• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৪০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বাড়ি-বাড়ি হামলা চালাচ্ছে লঙ্কানরা, পালাচ্ছে শতশত মুসলিম

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৬ এপ্রিল ২০১৯, ০২:০৪
শ্রীলঙ্কায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা
শ্রীলঙ্কায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আশঙ্কায় নিজেদের বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন মুসলিমরা। (ছবিসূত্র : দ্য সানডে টাইমস)

শ্রীলঙ্কার বেশ কয়েকটি গীর্জা-হোটেলে ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলার পর বন্দর নগরী নেগোম্বো ছেড়ে পালাচ্ছেন দেশটির শতাধিক মুসলিম। ইস্টার সানডে উদযাপনের সময় চালানো সেই হামলার পর আরও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আশঙ্কায় ইতোমধ্যে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন প্রায় আট শতাধিক বাসিন্দা।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়, রবিবার (২১ এপ্রিল) ইস্টার সানডের সকালে কলম্বোর তিনটি গীর্জা ও আরও তিনটি বিলাসবহুল হোটেলে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়েছিল মধ্যপ্রাচ্য-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সদস্যরা। এতে এখন পর্যন্ত ২৫৩ জন নিহত ও আরও কমপক্ষে পাঁচ শতাধিক আহত হন। যদিও প্রথমে ৩৫৯ জন নিহতের কথা স্বীকার করেছিল কর্তৃপক্ষ।

প্রায় ১০ বছর আগে শ্রীলঙ্কায় হিন্দু এবং জাতিগত তামিলদের বিরুদ্ধে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। পরবর্তীতে যদিও দীর্ঘদিন চলার পর এর অবসান ঘটানো হয়। তবে ভয়াবহ সেই অচলবস্থার পর এবারই প্রথম দেশটিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার শঙ্কা দেখা দেয়।

রাজধানী কলম্বো থেকে প্রায় ঘণ্টা খানেক দূরের শহর নেগোম্বোর সেবাস্তিয়ান গীর্জায় রবিবারের সেই বিস্ফোরণে একসঙ্গে প্রায় শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়। ভয়াবহ এই হামলার পর ইতোমধ্যে শহরটি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গেছেন সেখানকার প্রায় আট শতাধিক মুসলিম। তবে তাদের বর্তমান আশ্রিত এলাকার নাম প্রতিবেদনে প্রকাশ করেনি সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

শ্রীলঙ্কায় হামলা

শ্রীলঙ্কায় হামলার শিকার মুসলিম নাগরিকদের ঘর-বাড়ি। (ছবিসূত্র : দ্য টেলো)

বর্তমানে সেই এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তা কর্মীর উপস্থিতি দেখা গেছে। বাহির থেকে আশ্রয় নেওয়া এসব মুসলমানদের সেখান থেকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে এরইমধ্যে বিক্ষোভ শুরু করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এদিকে প্রাদেশিক পরিষদের একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য ব্রিটেন-ভিত্তিক এই সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, ‘এসব মানুষকে অবশ্যই এখনোই এই অঞ্চল থেকে সরিয়ে নিতে হবে। আমরা কখনোই তাদের চাই না।’

এ দিন আশ্রয় নেওয়া এসব মুসলিমদের সেই এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে করা বিক্ষোভের পাশাপাশি অসংখ্য পোস্টারও টানাতে দেখা যায়। যেখানে লেখা রয়েছে, ‘পাকিস্তান থেকে আগত শরণার্থীদের আমাদের আর কোনো প্রয়োজন নেই।’ যদিও পুলিশের দাবি, এসব শরণার্থীদের নিরাপদে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার আগে তাদের এখানেই আরও কয়েকটা দিন কাটাতে হবে।

শ্রীলঙ্কায় বর্তমানে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ রয়েছে। যার মধ্যে সংখ্যালঘু খ্রিস্টান, মুসলিম এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক রয়েছে অসংখ্য। তবে বর্তমানে দেশটিতে চলমান জাতিগত দাঙ্গার কারণে যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে; তা ইতোমধ্যে এড়িয়ে চলতে সক্ষম হয়েছেন সেখানকার খ্রিস্টান বাসিন্দারা।

শ্রীলঙ্কায় হামলা

শ্রীলঙ্কায় মুসলিম নাগরিকদের উপর হামলার আশঙ্কায় সড়কে প্রশাসন কর্মকর্তাদের শক্ত অবস্থান। (ছবিসূত্র : দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস)

যদিও সরকারি এক কর্মকর্তার দাবি, প্রশাসন থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দেশের সকল গীর্জা বন্ধ রাখতে হবে। এ বিষয়ে দেশটির জ্যেষ্ঠ এক যাজক ফরাসী বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের সকল গীর্জা আপাতত বন্ধ থাকবে। এ সময়ের মধ্যে সেখানে আর কোনো প্রার্থনা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে না।’

অপরদিকে নেগোম্বো শহরের খ্রিস্টানদের সেবাস্তিয়ান গীর্জায় আত্মঘাতী বোমা হামলার পর থেকে সেই এলাকায় বসবাসরত মুসলিমদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। যে কারণে গত বুধবার (২৪ এপ্রিল) কলম্বোর নিকটবর্তী সেই বন্দরনগরীটি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়েছেন বেশকিছু মুসলিম পরিবার। এতে বাসে চেপে এক রকম গাদাগাদি করেই এলাকা ছাড়ছেন তারা।

এলাকা ত্যাগের সময় পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আদনান আলী নামে এক তরুণ লন্ডন-ভিত্তিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছিলেন, ‘সন্ত্রাসীদের চালানো বেশ কয়েকটি বোমা হামলা ও বিস্ফোরণের পর শ্রীলঙ্কান জনগণ আমাদের ঘর-বাড়িতে বারংবার হামলা চালাচ্ছে। যে কারণে আমি ও আমার পরিবার নিজেদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যাচ্ছি।’

আরও পড়ুন :- মোবাইল টাওয়ারের ক্ষতিকর দিক জানতে চান আদালত

আদনান আলী নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় আছেন জানিয়ে তিনি এও বলেছেন, ‘জানিনা আমাদের ভবিষ্যৎ কি, তবে ধর্মের নাম নিয়ে সন্ত্রাসীদের চালানো এমন নির্মম হামলা বিশ্বের কোনো লোকই মেনে নিবে না।’

ওডি/কেএইচআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড