• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কংগ্রেসের বৈঠক, রাহুল কী পদত্যাগ করছেন?

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৫ মে ২০১৯, ১৩:১৮
ভারতের লোকসভা নির্বাচন
ছবি : সংগৃহীত

লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরেই শোচনীয় হারের দায় নিজের ঘাড়ে নিয়েছেন কংগ্রেস রাহুল গান্ধী। তার ইস্তফার সম্ভাবনা নিয়ে খবর ছড়াতেই দলে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। শুক্রবার (২৪ মে) ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে কী করবেন কংগ্রেস সভাপতি তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। রাহুলের ইস্তফার কথা শুনেই দলের নবীন নেতারা দিল্লি আসতে শুরু করেছেন। তারা চান, রাহুল যাতে কোনও ভাবেই ইস্তফা না দেন। কারণ, তারা মনে করছেন, রাহুল জেদ ধরে থাকলে ইস্তফা দিয়েই দেবেন।

কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা ৫২ জন। সেখানে ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী থেকে শুরু করে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও আছেন। আছেন পাঞ্জাব থেকে শুরু করে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রীরা।

গতবার সভাপতি না হলেও নির্বাচনে কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রাহুল। আর এবার সভাপতি হিসেবে তিনি-ই দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দল সাফল্য পায়নি। নিজের 'কর্মভূমি' অমেথীতে পরাজিত হয়েছেন তিনি। কাজে আসেনি তার 'চৌকিদার চোর হ্যায়' স্লোগান। এমতাবস্থায় আজ বৈঠকে বসছে কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটি। সেখানেই পদত্যাগ করতে পারেন রাহুল। ভোটের সম্পূর্ণ ফল প্রকাশিত হওয়ার আগেই হারের জন্য দায় নেন রাহুল। সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান তিনি কি পদ ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন? উত্তরে রাহুল বলেন সেটা তিনি কার্যনির্বাহী কমিটিকেই জানাবেন।

২০১৪ সালের ভোটের সময় কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন সোনিয়া, রাহুল ছিলেন সহসভাপতি। পদ ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন দুজনেই। সেবার ৪৪টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। নেহরু –গান্ধী পরিবাররে প্রতি সদা অনুগত কংগ্রেস দুজনকেই পদে থেকে যেতে অনুরোধ করে। তবে, এবার নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ কিছুটা বেশি। ইতোমধ্যেই রাজস্থানের এক কংগ্রেস নেতা বলেছেন, কিছু পরিবর্তনের ইচ্ছা থাকলে নেতৃত্বেই বদল আনা দরকার। শুধু তাই নয় নেহরু- গান্ধী পরিবারের নেতৃত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

তবে, কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে রাহুল ইস্তফা দিতে চাইলে আদৌ কি তা গ্রহণ করা হবে? এই প্রশ্নে মতিলাল ভোরার মতো প্রবীণ নেতারা রাহুলেই আস্থা রাখছেন। ভোরার পাল্টা প্রশ্ন, 'রাহুল গান্ধীর বদলে দায়িত্ব নিতে পারেন, দলে এমন ব্যক্তি কে আছে?'

দলে শীর্ষ পদের প্রত্যাশী যে নেই, তা নয়। রাহুল জমানায় 'উপেক্ষিত' নেতারা এখন সুযোগ বুঝে হাত বাড়াচ্ছে সেদিকে। শনিবার (২৫ মে) দুপুরে এআইসিসি দপ্তরে এসে ঘুরে যান রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত। তিনি ঘাঁটি গেড়েছেন দিল্লিতেই। ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের আগে গহলৌতও পদ পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

কংগ্রেসের এক নেতা বললেন, 'যে গহলৌত নিজের রাজ্যেই গো-হারা হেরে বসে আছেন, তাকে কেন পুরস্কৃত করা হবে?’’ গহলৌত নিজে অবশ্য টুইটারে লিখেছেন, '...সভাপতির ইস্তফার প্রসঙ্গ ভিত্তিহীন ও অপ্রাসঙ্গিক। এটা আমরা কখনওই ভুলব না, রাহুল গান্ধীর অক্লান্ত পরিশ্রম ও লড়াকু মেজাজের কারণেই এনডিএ-কে শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিল কংগ্রেস।' এর পরে দ্বিতীয় একটি টুইটে রাহুলের নেতৃত্বকে 'দৃষ্টান্তমূলক' আখ্যা দিয়েছেন তিনি।

শুধু গহলৌত নন, সুশীল কুমার শিণ্ডে, তরুণ গগৈ, মল্লিকার্জুন খড়্গের নাম নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে। মল্লিকার্জুন জেতেননি এ বার। ফলে লোকসভায় দলের নেতা কাকে করা হবে, সেটি নিয়েও ভাবতে হবে। কেউ কেউ তো আবার এক জন সভাপতির সঙ্গে চার জন কার্যনির্বাহী সভাপতির প্রস্তাব নিয়েও হাজির। কংগ্রেসের ওই নেতার কথায়, 'আসলে দলের প্রবীণ নেতাদের একাংশই এখন রাহুলের বিরুদ্ধে সুযোগ পেয়ে কাকে লাগাতে চাইছেন। যারা রাহুল আসার পর নিজেদের উপেক্ষিত মনে করছেন।'

হারের কারণ নিয়ে পর্যালোচনার বৈঠকের আগে জনার্দন দ্বিবেদীর মতো নেতাও ক্ষোভ উগরে বলেছেন, 'কংগ্রেসের এই ফল দেখে আমি একেবারেই আশ্চর্য হইনি। আমি আগেই দলকে সতর্ক করেছিলাম।'

অনিল শাস্ত্রীর মন্তব্য, 'ভোট প্রচারে 'চৌকিদার চোর হ্যায়'-এর মতো স্লোগান আসলে বুমেরাং হয়েছে। রাফাল মানুষের মনে দাগ কাটেনি। 'ন্যায়' প্রকল্পও নিচু স্তর পর্যন্ত পৌঁছায়নি। তবে, রাহুল গান্ধীর ইস্তফা দেওয়া কোনও কাজের কথা নয়। ইস্তফা দেওয়া মানে দায়িত্ব থেকে পালিয়ে যাওয়া। বরং এই পরিস্থিতির মুখোমুখি দাড়িয়ে লড়াই করে যেতে হবে।'

প্রবীণ নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, নিজের আশপাশে রাহুল যাদের রেখেছেন, তারাই ভুল পরামর্শ দিয়েছেন। এই সব ফাঁক ভরাট করে নতুন চিন্তাভাবনা নিয়ে এগুতে হবে। এক প্রবীণ নেতা মনে করিয়ে দেন, 'ইন্দিরা গান্ধীও রায়বরেলী কেন্দ্র থেকে রাজ নারায়ণের কাছে হেরে গিয়েছিলেন ১৯৭৭ সালে। সে বারেও হারের ব্যবধান ছিল ৫৫ হাজারের। এ বারেও অমেথীতে রাহুলের হারের ব্যবধান এতটাই। কংগ্রেস অনেক ওঠাপড়া দেখেছে। আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এটা এমন নতুন কিছু ঘটনা নয়।'

যদিও রাহুলের পদত্যাগের সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনার মধ্যেই আজ উত্তরপ্রদেশে দলের সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছেন রাজ বাব্বর। অমেথীতে দলের হারের দায় নিয়ে সেই জেলা কমিটির সভাপতিও ইস্তফা দিয়েছেন। কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতারা বলছেন, এ তো রাহুলকে আড়াল করার 'ছল'। আর রাহুল-পন্থীরা বলছেন, 'আজকের বৈঠকেও ইস্তফার ঢল নামবে। কিন্তু রাহুল ইস্তফা দিলেও তা গ্রহণ করার সাহস কে দেখাবে?'

ওডি/এসএমএস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড