মোদী চমকে এনডিএ-৩৫০, রাহুলের কংগ্রেস ৫৩

প্রায় ১৩৪ কোটির ভারত আবারও নরেন্দ্র দামোদর দাসের হাতেই। ভোটগণনায় স্পষ্ট, দ্বিতীয়বারের জন্য একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রে সরকার গঠন করছে টিম মোদী। আর সেই সঙ্গেই ইতিহাসে ঢুকে পড়লেন মোদী। দেশের ইতিহাসে মোদীই হতে চলেছেন তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি পর পর দু’বার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী হলেন।

এর অর্থ হচ্ছে কোনও জোট বা শরিক দলের সাহায্য ছাড়াই সরকার গঠনের জন্য ম্যাজিক ফিগার ছাড়িয়ে গেল কোনও দল। এর আগে জওহরলাল নেহরু পর পর তিন বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন কংগ্রেসের হয়ে। ১৯৬৭ এবং ১৯৭২ সালে পর পর দু’বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধীও। এই দু'বারও একাই ম্যাজিক ফিগার পেরিয়ে গিয়েছিল কংগ্রেস।

এবার বিজেপি ঝড়ে বেসামাল হিন্দি বলয় থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার-ওড়িশা, এমনকি উত্তর-পূর্বও। একক ভাবে বিজেপি আগের বারের ২৮২ টপকে যাওয়ার মুখে। ৩০০ আসন পার করার ইঙ্গিত এনডিএ জোটের। উল্টো দিকে বিরোধী শিবিরে শুধুই হতাশা। ভোট গণনার প্রবণতায় স্পষ্ট ইঙ্গিত, কংগ্রেসের আসন সংখ্যা বাড়লেও সরকার গঠনের ধারে-কাছে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই ইউপিএ জোটের। চন্দ্রবাবু নায়ডু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মায়বতী-অখিলেশরা যে জোট গড়ার চেষ্টায় ছিলেন, নিজেদের রাজ্যেই শোচনীয় ফল তাঁদের। পশ্চিমবঙ্গে এক ধাক্কায় আসন বাড়ছে বিজেপির। উত্তরপ্রদেশেও বিজেপি ৫০টির কাছাকাছি আসন পেতে পারে বলে ইঙ্গিত। অন্ধ্রে ব্যাপক উত্থান ওয়াইএসআরসিপির।

ভোটের ফলের আভাস মিলতেই সেনসেক্সে ফের সোনার দৌড়। নতুন উচ্চতায় পৌঁছে প্রথম বার ৪০ হাজারের ঘরে পৌঁছে গেল মুম্বই শেয়ার সূচক। তাল মিলিয়ে রেকর্ড উত্থান নিফটিরও। এক সময় ১০০০ পয়েন্ট উপরে উঠে যায় সেনসেক্স। তবে বেলা বাড়তে কিছুটা নীচে নেমেছে সেনসেক্স ও নিফটি।

বিরোধীদের কাছে কার্যত তুরুপের তাস ছিল উত্তরপ্রদেশ। কারণ, আসন সংখ্যার নিরিখে দেশটির মধ্যে সবচেয়ে বড় ওই রাজ্যে দীর্ঘদিন বাদে দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি বহুজন সমাজ পার্টি এবং সমাজবাদী পার্টি এক হয়ে ভোটে লড়েছে। সঙ্গে ছিল অজিত সিংহের আরএলডি-ও। কিন্তু তাতেও ফল আশানুরূপ নয় বললেই চলে। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপির ৭১টি থেকে আসন কমলেও ৫০ এর কাছাকাছি থাকার সম্ভাবনা। জোটের ঝুলিতে যেতে পারে ২৫টির মতো আসন।

বিরোধী জোটের অগ্রগণ্য মুখ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ রাজ্যে ব্যাপক আসন কমছে তৃণমূলের। সেই জায়গায় উঠে আসছে বিজেপি। বিজেপি ১৫টিরও বেশি আসন পেতে পারে বলে গণনার প্রবণতায় ইঙ্গিত। ওড়িশাতেও বিজু জনতা দলকে বিরাট ধাক্কা দিয়ে ব্যাপক ভাল ফলের প্রবণতা বিজেপির।

কয়েক মাস আগেই মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তীসগড়ের বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে সরিয়ে ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। বিরোধী শিবিরের আশা ছিল, এই তিন রাজ্যে বিজেপির ফল ব্যাপক খারাপ হবে। কিন্তু তিন রাজ্যে কার্যত ২০১৪ সালের ফলের চেয়ে খুব একটা হেরফের হওয়ার প্রবণতা নেই। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে বিহারে বিজেপি-জেডিইউ-আরএলএসপির জোট কার্যত বিরোধীদের সাফ করে দেওয়ার পথে। ঝাড়খণ্ডেও প্রায় একই অবস্থা। উত্তর-পূর্বে বিজেপির ফল ভাল ছিলই। সেই প্রবণতা এ বারও বজায় রয়েছে। 'আনন্দবাজার'