• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মোদীর গত পাঁচ বছরের আর্থিক আমলনামা

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৬ এপ্রিল ২০১৯, ১৬:৪৪
নরেন্দ্র মোদী
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। (ছবিসূত্র : দ্য ইন্ডিয়া টুডে)

ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া এক বক্তৃতায় দৃঢ়তার সঙ্গে উচ্চারণ করেছেন যে, ‘২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম জনবহুল গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের অর্থনীতি আমেরিকা ও চীনের পেছনে থাকবে। যার মানে তখন অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারতীয়রা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশে উন্নীত হবে।’

গত ৬ এপ্রিল দেওয়া সেই বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘ভারতের অর্থনীতির আকার তখন প্রায় ২৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে প্রায় ১০ ট্রিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পাবে।’ যদিও জেটলির সেই ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন সরকারের গত পাঁচ বছরের সাফল্যের তথ্য খুবই কম মাত্রায় উত্থাপন করা ছিল।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, এরই মধ্যে গত ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে গেছে দেশটির লোকসভা নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে থাকা ডানপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) দ্বিতীয় মেয়াদে পুনরায় পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হবে কিনা; এখন তা নিয়েই দেশব্যাপী শুরু হয়ে গেছে দৌড়ঝাঁপ।

এদিকে জেটলির সেই বক্তব্যের পর ক্ষমতাসীন দল বিজেপি তাদের নির্বাচনি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেছে। যেখানে ভারতের শক্ত অবকাঠামো (সড়ক, রেলপথ, সেতু এবং বিমানবন্দর), কৃষকদের জন্য একটি কল্যাণ বোর্ডের সম্প্রসারণ, ব্যবসায়ীদের জন্য কল্যাণ বোর্ডের সম্প্রসারণ, পণ্য সহজীকরণসহ নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সেবা (জিএসটি) শাসন, নিম্ন আয়কর, ছোট প্রতিষ্ঠানের জন্য মেডিকেল ইন্সটিটিউট এবং প্রযুক্তি কেন্দ্র স্থাপনের প্রতিশ্রুতিও এসেছে তাদের সেই নির্বাচনি ঘোষণাপত্রে।

যদিও বিজেপির এই নির্বাচনি ঘোষণাপত্র প্রকাশের প্রায় দিন কয়েক আগে বিরোধী দল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস তাদের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেছিল। যেখানে হাইলাইট করা ছিল দেশের দরিদ্রতম পঞ্চমাংশ পরিবারের জন্য আয় সহায়তার জন্য একটি গ্রামীণ প্রকল্প প্রণয়ন। এবার দেখা যাক কোন দিকে হাঁটতে চায় জনগণ।

কাজের সঙ্কট

এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় বছরে ১০ থেকে ২০ লাখ বেকারকে চাকরি প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। যদিও তাদের সেই আশ্বাসে আস্থা রেখেছিল ভারতের জনগণ। যদিও এই ক্ষমতা গ্রহণের পর মোদী তার দলের সেই প্রতিশ্রুতি সম্পূর্ণ পূরণ করতে পারেনি বলে দাবি দেশটির বিরোধী রাজনৈতিকদের।

এমনকি বিজেপির মুখপাত্র গোপাল আগরওয়াল নিজে স্বীকার করেছেন যে, ‘বর্তমানে শতভাগ চাকরির সুযোগ দেওয়ার জন্য এখনো আমাদের অনেক কিছু বাকি আছে।’

od

ভারতের কাঁচা বাজার। (ছবিসূত্র : দ্য বিজনেস টুডে)

তিনি বলেছেন, ‘যুবকদের জন্য চাকরির সুযোগ তৈরি করতে আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আমরা সরকারি সংস্থাগুলোর বিনিয়োগে মনোযোগ দিয়েছি। এখন আমাদের ব্যক্তিগত বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সিস্টেমের তরলতা বৃদ্ধি করে ভোক্তা চাহিদা তৈরি করতে হবে।’

যদিও দেশটির বর্তমান চাকরির তথ্য নিয়ে এখনও যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। তাছাড়া এই চাকরি সংক্রান্ত তথ্য গোপন করার অভিযোগে ইতোমধ্যে সরকারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যমের বরাতে আল-জাজিরা জানায়, ভারতে বর্তমানে বেকারত্বের হার ৬.১ শতাংশে পৌঁছেছে।

তাছাড়া গত পাঁচ বছরের মধ্যে আনুমানিক ২ কোটি তরুণ এই চাকরির বাজার থেকে বাদ পড়েছে। যে কারণে এটিকে দেশের অর্থনীতির ওপর অন্যতম ধাক্কা বলে অবহিত করছে ভারতীয় বিশ্লেষকরা। কেননা এটি একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই ২৬ বছরের কম।

তবুও বিজেপির মুখপাত্র আগরওয়াল বিশ্বাস করেন যে, মোদী সরকারকে এখন অবশ্যই অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে প্রধান সাফল্য অর্জন করতে হবে।

বিজেপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘২০১৪ সালে যখন আমরা ক্ষমতায় আসি, তখন ভারতীয় অর্থনীতি ভীষণ খারাপ অবস্থায় ছিল; মুদ্রাস্ফীতি ছিল দ্বিগুণ, রাজস্ব ঘাটতি মোটামুটি গার্হস্থ্য পণ্য (জিডিপি) ছিল ৪.৫ শতাংশ। তখন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ খুব আরামদায়ক অবস্থাতে ছিল না। এমনকি আমরা সরাসরি পর্যাপ্ত বিদেশি বিনিয়োগ পাচ্ছিলাম না। এ সমস্ত গণনার ভিত্তিতে আমরা আজকে আরও ভাল অবস্থাতে আছি।’

‘আমরা সমস্যায় প্রযুক্তি-চালিত সমাধান শুরু করেছি; ছোট উদ্যোক্তাদের নানা কাজে উৎসাহিত করছি এবং জনগণকে কৃষি ও আনুষ্ঠানিক খাত থেকে সরাতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’

দেশটির কিছু অর্থনীতিবিদ স্বীকার করেছেন যে, গত পাঁচ বছরে ভারতীয় অর্থনীতির ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে মুদ্রাস্ফীতির হার ভীষণ কম হয়েছে।

তেল নির্ভরশীল

ভারত তার চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ পূরণের জন্য আমদানি করা অপরিশোধিত তেলের উপর নির্ভরশীল। দেশটির মোট তেল আমদানি প্রায় এক তৃতীয়াংশ সেখানকার মুদ্রাস্ফীতির পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতির হারকে প্রভাবিত করে।

এ বিষয়ে দেশটির অর্থনীতিবিদ এবং বর্তমানে নিষ্ক্রিয় পরিকল্পনা কমিশনের প্রাক্তন সদস্য অভিজিত সেন বলেন, ‘অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সরকারের কর্মক্ষমতা বেশ খারাপ হয়েছে; যদি আপনি এ বিষয়টি বিবেচনা করেন যে গত পাঁচ বছরে দেশটি কম ক্রুয়েড তেলের দামের কারণে দুই শতাংশেরও কম পরিমাণে ব্যাপক ঘূর্ণিঝড় থেকে উপকৃত হয়েছে।’

ভারতীয় এই অর্থনীতিবিদ বিশ্বাস করেন যে, কম তেলের দাম মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। পেমেন্টের বাহ্যিক ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং নিশ্চিত করে যে সরকারের আর্থিক অবস্থা; যার মধ্যে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্ব ঘাটতিগুলো হ্রাস পায়নি।

od

ভারতের কারখানায় কর্মরত শ্রমিক। (ছবিসূত্র : আল-জাজিরা)

তিনি বলেছেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল বিশ্বাসযোগ্য। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করেছে যে, ভালো ছিল না। বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দাম গত বছর যে হারে বেড়েছে; সেই হারে আমাদের মুদ্রাস্ফীতির হারও লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে।’

ক্ষমতায় আসার পর, মোদী সরকার দেশের দরিদ্র পরিবারের নারীদের বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার দিতে এবং সরাসরি ভর্তুকির জন্য সরকারি ভর্তুকির সুবিধাগুলো হস্তান্তর করার জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য একটি প্রোগ্রামসহ বেশকিছু কল্যাণমূলক প্রকল্প চালু করেছিল।

ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে গৃহীত ঋণের অভাবে প্রদত্ত সংস্থাগুলো আর্থিকভাবে জোর দেওয়া সম্পদের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান করার জন্য সম্পূর্ণ দেউলিয়া অবস্থা স্থাপন করা হয়েছিল।

জিএসটি

ইউনিফায়েড গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্সের (জিএসটি) ওপর আন্দোলন। যা ভারতের জটিল এবং নোংরা পরোক্ষ ট্যাক্স শাসনকে ২৯টি রাজ্য এবং সাতটি ফেডারেল-প্রশাসিত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিয়েছে।

২০১৬ সালে দেশের মুদ্রার প্রায় ৮৬ শতাংশ নিষিদ্ধ করার অভূতপূর্ব আইনের কারণে জিএসটি রোলিং-আউটের সুবিধাজনক প্রভাবটি অনুভূত হওয়ার পক্ষে যুক্তি-যুক্তভাবে আরও গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল।

প্রধানমন্ত্রী মোদী দাবি করেছেন, ‘এই হুমকির সিদ্ধান্ত অবৈধ অর্থ বা কালো টাকাকে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সরকারি রেকর্ডগুলোতে বিবেচিত হবে না। আমাদের অর্থনীতিতে এবং সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করার ক্ষেত্রে এই জাল মুদ্রাগুলো ব্যবহার করতে হবে।’

অন্যদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই মোদী সরকারের পদক্ষেপটিকে সংগঠিত লুট এবং বৈধ লুণ্ঠনের একটি আইন বলে বর্ণনা করেছেন।

অর্থনীতিবিদ সেন দাবি করেছেন, ‘ডেমোনেটেসেশন দেশের অর্থনীতির ৯০ শতাংশেরও বেশি লোকের চাকরি তৈরির সম্ভাব্যতাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এটি ভীষণ খারাপভাবে উপলক্ষিত হয়েছে।’ যদিও সমালোচকদের দাবি, দেশের অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশের বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস পেয়েছে, কারণ সরকারকে চোরাচালানের চেষ্টা করছে।’

মুম্বাইয়ের ইন্দিরা গান্ধী ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট রিসার্চের অধ্যাপক এবং অর্থনীতিবিদ আর নগরজ দাবি করেছেন, ‘চলতি আর্থিক বছরে জিডিপি বৃদ্ধি ৮ শতাংশের পরিবর্তে দুই শতাংশ কমতে পারে।’

কৃষি খাতের দুর্বল কর্মক্ষমতা

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক সুরজিৎ মজুমদার বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে অর্থনীতি খারাপভাবে দেখছে। জাতীয় হিসাব পরিসংখ্যানের অন্যান্য কাঠামোগুলোসহ জিডিপি বৃদ্ধির পরিসংখ্যান ব্যতীত প্রায় সব তথ্যের ভেতর বৈষম্য ছিল।’

তিনি বলেন, ‘কৃষি খাত, উৎপাদন এবং নির্মাণ, বিনিয়োগ, বৈদেশিক বাণিজ্য, ব্যাংকের ঋণ, মজুরি, সরকারি রাজস্বসহ এগুলোর সকল প্রবণতাগুলো অত্যন্ত অলস অর্থনীতির স্পষ্ট লক্ষণ প্রদর্শন করে যা অনেকগুলো প্রয়োজনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে অক্ষম।’

মজুমদার এও দাবি করেছেন, ‘এই বিষয়টি বিস্ময়কর নয় যে মোদী সরকার ধারাবাহিকভাবে রাজস্ব একীকরণ এবং ঘাটতি হ্রাসের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। যা অর্থনীতির জন্য কিছু করার পরিবর্তে অর্থনীতি থেকে প্রত্যাহারের বিষয়ে আরও বেশি।’

‘গত পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতি বছর ১ শতাংশেরও কম ফসল উৎপাদনের হারের সঙ্গে কৃষি মর্মে আমাদের কর্মক্ষমতাও বেশ অস্বস্তিকর ছিল।’

এর আগে গত বছরের মার্চ মাসে রাজধানীর দিল্লির রাজপথে হাজার হাজার কৃষক এসে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছিলেন। অদ্ভুতভাবে, মোদী জাতীয়তাবাদ এবং প্রচারণামূলক বক্তৃতা দেশের ঐক্য, তার রাজনৈতিক বিরোধীদের উপর জোর করা হয়েছে।

আরও পড়ুন :- নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রস্তুত ইন্দোনেশিয়া

যুবকদের জন্য চাকরি তৈরিতে ব্যর্থতা, কৃষককে কম ঝুঁকিপূর্ণ, বিক্ষোভের মাধ্যমে অর্থনীতিতে বাধা সৃষ্টি, ব্যাংকগুলির খারাপ ঋণকে বেলুনের অনুমতি দেওয়া এবং ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে ফাঁক বাড়ানোর অনুমতি প্রদানের জন্য বিরোধী দলগুলো হুমকির মুখে পড়েছে।

যদিও প্রত্যক্ষীকরণের পরে আয়কর মূল্যায়ন সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি অনেক অর্থনীতিবিদ বিশ্বাস করেন যে, বড় বড় সিদ্ধান্ত ভারতের জনসংখ্যার দুর্বলতম অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

ওডি/কেএইচআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড