• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মিয়ানমারকে চাপ দিতে চীন-রাশিয়ার অনীহা

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রস্তাব আলোচনা বর্জন করেছে চীন ও রাশিয়া

  অধিকার ডেস্ক    ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৬:৪৯

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করার জন্য আয়োজিত নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনা বর্জন করেছে ভেটো ক্ষমতার দুই দেশ। ছবি : সংগৃহীত

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারকে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করতে ব্রিটিশ খসড়া নিয়ে আলোচনা বর্জন করেছে দুই স্থায়ী সদস্য চীন ও রাশিয়া। জাতিসংঘের কূটনীতিকেরা সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) জানায়, যুক্তরাজ্যের উদ্যোগে নভেম্বরে এই প্রস্তাব আনা হয়েছিল যেখানে রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে নিরাপদ-মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছামূলক প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা। 'রয়টার্স'

নাম না প্রকাশের শর্তে এক কূটনৈতিক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ৭ লাখ মুসলিম রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে একটা সময়সীমা বেঁধে দেয়াই ছিল ওই খসড়া প্রস্তাবনার মূল লক্ষ্য।

২০১৭ সালের আগস্টে খাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হওয়া এসব রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের সঙ্গে মিয়ানমার চুক্তি স্বাক্ষর করলেও এখনও শুরু হয়নি প্রত্যাবাসন।

ছবি : সংগৃহীত

রাখাইনে কয়েক প্রজন্ম ধরে বসবাস করে আসা মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর এমন আচরণকে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর জাতিগত নিধনযজ্ঞ বলে ঘোষণা করে জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। মিয়ানমার সরকার বরাবরের মতো এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

জাতিসংঘে উত্থাপিত ব্রিটিশ খসড়া প্রস্তাবে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে মিয়ানমার কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গ রয়েছে। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের নিয়মিত নিরাপত্তা পরিষদের কাছে রিপোর্ট করার তাগিদও দেওয়া হয়েছে এতে। তবে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় চীন-রাশিয়ার অনুপস্থিতি একে সংশয়ের মুখে ফেলেছে।

জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার দূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া সোমবার রয়টার্সকে বলেন, 'আমার কাছে এটি যথাযথ সময়োপযোগী ও অর্থপূর্ণ কিছু মনে হয়নি।' চীনা দূত মা ঝাওজু এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। সংস্থাটিতে নিযুক্ত মিয়ানমারের প্রতিনিধিও তাৎক্ষণিকভাবে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা জানিয়েছেন।

ছবি : সংগৃহীত

খসড়া প্রস্তাবটি ঠিক কখন ভোটাভোটির জন্য তোলা হবে, অথবা আদৌ তোলা হবে কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেতে হলে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে অন্তত ৯ সদস্য রাষ্ট্রের ভোট নিশ্চিত করতে হবে। এর পাশাপাশি চীন-রাশিয়াসহ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী কোনো সদস্য দেশ যেন ভেটো না দেয় তাও নিশ্চিত করতে হবে। স্থায়ী সদস্যদের কেউ ভেটো দিলে প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যাবে।

চলতি বছর জুনে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে ওই সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। 'রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে চুক্তিটিকে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ' হিসেবে চিহ্নিত করেন মিয়ানমারে নিয়োজিত জাতিসংঘের আবাসিক এবং মানবিক সহায়তাবিষয়ক সমন্বয়কারী নাট ওৎসবি।

নাট ওৎসবি জানান, 'রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে যথাযথ পরিবেশ গড়ে তোলার কাজে সহায়তার জন্য ইউএনএইচসিআর ও ইউএনডিপি মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষর করেছে।'

জাতিসংঘের ভেটো ক্ষমতা ও মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত আশ্রয়কেন্দ্রের এরিয়েল ভিউ। ছবি : সংগৃহীত

ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট কারণে চীন-রাশিয়া শুরু থেকেই রোহিঙ্গা নিধন প্রশ্নে প্রায় নীরব অবস্থান জারি রেখেছে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার অধিকার রক্ষায় মিসরের পক্ষ থেকে আনা প্রস্তাব নাকচ করে দেয় চীন। অক্টোবরে নিরাপত্তা পরিষদের এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ৩টি বিষয়ে ঐকমত্য হলেও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো প্রস্তাব আনা যায়নি।

কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সে সময় জানায়, ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন চীন আর রাশিয়ার বিরোধিতার কারণে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা সংকট নিরসনে কোনো প্রস্তাব আনার ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড