আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভিয়েতনামের হ্যানয় শহরে অনুষ্ঠিত হয় ট্রাম্প-কিম সম্মেলন। ঐ সম্মেলনে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন মার্কিনদের প্রতি বিশ্বাস বা আস্থা রাখতে না পারার অভিযোগ করেছেন বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি। 'আল-জাজিরা'
কিম-পুতিনের বৈঠকে এমন চাঞ্চল্যকর কথা বলেছেন কিম জং উন। কিম আরও বলেন কোরিয়ার পেনিনসুলা ইস্যুতে শান্তি ফিরিয়ে আনা পুরোপুরি নির্ভর করতে পারত ওয়াশিংটনের ওপর। তবে মার্কিনদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার ফলাফল খুবই বাজে হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ট্রাম্প-কিমের হ্যানয় সম্মেলন কোনো চুক্তি ছাড়াই হঠাৎ শেষ হয়েছিল। তাই এই সম্মেলন ফলপ্রসূ হয় নি। এই বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, উত্তর কোরিয়ার মূল চাওয়া ছিল ঐ দেশের ওপর মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া যা মার্কিন কুটনৈতিক দলটিকে ঐ সম্মেলনে ইস্তফা দিতে বাধ্য করেছিল। তবে উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তারা এই অভিযোগের বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) কিম-পুতিন বৈঠকে কিম জং উন বলেন, কোরিয়ার পেনিনসুলাসহ পুরো অঞ্চলের অবস্থা এখন অচল ও সংকটপূর্ন। কিমের এমন বক্তব্য দিয়ে তথ্য প্রকাশ করেছে উত্তর কোরিয়ার সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি ।
ট্রাম্প-কিমের হ্যানয় সম্মেলন নিয়ে কিম আরও বলেন, মার্কিনদের এক তরফা বিরূপ বিশ্বাস মনোভাবের কারণে এই সংকটময় অবস্থার কোনো উন্নতি সম্ভব হয়নি।
'কোরিয়ার পেনিনসুলার শান্তি ও নিরাপত্তা নির্ভর করবে আমেরিকার ভবিষ্যত মনোভাবের ওপর এবং উত্তর কোরিয়া তার প্রয়োজন মত সকল অবস্থার ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত' কিম জং উনের এমন বক্তব্য প্রকাশ করেছে কোরিয়ার গণমাধ্যম কেসিএনএ ।
পেনিনসুলা ইস্যুতে জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য ইতোমধ্যে আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। রাশিয়া পিয়ংইয়ং পারমানবিক ইস্যুতে কোরিয়াকে সাহায্য করছে বলে অভিযোগ তুলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে এসব পদক্ষেপ নিয়ে করা অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া।
মাত্র এক সপ্তাহ আগে পিয়ংইয়ং কর্তৃক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট মাইক পাম্পোকে পরমাণু বিষয়ে আলোচনা স্থগিত ও তার পদ থেকে অপসারণের জন্য দাবি জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার কিম-পুতিন বৈঠকে পুতিন একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেন, ওয়াশিংটনের মতো মস্কো কোরিয়ার উপদ্বীপে উত্তেজনা কমাতে এবং পারমাণবিক দ্বন্দ্ব প্রতিরোধের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছে।
ভ্লাদিমির পুতিন এই বিষয়ে আরও জোর দিয়ে বলেন, এক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়ার কিছু বিষয়ে নিশ্চয়তার প্রয়োজন রয়েছে। কোরিয়ার নিরাপত্তা এবং এর সার্বভৌমত্ব রক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়ার বিষয়গুলো এখানে রয়েছে। পুতিন আরও বলেন, 'আমাদের এমন একটা রাজ্যে ফিরতে হবে যেখানে শক্তিশালীদের চাপিয়ে দেওয়া আইন নয় বরং আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা বিশ্বের বিভিন্ন পরিস্থিতি নির্ধারণ করা হবে।'
বিশেষজ্ঞদের মতে , কিমের রাশিয়া সফরের আসল উদ্দেশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিচলিত করা। রাশিয়া-উত্তর কোরিয়ার এই সম্মেলন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি অনুস্মারক। এই সম্মেলন এটাই প্রকাশ করছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও উত্তর কোরিয়ার জন্য অন্য আরো সুযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যদি নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোনো ধরনের জোর খাটানোর চেষ্টা করে তবে রাশিয়া কোরিয়ার বোগিম্যান হিসেবে কাজ করবে।
পিয়ংইয়ংয়ের পারমানবিক বিষয়ে যে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে সে ব্যাপারে রাশিয়ার সাহায্য চেয়েছেন কিম জং উন। আর পুতিন এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ব দরবারে আবারও মস্কোকে প্লেয়িং গ্রাউন্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ও বিশ্ব রাজনীতিতে রাশিয়ান প্রভাব বিস্তার করতে চাইছেন।
মস্কোর আঞ্চলিক সংস্থার পরিচালক দিমিত্রি যুহুরালাভ আল-জাজিরাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিরূপ মনোভাব প্রকাশের জন্য এটি উত্তর কোরিয়ার একটি বিশাল সুযোগ। রাশিয়ার সাথে আঁতাত করে যে কোনো সমস্যা মোকাবেলা করারও ক্ষমতা আছে উত্তর কোরিয়ার এটা বুঝাতে এই সম্মেলন কিমের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল।
কারণ এখনো জাতিসংঘের যে কোনো ইস্যুতে ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন ৫টি দেশের মধ্যে রাশিয়া একটি এবং উত্তর কোরিয়ার যে কোনো সমস্যায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে রাশিয়া। এছাড়াও কোরিয়া-রাশিয়া সীমান্ত ভাগাভাগির বিষয় এবং বর্তমানে রাশিয়ায় ১০ হাজার কোরিয়ান কর্মী কর্মরত আছে যাদের বাৎসরিক রেভিনিউ মিলিয়ন মিলিয়ন ইউএস ডলার। বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার অন্যতম প্রধান সমস্যা দেশটির খাদ্যে ঘাটতি। এই সমস্যা সমাধানের জন্যেও এই বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। রাশিয়া এই সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়াও গত মাসে উত্তর কোরিয়ার চংজিন পোর্টে ২ হাজার টন গম পাঠিয়েছে রাশিয়া। এসব কারণেও রাশিয়াকে পাশে পেতে চাইছে কিম জং উন।
তবে রাশিয়া কখনোই চাইবে না তার প্রতিবেশী কোনো রাষ্ট্র পারমানবিক শক্তিধর হয়ে রাশিয়ার জন্য হুমকি কারণ হোক। তবে রাশিয়ার উদ্দেশ্য মার্কিনিদের মতো নয়। রাশিয়ার উদ্দেশ্য কোরিয়াকে নিরস্ত্রীকরণ করা নয় বরং কোরিয়ার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করা যাতে কোনো কারণে কিম জং উনের শাসনের অবসান ঘটলে দুই কোরিয়ার সহযোগিতায় মার্কিন সামরিক বাহিনী প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজস্ব শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে না পারে।
বৈঠকের বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের পুতিন বলেন, এই বৈঠকে কোনো গোপনীয়তা বা ষড়যন্ত্রের কিছু নেই...সম্মেলনে যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা সবই ওয়াশিংটনকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন কিম জং উন।
গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে কিম জং উনের হ্যানয় বৈঠকের পর এই প্রথম বিদেশ সফরে যান কিম। ২০১৮ সালের মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত চীন, দক্ষিন কোরিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সাথে বৈঠক করেছেন কিম জং উন।
এই সম্মেলনের পূর্বে দুই দেশের প্রতিনিধিদের থেকে সংক্ষেপে বলা হয়েছিল এই সম্মেলন রাশিয়া-উত্তর কোরিয়ার ভেঙে পড়া সম্পর্ক উন্নয়ন করবে যেমনটা রাশিয়ার সাথে কিমের প্রপিতামহ দ্বিতীয় কিম সাংয়ের ছিল।
ওডি/কেএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড