্লায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রধান মাহমুদ আব্বাস বলেছিলেন, 'আমাদের জন্য আরব দেশগুলোর কাছে যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো দিন অর্থ চাইতে হবে কেন? সে কাজ তো আমরাই পারি।'

আরও পড়ুন :- ফিলিস্তিনের জন্য সাহায্য সংগ্রহে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মশালা

দেশটির সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ী মুনিব আল মাসরি বলেছেন, 'আমাদের সমস্যা পুরোপুরি রাজনৈতিক; এটা কোনো অর্থনৈতিক সমস্যা নয়।' যদিও এই একই কথা বলেছেন ফিলিস্তিনের বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী হানান আশরাভি। তার মতে, 'আমরা দরিদ্র সে কথা সঠিক, তবে আমাদের এই দারিদ্র্যের কারণ ইসরায়েল। তাই অবিলম্বে আমাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিন, এরপর দেখুন আমরা ঠিক কেমন করে সমৃদ্ধির দিকে ধাবিত হই।'

ওডি/কেএইচআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড