জুবায়ের আহাম্মেদ
রাশিয়ান হ্যাকারদের পরবর্তী লক্ষ্য হতে যাচ্ছে মে মাসে ইউরোপে ন্যাটো সদস্যভুক্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রের জাতীয় নির্বাচন। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমনই দাবি করছে সংবাদ সংস্থা ফায়ারআই। শুধুমাত্র ন্যাটোই না, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সদস্যভুক্ত সকল রাষ্ট্রের নির্বাচনেই পড়তে যাচ্ছে তাদের প্রভাব।
ফায়ারআইয়ের নিজস্ব প্রতিবেদনে করা দাবি অনুযায়ী, রাশিয়ান দুটি হ্যাকার গ্রুপ “এপিটি ওয়ানটুয়েন্টিএইট” এবং “স্যান্ডওয়ার্ম” যারা স্বয়ং রাশিয়ান সরকারেরই সরাসরি সাহায্যে পরিচালিত হচ্ছে তারা এ ধরনের নতুন এক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। গ্রুপ দুইটি ইতোমধ্যেই ইউরোপিয়ান বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে তাদের নিজস্ব ডিজাইনের ইমেইল প্রেরণ করেছে এবং সেসব মেইলের ভাষ্য সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করতে বাধ্য হচ্ছে ইউরোপিয়ান সরকারি দপ্তরগুলো, এমনই দাবি করছে ফায়ারআই।
ফায়ারআইয়ের প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়ান দুই গ্রুপের পক্ষ থেকে পাঠানো ইমেইল বার্তায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত সেসব দেশকে নির্বাচন সম্পর্কে সতকর্তা অবলম্বন করতে নিজস্ব সিকিউরিটি সিস্টেম পরিবর্তন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। আর এতে সাড়া দিতে গিয়েই রাশিয়ান দুই গ্রুপের কাছে বন্দি হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এমন কি রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যবস্থার গোপন তথ্যও এখন “এপিটি ওয়ানটুয়েন্টিএইট” এবং “স্যান্ডওয়ার্ম” এর কাছে আছে বলে আশঙ্কা করছে প্রতিবেদন প্রকাশকারী সংস্থা।
ফ্যান্সি বিয়ার্স নামেই বেশি পরিচিত হ্যাকার গ্রুপ “এপিটি ওয়ানটুয়েন্টিএইট” এর সাথে রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ জিআরইউ এর ব্যাপক সম্পর্ক বেশ আগে থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তার ইস্যুতে প্রধান এক আলোচ্য বিষয় ছিল। ২০১৬ সালের আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশন হ্যাকের ঘটনায় রাশিয়ান সরকার এবং জিআরইউ এর পাশাপাশি ফ্যান্সি বিয়ার্স বা “এপিটি ওয়ানটুয়েন্টিএইট” হ্যাকিং গ্রুপকেই বেশি দায়ী করা হয়ে থাকে। অন্যদিকে “স্যান্ডওয়ার্ম” এর সাথেও রাশিয়ান সরকারের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে। বিগত বছর ইউক্রেনের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঘটে যাওয়া সাইবার হামলা “নটপেটিয়া রনসামওয়্যার এট্যাক” এর জন্য এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দায় আরোপিত হচ্ছে “স্যান্ডওয়ার্ম” এর উপর।
ফায়ারআইয়ের তদন্ত অনুযায়ী দুটি গ্রুপেরই হ্যাকিং কৌশল প্রায় একইরকম এবং তাদের মাঝে পারস্পরিক বেশ কিছু মিল লক্ষ্যণীয়। ফায়ারআইয়ের করা দাবি অনুযায়ী, তারা ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই এই দুই গ্রুপের কার্যক্রমে বেশ একটি গতিময় পরিবর্তন শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে এবং সেই ধারা এখন পর্যন্ত চলমান রয়েছে।
ফায়ারআই এর সাইবার বিষয়ক সিনিয়র কর্মকর্তা বেঞ্জামিন রিড বৃহস্পতিবারের দেয়া প্রেস ব্রিফিং-এ বলেন, “রাশিয়ান সরকারের সুবিধার্থে দুই গ্রুপ ইতোমধ্যেই নির্ধারিত দেশের সরকারি ব্যবস্থায় তাদের নিজস্ব মেইল এবং প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। যা রাশিয়ার পররাষ্ট্র নীতিতে ব্যাপক প্রভাব রাখবে। এছাড়াও এর মাধ্যমে রাশিয়ার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশে আসন্ন নির্বাচনে একটি বিশেষ মতাদর্শের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া বেশ সহজ হবে। হ্যাকিং থেকে বেরিয়ে আসা তথ্য নিয়ে সবচেয়ে বড় ভয় এখানেই।” ফায়ারআইয়ের এই প্রতিবেদন মূলত বিগত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত মাইক্রোসফটের সাইবার হুঁশিয়ারিকে আরও জোরালো সমর্থন দিলো।
ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাকরন সম্প্রতি এরই প্রেক্ষিতে সারা ইউরোপে সাইবার হামলার বিরুদ্ধে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এবং প্রায় একই সময়ে সাবেক ন্যাটো সেক্রেটারি জেনারেল আন্দ্রেস ফগ ইইউ পোলের ক্ষেত্রে রাশিয়ান হস্তক্ষেপকে এক প্রধান হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ফায়ারআই মূলত সাইবার সিকিউরিটি প্রদানকারী একটি প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন গবেষণা, রিপোর্ট এবং রাষ্ট্রীয় তথ্য সংরক্ষণে এই প্রতিষ্ঠান গ্রাহকসেবা দিয়ে থাকে। ফায়ারআই বর্তমানে গুগল এবং ফেইসবুকের সাইবার সিকিউরিটির জন্য অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
তথ্যসূত্র : সিএনবিসি নিউজ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড