• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সৌদিতে দিনে ৩৭ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর!

সাইকেল নিয়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, শিয়া বালকের মৃত্যুদণ্ড!

মাত্র ১৩ বছরে আটক হয় মুর্তজা কুরেইরিস

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০৯ জুন ২০১৯, ১৯:০৬
সৌদির বর্বরতা
ছবি : সংগৃহীত

সিংহাসন ও রাজনৈতিক কর্তৃত্ব, শিয়া-সুন্নি বৈষম্য নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মুসলিম রাষ্ট্র সৌদি আরবের মানবাধিকার অবস্থা যে শোচনীয় তা অজ্ঞাত নয় কারোই। মুসলিমদের পবিত্র এই ভূমিতে নেই লিখিত কোনো সংবিধান আর তার সুযোগে আইনকে যেমন ইচ্ছে ব্যবহারের মাধ্যমে সৌদিতে অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ওপর নির্যাতন চালানো হয় গণহারে। সৌদির রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের আরেকটি উদাহরণ এক বালকের মৃত্যুদণ্ড। আরব বসন্তকালীন সৌদি আরবে সরকার বিরোধী প্রতিবাদে অংশগ্রহণের জন্য এক বালককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে মাত্র ১৩ বছর বয়সে সন্ত্রাসের অভিযোগ এনে আটক করা হয়েছিল বিপ্লবী মুর্তজা কুরেইরিসকে।

২০১১ সালে সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় একটি প্রদেশে বাই-সাইকেল বিক্ষোভে অংশগ্রহণের জন্য মুর্তজাকে আটক কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, সৌদি আরবের পাবলিক প্রসিকিউশন মুর্তজাকে ২০১৮ সালের আগস্টে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে, তার এখন বয়স ১৮ বছর। ধারাবাহিক অপরাধের জন্য, যার মধ্যে কিছু অপরাধের সময় দেখানো হয়েছে যখন তার বয়স মাত্র দশ বছর।

২০১৬ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘের নির্বিচারে আটক নিয়ে কাজ করা গোয়েন্দা বিভাগের কার্যনির্বাহী দল একটি ছোট শিশুর পরিচয় তুলে ধরেছিল, যেখানে বলা হয় মর্তুজার সঙ্গে মিল আছে এমন একজনকে পাওয়া যায়। যাকে সৌদি কর্তৃপক্ষ নির্জন কারাবাসে রেখে, মারধর ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে তার স্বীকারোক্তি নিয়েছে। ২০১৭ সালের মে মাসে মাত্র ১৬ বছর বয়সে মর্তুজাকে প্রাপ্ত বয়স্কদের আল-মাহেথ কারাগারে পাঠানো হয়।

২০১৮ সালের আগস্ট মাসে বিশেষ অপরাধ আদালতে তার প্রথম কোর্ট সেশনের পর মর্তুজাকে আইনজীবীর সুবিধার অনুমতি দেয়া হয়, এর আগে সে আইনি সুবিধা থেকেও বঞ্চিত ছিল। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশেষ অপরাধ আদালতটি মানবাধিকার কর্মী ও প্রতিবাদকারীদের সংশ্লিষ্টদের মামলার জন্য ব্যবহৃত হয়।

মর্তুজার বিরুদ্ধে বিরোধী দলের সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশগ্রহণ, তার ভাই আলী কুরাইরিস (২০১১ সালের এক বিক্ষোভে নিহত হয়) এর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ, একটি 'সন্ত্রাসী সংগঠনে' যোগদান, পুলিশ স্টেশনে মালোটভ ককটেল নিক্ষেপ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর গুলি চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত। মর্তুজা বর্তমানে তার পরবর্তী শুনানি অধিবেশনের অপেক্ষা করছে।

মর্তুজা কুরেইরিসকে নিয়ে মার্কিন বার্তা সংস্থা 'সিএনএন' এর প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে এক ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়েছে, যেখানে ১০ বছর বয়সী কুরেইরিসের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভকারীদের একটি শিশুর দল বাই-সাইকেল প্রতিবাদ চালায়। তারা চিৎকার করে 'মানুষ মানবাধিকার চায়' স্লোগান দিচ্ছিল! 'সিএনএন' অনুসারে, মর্তুজার প্রসিকিউশনে মৃত্যুদণ্ডের সবচেয়ে কঠোর রূপটি আরোপ করার চেষ্টা করছে। কোনো ধরনের মৃত্যুদণ্ডের জন্য দায়ী না হওয়া সত্ত্বেও ক্রুশবিদ্ধকরণ বা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতে পারে।

প্রসিকিউটররা যুক্তি দেখিয়েছেন যে, সৌদির ইসলামি শরিয়া আইনের কঠোর ব্যাখ্যা অনুসারে তার মধ্যে 'রাষ্ট্রোদোহিতার বীজ' সবচেয়ে খারাপ শাস্তিকে জোরদার করেছে। প্রতিবেদনে আরও জানা গেছে যে, তার ভাইদের একজন কারাগারে রয়েছে এবং গত বছর তার বাবাকেও আটক করা হয়েছিল।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মিডিল ইস্ট রিসার্চ ডিরেক্টর লিন মালাউফ বলেন, 'সৌদি কর্তৃপক্ষ যে তাদের নাগরিকদের মতভেদকে হ্রাস করার জন্য যে কোনো অবস্থায় নামতে প্রস্তুত তা সন্দেহাতীত, যার মধ্যে বালককেও মৃত্যুদণ্ডের সম্মুখীন করা হয়েছে, যে বালক আটকের সময় শিশু ছিল।'

মর্তুজা ছাড়াও ১৮ বছর বয়সের আরও তিন শিশুকে ২০১২ সালে আটক করা হয়েছে, যারা এখন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। সাবালকত্বের আগেই সংঘটিত অপরাধের অভিযোগে তিন ছেলে আলী আল-নিমর, আব্দুল্লাহ আল-জহের ও দাউদ আল-মারহুনেরও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, সৌদি আরব ২০১৮ সালে ১৩৯ জন ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। এটা যুক্তিযুক্ত যে মর্তুজারর মামলাটি শিয়া সংখ্যালঘুদের এবং রাজনৈতিক মতবিরোধীদের দমন করা সরকারের অভিযানের অংশ। ২০১৫ সালে ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হলে এই অভিযান শুরু হয়।

এপ্রিল মাসে, কর্মকর্তারা আবদুল কীরম আল-হাওয়াসহ ২ শিয়া ছেলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিল। মাত্র ১৬ বছর বয়সে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে জড়িত থাকার অভিযোগে আবদুল গ্রেফতার হয়েছিল। সৌদিতে একদিনে ৩৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার মধ্যে আবদুলও ছিল একজন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির অধিকাংশই শিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্গত ছিল।

জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, সৌদি সরকার ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক বিক্ষোভ দমন করার জন্য সন্ত্রাসবাদ আইন ব্যবহার করেছে। সৌদি আরবে কোনো লিখিত সংবিধান নেই, আর তাই লিখিত পেনাল কোডের অনুপস্থিতির কারণে অপরাধমূলক বয়সটি অস্পষ্ট। এই সুযোগে সরকার ২০০৬ সালে শিশু অধিকার সম্পর্কিত কমিটির কাছে জানায় যে, তারা অপরাধমূলক দায়বদ্ধতার জন্য ন্যূনতম ১২ বছর নির্ধারণ করেছে।

সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, সৌদি আরব ২০১৮ সালে ১৩৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। এদের মধ্যে প্রায় ৫৪ জনকে অহিংস মাদক অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। শিরোচ্ছেদের মাধ্যমেই সর্বাধিক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়, আর তা কখনো কখনো জনসম্মুক্ষেই করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড