• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

চীনে বিদেশি আটক রহস্য

বিদেশি কূটনৈতিক, বিলিয়নিয়ার, অ্যাক্টিভিস্ট ও আইনজ্ঞদের কাছে চীন এক আতঙ্ক!

  এস এম সোহাগ

১২ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৮:৪৪
চীনের বিদেশি আটকের চর্চাকে বিশেষজ্ঞরা বহির্বিশ্বের ওপর চাপ প্রয়োগ ও প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাব হিসেবেই দেখছে যাদের তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হলো কানাডিয়ান কূটনৈতিক। ছবি : সংগৃহীত

নানান রহস্যজনক কারণে বহু বিদেশি আটক বা অবরুদ্ধ করে রাখার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে চীনের, যার অধিকাংশ সময়েই দেখা গিয়েছে 'ইট মারলে পাটকেল খাওয়ার' খেলার মতো বিদেশি প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে এমন করে এসেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আটকের সংখ্যাটা বৃদ্ধি পাচ্ছে, দেশটিতে বিদেশিদের ভ্রমণ বা ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। 'নিউ ইয়র্ক টাইমস'

সর্বশেষ বেইজিং এ সাবেক কানাডিয়ান কূটনৈতিক মিকায়েল কোভরিগ চীনা কর্তৃপক্ষের হাতে সোমবার (১০ ডিসেম্বর) আটক হয়। চলতি মাসে চীনা এক জ্যেষ্ঠ কারিগরি নির্বাহী কানাডায় আটকের প্রতিফলন হিসেবে মনে করছেন কয়েকজন বিশেষজ্ঞ।

মার্কিন প্রভাবশালী পত্রিকা 'নিউ ইয়র্ক টাইমস' চীনের অস্বচ্ছ আইনি পদ্ধতিতে সম্প্রতি আটক হওয়া কয়েকটি ঘটনাকে উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই ঘটনাগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো :

ধর্ম প্রচারকেরা :

কানাডার খ্রিস্টান সহায়তা কর্মী কেভিন ও জুলিয়া গ্যারেট দম্পতি ২০১৬ সালে দেশে ফিরে আসেন। চীনের ড্যাংডং শহরে উত্তর কোরিয়ার সীমান্তের নিকটা তাদের পরিচালিত অতি বিখ্যাত কফি শপের সামনে থেকে চীনা কর্তৃপক্ষ আটক করে নিয়ে যায়। তারা উ.কোরিয়ানদের বিনা মূল্যে খাদ্য সরবারহ করে এমন একটি দাতব্য সংস্থায়ও কাজ করতেন কিন্তু ২০১৪ সালে চীনা কর্তৃপক্ষ তাদের 'রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য চুরি ও গুপ্তচরবৃত্তির সন্দেহের দায়ে' আটক করে।

গ্যারেট দম্পতি। ছবি : নিউ ইয়র্ক টাইমস

মিসেস গ্যারেট জামিনে মুক্ত পেয়ে দেশে ফিরে যাওয়ার অনুমোদন পেলেও মি. গ্যারেট কমপক্ষে ২ বছর জেল খাটার পরে ২০১৬ সালে পরিশেষে মুক্ত হতে পারে। তারা উভয়েই তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাহার করেছেন।

চীনা বিমান উদ্যোক্তা সু বিন এর ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক নথি চুরি ও বহিঃসমর্পণ অভিপ্রায়ের অভিযোগ আনলে তাকে ভ্যানকুভারে আটক করা হয়। তাই কানাডার ওপর চাপ প্রয়োগ করতেই চীনা সরকার গ্যারেট দম্পতিকে আটক করেছিল বলে মনে করছেন আইনি বিশেষজ্ঞরা। যদিও চীনা কর্তৃপক্ষ গ্যারেট দম্পতি আটকের সঙ্গে সু বিন মামলার সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে।

বিলিয়নিয়ার :

২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসের এক সকালে হংকংয়ের ফোর সিজন হোটেল থেকে, চীনের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে সংযুক্ত ধনিক জিয়াও জিয়াহুয়াকে অচেনা কয়েকজন দ্বারা হুইলচেয়ারে আটক করে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। চীনের সবচেয়ে ক্ষমতাশীল ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সক্ষমতা দেখার অন্তর্দৃষ্টি থাকায় বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা ও রিয়েল এস্টেটের ব্যবসায় বিনিয়োগ করে সে তার সম্পদ তৈরি করে।

বিলিয়নিয়ার জিয়াও জিয়াহুয়া। ছবি : নিউ ইয়র্ক টাইমস

চীনা বংশোদ্ভূত একজন কানাডিয়ান নাগরিক জিয়াও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ নিয়ে তদন্তে কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করতে এখন মূলভূমিতে কারাবাসে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাকে অপহরণ করার নির্দিষ্ট কারণ চীনা সরকার জানায়নি।

কর্পোরেট তদন্তকারীরা :

ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত পিটার হামফ্রে ও তার স্ত্রী চীনা বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইউ ইংযেং চীনের সাংহাইতে ছোট্ট একটি কর্পোরেট তদন্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চালাতেন। এই প্রতিষ্ঠানটি বহুজাতিক কোম্পানির কিছু ইস্যু নিয়ে তদন্ত করে থাকে, তবে জালিয়াতি ও আত্মসাতের মতো মামলায় তারা 'সুবিবেচক তদন্তকারী' হিসেবেই পরিচিত।

২০১৩ সালে চীনের ফার্মাসিউটিক্যালস প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও প্রতারণার অভিযোগে সরকারি এক তদন্তে এই দম্পতি আটক হয়। যারা প্রতিষ্ঠানটিকে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের পরামর্শ দিয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে চীনা নাগরিকদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করে ব্যক্তিগত তথ্য তছরুপের অভিযোগ আনা হয়েছিল। হামফ্রে ও ইউকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল।

আইনি পরামর্শক :

চীনা নাগরিকদের আইনি সহায়তা প্রদানকারী বেইজিং ভিত্তিক একটি বেসরকারী সংস্থার সহপ্রতিষ্ঠাতা সুইডিশ নাগরিক পিটার দাহলিন। তার কাজ খুব দ্রুতই চীনা কর্তৃপক্ষের নজরে আসে, যারা বিদেশি বেসরকারি সংস্থা এবং মানবাধিকার আইনজীবীদের ওপর চড়াও।

সুইডিশ নাগরিক পিটার দাহলিন। ছবি : নিউ ইয়র্ক টাইমস

২০১৬ সালের শুরুর দিকে চীনা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় দাহলিনকে আটকে করে ২৩ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাকে চীনের একটি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সবার কাছে ক্ষমা চাওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়। এরপরেই তাকে দেশ থেকে তাড়ানো হয়।

পলাতক পরিবার :

চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের প্রাক্তন এক নির্বাহী লিউ চ্যাংমিং চীনে সর্বাধিক ওয়ান্টেড ফেরারী আসামি। প্রায় ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার প্রতারণার মূল কেন্দ্রীয় চরিত্র লিউ ২০১৭ সালে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়।

লিউ চ্যাংমিং ও তার স্ত্রী স্যান্ড্রা হান। ছবি : নিউ ইয়র্ক টাইমস

লিউর আমেরিকান স্ত্রী ও সন্তানকে চীন সরকার আটক করে রেখেছে। যাদেরকে চীন ত্যাগের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না যাকে অনেকেই লিউর ফিরে আসার মূল্য বলে মনে করছেন।

মি. লিউয়ের স্ত্রী স্যান্ড্রা হান এবং তাদের সন্তান, ভিক্টর ও সিনথিয়া জুন মাসে অসুস্থ এক আত্মীয়কে দেখতে চীনে আসেন। মিস হানকে আটক করা হয়েছিল এবং শিশুদের দেশে ফিরে যেতে না দেয়াকে চীনের প্রস্থান নিষেধাজ্ঞার চর্চা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

আটক নারীরা। ছবি : নিউ ইয়র্ক টাইমস

চীন শুধু বিদেশিদেরই আটক করেনি। দেশটির কমিউনিস্ট সরকার বিগত কয়েক বছর ধরে নিজ দেশের ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, অ্যাক্টিভিস্ট, ধর্মজাজক ও সেলিব্রেটিদের নানা অজ্ঞাত কারণে আটক করেছে। চীনের আটক নিষেধাজ্ঞার এই চর্চা দেশটি সবার সঙ্গেই করছে। দেশটির সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচারকেও সরকারের একই প্রবণতার ফল বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড