আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চীন প্রস্তাবিত বহিঃসমর্পণ আইনের বিরোধিতা করে হংকংয়ের রাজপথে বিক্ষোভরত লক্ষ লক্ষ মানুষকে ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। গত ৯ জুন শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ এখনো অব্যাহত রয়েছে। বুধবার (১২ জুন) হংকংয়ের সরকারি অফিসের প্রধান সড়কসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থান বন্ধ করে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে বিক্ষোভকারীরা। তবে এই বিক্ষোভ অবজ্ঞা করে চীনপন্থি হংকংয়ের নেতা ক্যারি লাম ঘোষণা দিয়েছেন, প্রস্তাবিত বহিঃসমর্পণ অপরাধী প্রত্যর্পণ আইনের কোনো সংশোধন করা হবে না। এই আইন বহাল থাকবে। নতুন আইনের ফলে তার কোনো ক্ষতি হবে না। 'বিবিসি নিউজ' 'রয়টার্স'
বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ; (ছবি : সংগৃহীত)
হংকংয়ের মোট জনসংখ্যা ৭৬ লাখ। এই অঞ্চলে নেতা নির্বাচনের জন্য ১২০০ জন প্রতিনিধির একটি কমিটি রয়েছে যাদের ভোটে নেতা নির্বাচিত হয়। তাদের ভোটেই নির্বাচিত হয়েছিলেন ক্যারি লাম।
'এক দেশ, দুই প্রশাসনিক ব্যবস্থা'। সাবেক ব্রিটিশ কলোনি এবং বর্তমানে চীনের অধীনে থাকা আধা স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চল হংকংয়ের জন্যই এই উক্তিটি প্রযোজ্য। ১৫০ বছর ব্রিটিশদের অধীনে থাকার পর ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই এক চুক্তিতে ব্রিটেন হংকংকে ৫০ বছরের জন্য অর্থাৎ ২০৪৭ পর্যন্ত চীনা প্রশাসনের নিকট হস্তান্তর করে। এই চুক্তিতে হংকংয়ের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা এবং জনগণের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং আইনি অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে চীন প্রশাসনের চাপিয়ে দেওয়া বহিঃসমর্পণ অপরাধী প্রত্যর্পণ আইনের কারণে তাদের এই অধিকার হুমকির মুখে পড়েছে। হংকং ২০টি দেশের সাথে বহিঃসমর্পণ আইনে চুক্তিবদ্ধ হলেও চীনের সাথে বিগত দুই দশক ধরে সমঝোতা না হওয়ার কারণে এই আইনে চুক্তিবদ্ধ হয়নি।
চীন প্রস্তাবিত সমালোচিত ঐ আইনে বলা হয়েছে হংকংয়ের কোনো নাগরিকের নামে চীনের মূল ভূখণ্ড বা ম্যাকাও কিংবা তাইওয়ানে সংগঠিত কোনো হত্যাকাণ্ড এবং ধর্ষণ অপরাধের মামলা হলে অভিযুক্তকে সে অঞ্চলে বিচারের জন্য পাঠানো হবে। এই আইনের পক্ষে চীনাপন্থি আইনপ্রণেতাদের বক্তব্যের মূল বিষয় ছিল, কোনো অপরাধী এক ভূখণ্ডে অপরাধ করে অন্য ভূখণ্ডে গিয়ে যাতে বিচারের আওতাহীন না থাকতে পারে এজন্য এই সংশোধনী আনা হয়েছে। এই আইন সংশোধনী নিয়ে ১১ মে হংকং পার্লামেন্টে সংশোধনীর পক্ষে ও বিপক্ষের আইন প্রণেতাদের মধ্যে সংঘর্ষ ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছিল।
১১ মে হংকং পার্লামেন্টে আইন প্রণেতাদের মধ্যে সংঘর্ষ; (ছবি : সংগৃহীত)
তবে বিক্ষোভকারী ও সমালোচোকদের দাবি প্রস্তাবিত এই আইন পাশ হলে হংকং তার বিচারিক স্বাধীনতা হারাবে এবং হংকংয়ের যে কোনো মানুষকে অভিযুক্ত করে খুব সহজেই চীনের মূল ভূমিতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। অভিযুক্তদের ওপর নির্যাতন এবং যে কোনো ধরনের অভিযোগের অযৌক্তিক বিচার রায় চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। এই আইন পাশ হলে হংকংয়ের বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি হংকংয়ের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চীনের হস্তক্ষেপ বাড়বে। এছাড়াও এই আইনের ফলে বিশ্ব বাজারে বাণিজ্যিক আকর্ষণ হারাবে হংকং এবং হংকংয়ের প্রতি আস্থা হারাবেন বিনিয়োগকারীরা।
দাবি আদায়ে বিক্ষোভকারীরা ; (ছবি : সংগৃহীত)
চীন প্রস্তাবিত এই বহিঃসমর্পণ আইন সংশোধনীর জন্য হংকংয়ের রাজপথে বিক্ষোভ করছেন লক্ষ লক্ষ হংকংয়ের নাগরিক যা চীনকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছে। এই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে ঐ প্রদেশের আইন প্রণেতা থেকে শুরু করে ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী এবং দিনমজুরসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী ৫৯ বছর বয়সী প্রোফেসর রকি চেং বলেন, এটি হচ্ছে হংকং শেষ খেলা, এটি হংকংবাসীর জন্য জীবন-মৃত্যুর সিদ্ধান্ত। এই আইন নিকৃষ্ট আইন।
সাংবাদিক সম্মেলনে ক্যারি লাম বলেন, এই আইনের প্রয়োজন রয়েছে এবং এতে মানবাধিকারের রক্ষাকবচগুলো যুক্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনটি বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে তোলা হয়নি। বিবেকের তাড়নায় এবং হংকংয়ের প্রতি অঙ্গীকার থেকেই এই প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে।
সাংবাদিকসম্মেলনে ক্যারি লাম; (ছবি : সংগৃহীত)
এই ঘোষণার পর আন্দোলন আরও তীব্র হতে থাকলে হংকংয়ের প্রধান সড়কে শত শত পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং বিক্ষোভকারীদের সামনে অগ্রসর না হওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তা না মানায় রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।
বিক্ষোভকারীদের সামনে অগ্রসর হতে বাধা দিচ্ছে পুলিশ; (ছবি : সংগৃহীত)
এই আইনের সূত্রপাত হয়েছিল ২০১৮ সালে সংগঠিত এক হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে। হংকং এক যুবক তাইওয়ানে ছুটি কাটাতে গিয়ে তার অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবীকে হত্যা করে হংকংকে ফিরে আসে। তাইওয়ানের সাথে হংকংয়ের বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকায় ওই অপরাধীকে তাইওয়ানের ভূখণ্ডে ফিরিয়ে নিয়ে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চীনা প্রশাসন এই বহিঃসমর্পণ আইনের প্রস্তাব করে। তবে এই আইনের ফলে অন্যান্য ভূখণ্ডে চীনা হস্তক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে এখন তাইওয়ানের পক্ষ থেকেও এই আইনের বিরোধিতা করা হচ্ছে।
হংকং প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই বিক্ষোভের কারণে প্রস্তাবিত আইনের কিছু দিন স্পষ্ট এবং নির্দিষ্ট করার কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক অভিযোগে অভিযুক্তরা এই আইনের আওতাধীন থাকবে না। এই আইন প্রত্যর্পণ করা হয়েছে যাতে কেও এক ভূখণ্ড থেকে অন্য ভূখণ্ডে গিয়ে হত্যাকাণ্ড এবং ধর্ষণের মতো অপরাধ করে শাস্তির বাইরে থাকতে না পারে।
ওডি/কেএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড