• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মমতার হুঁশিয়ারিতে ক্ষুব্ধ ডাক্তাররা

ডাক্তারদের গণইস্তফা, হুমকিতে ভারতের স্বাস্থ্যসেবা

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৪ জুন ২০১৯, ১৫:৪৭
ভারতে ডাক্তার আন্দোলন
ছবি : সংগৃহীত

ভারতে ডাক্তারদের আন্দোলনে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে ইস্তফার মাধ্যমে, যা শুরু হয়েছিল সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল দিয়ে। তার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গজুড়ে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের গণইস্তফা চলছে। ঘটনার সূত্রাপাত নীলরতন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ (এনআরএস) তো বটেই, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ, এসএসকেএম, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের মতো একাধিক হাসপাতালে গণইস্তফা দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত চারজন অধ্যক্ষ এবং ১৭০ জন চিকিৎসক ইস্তফা দিয়েছেন। নজিরবিহীন এই পরিস্থিতিতে গোটা পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতির জন্য রাজ্য প্রশাসন এবং মুখ্যমন্ত্রীকেই দায়ী করছে চিকিৎসক মহল। সরাসরি না বললেও ইস্তফার কারণ হিসেবে প্রশাসনিক অসহযোগিতাকেই কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন চিকিৎসকরা।

পশ্চিমবঙ্গের এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে রোগীর স্বজনদের হাতে এক জুনিয়র ডাক্তার আহত হলে ন্যায়বিচারের দাবিতেই এই বিক্ষোভ শুরু হয়। ডাক্তাররা কর্মবিরতিতে গেলে মমতা তাদের কাজে ফিরতে 'হুঁশিয়ারি' দেন, আর এরপরেই কঠোর অবস্থান নিয়েছে আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। বৃহস্পতিবারই (১৩ জুন) ইস্তফা দিয়েছিলেন এনআরএস-এর অধ্যক্ষ এবং সুপার। শুক্রবার ওই মেডিক্যাল কলেজের আরও প্রায় ১০০ জন চিকিৎসক ইস্তফা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নিজেদের মধ্যে বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে তাদের দাবি। তবে কীভাবে, কাকে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন, সেই সব বিষয়ে আলোচনা চলছে।

বৃহস্পতিবারই গুঞ্জন ছড়িয়েছিল, শুধু সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে নয়, গোটা রাজ্যেই গণ ইস্তফা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে এ দিন সকাল থেকেই। বেলা বাড়তেই একে একে ইস্তফা দিতে শুরু করেন আরজি কর হাসপাতালের চিতিৎসকরা। দুপুর পর্যন্ত সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৯৭-এ। তাদের অধিকাংশেরই বক্তব্য, প্রশাসনিক অসহযোগিতার জেরে হাসপাতালে পরিষেবা দেওয়া কার্যত অসম্ভব। মানুষ হাসপাতালে আসছেন, অথচ পরিষেবা পাচ্ছেন না, এটা মেনে নিতে পারছেন না তারা। সেই কারণেই ইস্তফা দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের 'হুঁশিয়ারি' দিয়েছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। ৪ ঘণ্টার মধ্যে কাজে যোগ না দিলে কড়া ব্যবস্থা নেয়া হবে। আন্দোলনকারীদের হোস্টেল ছাড়তে হবে বলেও হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর হাসপাতাল ছাড়ার পর কার্যত জোর করে জরুরি পরিষেবা চালুর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর হুমকি এবং প্রশাসনিক এই ব্যবস্থার জেরে ক্ষুব্ধ হয়ে আরও কঠোর অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এ বার সেই এসএসকেএম হাসপাতালেও গণইস্তফা দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। ইতোমধ্যেই মেডিসিন বিভাগের ৮ জন পদত্যাগ করেছেন।

ভারতের দক্ষিণ ছাড়িয়ে আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়েছে উত্তরবঙ্গেও। শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা এ দিন পথে নেমে প্রতিবাদ মিছিল করেন। সেই মিছিল শেষ হওয়ার পরই পদত্যাগ করেন মনোরোগ বিভাগের প্রধান নির্মল বেরা। পরে ওই বিভাগের আরও ৫ জন চিকিৎসকও ইস্তফা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল থেকে পদত্যাগ করেছেন মোট ৮ জন চিকিৎসক। পদত্যাগের পর তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি কার্যত নিয়ন্ত্রণের বাইরে। প্রশাসনিক অসহযোগিতার জেরে এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।

এ ছাড়া চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যালসহ প্রায় সব হাসপাতালেই চলছে ইস্তফার প্রক্রিয়া। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পদত্যাগী চিকিৎসকের সংখ্যা। ইস্তফা দিয়েছেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার। সিউড়ি হাসপাতালের সুপার শোভন দে বলেন, 'চিকিৎসকরা ইস্তফা দেবেন বলে শুনেছি। কিন্তু এখনও আমার কাছে কারও কোনো ইস্তফার চিঠি আসেনি।'

এই পরিস্থিতির মধ্যে গোটা ভারতের চিকিৎসা পরিষেবা এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন। মুমূর্ষু রোগী নিয়ে গেলেও ভর্তি করা হয়নি। মেলেনি প্রাথমিক চিকিৎসার মতো পরিষেবাও। আর জি কর, মেডিক্যাল কলেজে দেখা গিয়েছে হাসপাতালে এসেও রোগীকে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের লোকজন। রোগী নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফলে, সব মিলিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই কার্যত খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে। অবিলম্বে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে গোটা ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে বলে মনে করছেন চিকিৎসক মহলের একটা বড় অংশ।

ওডি/এসএমএস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড