• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ভাদনগর রেলস্টেশন থেকে দিল্লির মসনদ : মোদী উপাখ্যান

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৪ মে ২০১৯, ১৮:১৮
মোদী
নরেন্দ্র মোদী; (ছবি ; সংগৃহীত)

ভারতের ১৭ তম লোকসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছিল রবিবার (১৯ মে)। মোট ৫৪৩ আসনের মধ্যে ৫৪২ আসনে ভোটগ্রহণ হয়। সরকার গঠন করতে কোনো দল বা জোটকে পেতে হবে ২৭২ আসন। সাত দফায় ভোট গ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার (২৩ মে) ভোটযুদ্ধের ফলাফল ঘোষণা করার কথা থাকলেও 'ইলেকশন কমিশন অব ইন্ডিয়া' (ইসিআই) এর ফলাফল প্রকাশ করেছে শুক্রবারের প্রথম প্রহরে। খবর 'ইন্ডিয়া টুডে'।

ভারতের নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টি( বিজেপি) একাই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭২ আসনের চেয়ে বেশি আসন পেয়েছে। ১৭তম লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি একাই পেয়েছে ৩০৩টি আসন। আর বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটসহ মোট ৩৫০টি আসনে জয় পেয়েছে। বিগত তিন দশকের মধ্যে এই প্রথম কোনো দল ভারতের নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে।

২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ওই লোকসভা নির্বাচনে সরকার গঠন করেছিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রাটিক এলায়েন্স (এনডিএ)। আর বিশ্বের সর্ব বৃহৎ গণতান্ত্রিক এই নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৪ সালে ২৬ মে বিজেপি থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এরপর ২০১৪-১৯ সাল পর্যন্ত যতদিন পার হয়েছে ভারতীয় জনগণের কাছে নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা ততটাই বেড়েছে। এর সত্যতা পাওয়া যায় এবারের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনেই। কিন্তু কে এই নরেন্দ্র মোদী? ভারতীয় জনগণের নিকট কীভাবে এতটা জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী হলেন মোদী? চলুন জেনে নেওয়া যাক মোদী থেকে ভারতের ১৭তম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হয়ে ওঠার গল্প।

কে এই নরেন্দ্র মোদী?

১৯৪৭ সালে ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হওয়ার তিন বছর পর ১৯৫০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম হয় নরেন্দ্র মোদীর। তার পিতার নাম দামোদরদাস মোদী ও মাতার নাম হিরাবা মোদী। এই দম্পতির ছয় সন্তানের মধ্যে মোদী তৃতীয়। তার অনুপ্রেরণাময় জীবনের শুরু হয় উত্তর গুজরাটের মেহসানা জেলার ভাদনগর নামের এক ছোট শহরের গলিপথে।

কিশোর নরেন্দ্র মোদী; (ছবি ; সংগৃহীত)

খুব অল্প বয়সে দরিদ্রতার স্পর্শ পেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তার পিতা দামোদরদাস ছিলেন একজন চা বিক্রেতা। তিনি ভাদনগর রেল স্টেশনে একটি চায়ের দোকান করে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করতেন। মোদীর পুরো পরিবার ৪০ ফুট বাই ১২ ফুট একটি একতলা বাড়িতে থাকত। তাই চরিত্রগঠনের প্রাথমিক দিনগুলোতে কঠিন বাস্তবতার এক চরম শিক্ষা পেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। পড়াশোনার পাশাপাশি পারিবারিক চায়ের দোকানে সময় দিতে হতো তাকে। কঠোর পরিশ্রম, আগ্রহ, যুক্তি এবং বিতর্ক এই গুণগুলোর চর্চা প্রথম জীবনেই শুরু করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এতে প্রভাব বিস্তার করেছিল স্বামী বিবেকানন্দের মতাদর্শ। এই মতাদর্শের প্রভাবেই ভাবজগতে যাত্রা শুরু হয় তার। ভারতকে জগতের শ্রেষ্ঠ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার যে স্বপ্ন স্বামী বিবেকানন্দ দেখেছিলেন সে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে মোদীকে প্রেরণা দিয়েছিল সেই মতাদর্শ ।

নরেন্দ্র মোদীর বিয়ে ও সন্ন্যাস জীবন

ঐতিহ্য অনুসারে শিশু বয়সেই পরিবার থেকে যশোদাবেনের সাথে বাগদান হয় নরেন্দ্র মোদীর। এরপর ১৯৬৮ সালে মোদীর বয়স যখন ১৮ এবং যশোদাবেনের বয়স যখন ১৬ তখন পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর সাংসারিক জীবন শুরু করলেও বিয়ের কিছু দিন পরেই স্ত্রীকে ছেড়ে হিমালয়ে সন্ন্যাস জীবন শুরু করেন মোদী। মোদী চলে যাওয়ার পর যশোদাবেন কয়েক মাস মোদী পরিবারে সাথে থাকলেও পরে তিনি আবার পড়াশোনা শুরু করেন এবং শিক্ষাজীবন শেষ করেন এবং পরবর্তীতে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন।

মোদীর স্ত্রী যশোদাবেন; (ছবি ; সংগৃহীত)

মাত্র আঠারো বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে ভারত ভ্রমণে বেড়িয়ে পড়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তিন বছরের সন্ন্যাস জীবনে মোদী ভারতের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেছিলেন এবং বৈচিত্র্যময় ভারতীয় সংস্কৃতিকে খুব কাছে থেকে উপলব্ধি করেন। সন্ন্যাস জীবন শেষ করে মোদী আহমেদাবাদ গিয়ে তার চাচার রেস্তোরাঁয় কাজ করা শুরু করেন।

আহমেদাবাদ থেকে দিল্লির মসনদ!

১৯৭১ সালে আমেদাবাদে গিয়ে মোদী কাজের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘে যোগ দেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আর.এস.এস.) ভারতের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে কর্মরত এক সমাজ-সংস্কৃতিমূলক এক সংগঠন। ১৯৭২ সালে তিনি আর.এস.এস. –এর প্রচারক পদে নিযুক্ত হন। এই সময়টা ছিল তার জন্য অত্যন্ত পরিশ্রমের। এই সময় তিনি ভোর পাঁচটা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতেন।

১৯৭৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ঘোষিত জরুরীকালীন অবস্থায় বিদ্রোহীদের গ্রেপ্তার করা শুরু হলে এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে মোদী গ্রেপ্তারি এড়ানোর জন্য কখনো শিখ, কখনো বয়স্ক ব্যক্তির ছদ্মবেশে গোপনে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারপুস্তিকা বিতরণ ও বিক্ষোভ সমাবেশ সংগঠিত করার দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় তিনি গুজরাট 'লোকসংঘর্ষ সমিতি'র সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন।

১৯৮০'র দশকে আর.এস.এস. সঙ্ঘের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালনের পাশাপাশি তিনি ঐ সংঘের প্রধান সাংগঠনিক হিসাবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। এর ৫ বছর পর ১৯৮৫ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ মোদীকে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করায়। নিরলস পরিশ্রম দিয়ে ধীরে ধীরে সফলতার পথে হাটতে থাকেন মোদী। এর ফলে ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য শাখায় উল্লেখযোগ্য সংগঠক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

১৯৮৭ সালে বিজেপি'র সাধারণ সম্পাদক; (ছবি ; সংগৃহীত)

১৯৮৭ সালে গুজরাটে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে তার জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। ১৯৯০ সালে গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে কংগ্রেসের পরের স্থানে রাখাটা ছিল তার রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জিং উত্থান। ১৯৯৫ সালে বিধানসভা নির্বাচনে শ্রী মোদীর সাংগঠনিক দক্ষতার মাধ্যমে বিজেপির জনসমর্থন বৃদ্ধি পায় এবং বিজেপি ১২১টি আসন লাভ করে।

১৯৯৫ সাল থেকে নরেন্দ্র মোদী বিজেপির জাতীয় পর্যায়ের সম্পাদক হিসেবে হরিয়ানা এবং হিমাচলপ্রদেশের সাংগঠনিক দায়িত্ব পান। ১৯৯৮ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালন করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রী অটল বিহারী বাজেপেয়ীর নজরে আসেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

এরপর ২০০১ সালে গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কেশুভাই পাটেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রশাসনিক দুর্বলতার অভিযোগ আসলে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য বিজেপির জাতীয় নেতৃত্ব থেকে কেশুভাইয়ের বিকল্প হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর নাম উঠে আসে। ২০০১ খ্রিস্টাব্দের ৭ই অক্টোবর মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ২০০১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চারবার তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ তে তাকে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হয় ও নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ২৬শে মে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রীর পদে শপথ নেন ।

গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও নরেন্দ্র মোদী:

ভারতে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করার মতাদর্শ নিয়েই শুরু হয়েছিল বিজেপির পথ চলা। এছাড়াও কংগ্রেস ও বিজেপি এই দুই দলের মতাদর্শের মূল পার্থক্যের জায়গাও এটি। কংগ্রেসের রাজনৈতি মতাদর্শ হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ উদারবাদী রাজনীতি অন্য দিকে বিজেপির রাজনৈতিক মতাদর্শই হচ্ছে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করা। ২০১৯ সালের নির্বাচনেও এই মতাদর্শিক ভিন্নতাই ছিল। এই চরম হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দলের অন্যতম চরমপন্থি হিসেবে পরিচিত নরেন্দ্র মোদী। ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ওই রাজ্যে এক সাম্প্রদায়িক হত্যাকাণ্ডে দুই হাজারের বেশি মুসলমান নিহত হয়েছিলেন। ওই দাঙ্গায় হাজার হাজার মুসলমান নিহত ও ধর্ষণের পাশাপাশি হাজার হাজার মুসলমান পরিবার নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দাঙ্গার এই ঘটনার মাধ্যমে গুজরাটে হিন্দুত্ব সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়া হয়েছে।

২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা; (ছবি ; সংগৃহীত)

এই দাঙ্গার সূত্রপাত হয়েছিল একটি গুজব ছড়িয়ে। অযোধ্যা থেকে সবরমতি এক্সপ্রেসে যেই ট্রেনে কর প্রদানকারীরা ফিরছিলেন সেই ট্রেনটি গোধরা রেলস্টেশনে পৌঁছালে ট্রেনে আগুন লেগে প্রায় ৬০ জনের মতো হিন্দুর মৃত্যু হয়। কী কারণে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছি বা কারা এর জন্য দায়ী ছিল সে বিষয়ে কোনো প্রমাণ না থাকলে এর দায়ভার চাপিয়ে দেওয়া হয় মুসলিমদের ওপর। প্রচার করা হয় এই হত্যাকাণ্ড মুসলমানদের কাজ, এই খবর প্রচারিত হলে গুজরাটে শুরু হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। তবে এই প্রচারণা চালিয়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তার দল বিজেপি গুজরাটে ভারতের ইতিহাসে জঘন্যতম এক সাম্প্রদায়িক হত্যাকাণ্ড ঘটান। এই দাঙ্গার ঘটনায় নরেন্দ্র মোদীর নামে মামলা হলেও ২০১০ সালে সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে তা খারিজ হয়ে যায় কিন্তু তার ঘনিষ্ট সহযোগী মায়া কোদনানির ২৮ বছরের জেল হয়।

এই দাঙ্গার ঘটনায় তৎকালীন সময়ে ভারতসহ আন্তর্জাতিক মহলে তিনি ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন এবং বিজেপির প্রথম সারির নেতাদের মতো আলোচনায় চলে আসেন নরেন্দ্র মোদী।

ভারতে হিন্দুত্ববাদ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী:

ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৮৫ সালে ধীরেন্দ্রনাথদত্তের সভাপতিত্তে। কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে তা ধর্মনিরপেক্ষ বলা হলে হলেও ভারতের রাজনীতি কখনোই ধর্মনিরপেক্ষ ছিল। কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর ধীরে ধীরে এর ওপর হিন্দুদের কর্তৃত্ব বাড়তে থাকে এবং রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়তে থাকে মুসলিমরা। এরপর কংগ্রেস থেকে মুসলিমরা বেড়িয়ে আসে এবং এই ক্ষোভ থেকেই ১৯০৬ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নিখিল ভারত মুসলিম লীগ যা ভারতের মুসলিমদের প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন।

মুসলিম লীগ ( বামে) ও কংগ্রেস ( ডানে); (ছবি ; সংগৃহীত)

এই মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস নামের দুটি রাজনৈতিক সংগঠন খুব অল্প সময়ের জন্য কোনো জাতীয় ইস্যু ছাড়া অধিকাংশ সময় পার করেছে কাদা ছোঁড়াছুড়ি করে। তখন থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি প্রচলিত আছে এবং এই ধর্মীয় কারণেই ভারত উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্থান রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে। অর্থাৎ যে রাষ্ট্রের জন্মই হয়েছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ওপর ভিত্তি করে সে দেশে যে ধর্মনিরপেক্ষতা চলবে না তা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাই ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদ মতাদর্শেরই জয় হয়েছে।

ভারতে হিন্দুত্ববাদের জয়ে বাংলাদেশের ওপর প্রভাব:

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে ভারতের যে প্রভাব রয়েছে তা স্বীকার করতেই হবে আবার হিন্দুত্ববাদী মোদীই আসছে দেশটির ক্ষমতায়। অদূর ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যে একটা হুমকির মুখে পড়তে পারে তা অনুমান করা হলে খুব বেশি ভুল হবে না।

কার্নেগী এন্ডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের সাউথ এশিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক মিলান বৈষ্ণব বলেন, 'ট্রাম্প যেমন মেক্সিকোর সঙ্গে শারীরিক প্রাচীর তৈরি করছে, মোদীও তেমন এনআরসির মতো নীতির মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি রূপক প্রাচীর তৈরি করছে।'

আসামের মুসলিম জনসংখ্যার প্রতি ৩ জনের একজন বাসিন্দা আতঙ্কে আছে। ভারত থেকে তাদের বিতাড়নের জন্য এনআরসি ব্যবহার করা হচ্ছে ভেবে তারা ভয়ে আছে। অল আসামের সংখ্যালঘু ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আজিজুর রহমান বলেন, 'বিজেপি সমাজকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে এবং যদি তারা তা চালিয়ে যায় তবে এটি ভারতীয়দের বহুত্ববাদী পরিচয় ধ্বংস করবে। যদি তারা জিতে যায়, তাহলে পরবর্তী পাঁচ বছর মুসলমানদের জন্যে খুবই কঠিন হবে এবং আগামী কয়েক দশক ধরে এই ধারা চলতে থাকবে।' ভারতীয় সংসদ নির্বাচনে এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয় হয়ে উঠেছে। সচরাচর বাংলাদেশের নির্বাচনে মুখ্য বৈদেশিক প্রভাবক হিসেবে কাজ করে ভারত। তবে, এই প্রথম ভারতের নির্বাচনে বাংলাদেশ প্রভাব রাখতে যাচ্ছে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক সামির দাস বলেন, 'সাধারণত ভারতই সর্বদা বাংলাদেশে একটি বড় নির্বাচনি ইস্যু হিসেবে কাজ করে। কিন্তু এবার, ক্ষমতাসীন বিজেপি বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসীদের নির্বাচনের এক মুখ্য হাতিয়ার বানিয়েছে।'

ছয় সপ্তাহের দীর্ঘ জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) আপডেটকে ব্যাপক প্রাধান্য দিয়েছে বিজেপি। আসামে আঞ্চলিক দলগুলো বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা ছড়াচ্ছে।

এছাড়াও মোদীর দল, দুই বাংলাদেশি অভিনেতাকে লক্ষ্য করে এক সমস্যা তৈরি করেছে, যার মধ্যে একজন তার ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণের পরেও ভারতে অবস্থান করছিল। এই অভিনেতা পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক সমাবেশে যোগদান করেছিল, পরে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।

ভারতের বেশ কয়েকটা চলচ্চিত্র ও সোপ অপেরায় অভিনয় করা ফেরদৌস আহমেদ এবং আবদুস নূরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, 'নূরের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণের পরেও ভারতে অবস্থান করা এটাই প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশিদের এখানে আসতে এবং অবৈধভাবে থাকা কতটা সহজ।'

বিজেপির বর্ণবাদ এশিয়ার দ্রুততম ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। নিয়মিত ভারতে সফর করা মোহাম্মদ হানিফ নামের বাংলাদেশি এক গার্মেন্ট মালিক বলেন, 'ভারতীয় রাজনীতিবিদরা আমাদের জনগণকে 'ঘুণপোকা' বলে কলুষিত করার পরেও কীভাবে আশা করে আমরা বন্ধু হব?' ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলি চালু করে দেখেন কীভাবে আমার দেশের বিরুদ্ধে কিছু ভারতীয় রাজনীতিবিদ বিষাক্ত বার্তা ছড়াচ্ছে।'

বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে প্রো-ভারতীয় হিসাবেই দেখা হয় তবে, দলটির অনেক রাজনীতিবিদকেই বিজেপি নিয়ে চিন্তিত হতে দেখা গিয়েছে। বিজেপির বাংলাদেশ বিরোধী মনোভাব দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলেই তারা আশঙ্কা করছে।।

ওডি/কেএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড