• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান

রাস্তার রুটি বিক্রেতা থেকে তুর্কি নেতা হওয়ার নাটকীয় জীবন

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০২ মে ২০১৯, ১৭:৪৫
রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান
ইস্তানবুলের রাস্তায় লেমোনেড ও তিলের রুটি বিক্রি করতেন, ছিলেন মেধাবী ফুটবালরও, সেখান থেকে এখন বিশ্বের প্রভাবশালী নেতা রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। ছবি : সংগৃহীত

ইউরেশিয়ান দেশ তুরস্কের ইস্তানবুলের কাসিমপাসা কোয়ার্টারে কোস্টগার্ড পিতার ঘরে ২৬শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪ সালে জন্ম, শৈশবে ছিলনা তেমন কোন আর্থিক স্বচ্ছলতা। কৈশরে রাস্তায় লেমোনেড ও তিলের রুটি বিক্রি করেছেন, ছিলেন একজন মেধাবী ফুটবলার, ডাক ও পেয়েছিলেন তুরস্কের প্রধান সারির ক্লাব থেকে, পিতার অমতে আর সেদিকে যাওয়া হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়েই জড়িত হন রাজনীতিতে, ছিলেন স্কুলের ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বেও, তৎকালীন ন্যাশনাল স্যালভেশন পার্টির নেতা নেসেমেট্টিন এরবাকানের শিক্ষায় অনুপ্রণিত হয়ে যোগ দিয়েছিলেন সেই দলে। ১৯৭৬ সালে দলটির ইস্তানবুল যুব শাখার প্রধান হন, তবে সেই পদ আর বেশি দিন টেকেনি, ১৯৮০ সালে তুরস্কের সামরিক শাসনের প্রভাবে বিলীন হয়ে যায় রাজনৈতিক দলটি।

১৯৮১ সালে মারমারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও প্রশাসনিক বিজ্ঞান অনুষদ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে বেসরকারি সেক্টরে চাকরি নেয়। ব্যবস্থাপক থেকে হিসাব রক্ষক দায়িত্ব পালন করলেও রাজনীতি থেকে বেশিদিন দূরে রাখতে পারেনি নিজেকে, ফের ফিরে যান রাজনীতির ময়দানে। সেই থেকে শুরু করে তুরস্কের বর্তমান রাষ্ট্রপতির পদে থেকে মুসলিম বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইস্তানবুলে বেড়ে ওঠা রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান।

ছবি : সংগৃহীত

১৯৯৪ সালে ইস্তানবুলের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হন এরদোয়ান। দায়িত্ব গ্রহণ করেই শহরের মানুষদের কাছে তার ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হতে শুরু করে শহরের ক্যাফেগুলোতে মদ নিষিদ্ধ করার মাধ্যমেই। একই সঙ্গে খুব দক্ষতার সঙ্গে শহরের পানিসংকট নিরসন করেন, কমিয়ে আনেন পরিবেশ দূষনের মাত্রা, উন্নত করেন অবকাঠামো এবং দেশটির রাজধানীকে আধুনিকায়ন করে জনপ্রিয় নেতা হয়ে ওঠেন এরদোয়ান।

তবে, এতটা মসৃণ ছিল না তার রাজনৈতিক জীবন, ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে ইসলামের জয়গান গেয়ে একটি কবিতা আবৃতির ফলে দেশটির ধর্ম-নিরপেক্ষ অবস্থায় আঘাত দেন। যার ফলে মেয়র পদ ছাড়তে বাধ্য হন, তার বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং ১৯৯৯ সালে তাকে ৪ মাস কাটাতে হয় কারাগারে।

২০০১ সালে জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) গঠন করেন, যা ২০০২ সালের সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে। রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে, সংবিধানে পরিবর্তন এনে ২০০৩ সালের ৯ই মার্চ তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এরদোয়ান। এরপর আরও দুই মেয়াদে সফলভাবে প্রধানমন্ত্রীর পদে পুননির্বাচিত হন।

ছবি : সংগৃহীত

তার শাসনামলে দেশটির অর্থনীতিকে তিনি নিয়ে যান শক্তিশালী এক অবস্থায়, অর্জন করেন বৈদশিক বিনিয়োগ এবং দেশটির মাথাপিছু আয় বাড়াতেও তিনি যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ধীরে ধীরে মুসলিম বিশ্বের কাছে নিজেকে এক আশ্রয়স্থল বানিয়ে ফেলেন এবং একই সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গেও তুরস্কের সম্পর্কোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

তবে, এসব উন্নতিকে ছাপিয়ে অনেকের কাছে তিনি একজন স্বৈরশাসক হিসেবেও পরিচিত হতে শুরু করেন, দেশটির সামরিক বাহিনীতে তার বিরুদ্ধ শক্তিরা জোট বেঁধে তার দলকে ক্ষমতা থেকে ছুঁড়ে ফেলার পরিকল্পনাও করেন। ২০১৩ সালে অনেক সামরিক কর্মকর্তাকে তিনি ষড়যন্ত্রের অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

তুরস্কের সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের সীমায় পৌছালে তিনি একেপি'র হয়ে সরাসরি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হন। অংশ নেন দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে এবং ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট প্রেসিডেন্ট এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের চিত্র। ছবি : সংগৃহীত

এরদোয়ানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ একদিক থেকে বাড়তে থাকে, ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই রাতে তার বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয় যখন তিনি স্ব-পরিবারে ছুটি কাটাচ্ছিলেন। তার হোটেলেও অভিযান চালায় যদিও তিনি অক্ষত অবস্থায় সেখান থেকে ইস্তানবুলে পালাতে সক্ষম হন। সেসময়ে তিনি ফেইসটাইম নামক ভিডিও চ্যাট গ্রুপে তার সমর্থকদের কাছে বিপথগামী সেনাদের ঠেকাতে আহ্বান জানান। তুরস্কের সরকারি কর্মকর্তাদের নিকট তুমুল জনপ্রিয় এই নেতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয় তুর্কি জনগন। সেই বিক্ষোভে প্রাণ হারায় ৪০০, আহত হয় ১৪০০ জনের বেশি।

২০১৮ সালে এরদোয়ান দেশটির রাষ্ট্রপতি হিসেবে পুননির্বাচিত হন, এরই মধ্যে বিশ্বে তিনি হয়ে ওঠেন মুসলিম সম্প্রদায়ের অঘোষিত নেতা। জর্ডান ভিত্তিক ‘রয়্যাল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার’ বিশ্বের ৫০০ জন মুসলিম প্রভাবশালীর তালিকা প্রকাশ করে। ২০১৯ সংস্করণের এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন এরদোয়ান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড