• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুরাদ, মুকাওয়েজির নোবেল গ্রহণ, যুদ্ধে যৌনতাকে হাতিয়ার বানানো বন্ধে আহ্বান

প্রাপ্ত অর্থ ইয়াজিদিদের জন্য ব্যয় করবে নাদিয়া

  অধিকার ডেস্ক    ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ২১:৫৩

ছবি : সংগৃহীত

চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন এমন দুজন মানুষ যারা যৌন নিপীড়নকে যুদ্ধ-সংঘাতের হাতিয়ার করার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। একজন কঙ্গোর চিকিৎসক ও অন্যজন সাবেক কুর্দিস যৌনদাসী। ডেনিস মুকাওয়েজি ও নাদিয়া মুরাদ পুরস্কার গ্রহণ করতে এসেও সরব হলেন একই প্রশ্নে। যুদ্ধের ডাক দিলেন 'যুদ্ধে যৌন নিপীড়নকে হাতিয়ার করার বিরুদ্ধে'। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ নিয়ে একটি রূপরেখা প্রণয়নের তাগিদ দিলেন তারা।

বিশ্বে যৌন নিপীড়নবিরোধী লড়াইয়ে তারা এই পুরস্কার লাভ করেন। সোমবার (১০ ডিসেম্বর) নরওয়ের অসলোতে পুরস্কার নিতে গিয়ে মুকাওয়েজি যুদ্ধে যৌন নিপীড়ন প্রশ্নে নীরবতা ভাঙার আহ্বান জানান। বলেন 'যদি কোনো যুদ্ধ করতেই হয়, তবে তা হওয়া উচিত নীরবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ।' এই নীরবতা আমাদের সমাজকে ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ছবি : সংগৃহীত

মধ্য আফ্রিকান দেশ কঙ্গোর অধিবাসী মুকাওয়েজি মনে করেন, তার দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যই সেখানকার সংঘাতের নেপথ্য কারণ। তিনি বলেন, 'সুন্দর গাড়ি, সুন্দর গহনা এসব আমদের পছন্দ। আমারও একটা স্মার্টফোন আছে। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যই এসবের উৎস, প্রায়শই খনি থেকে যা উত্তোলিত হয় ছোট ছোট শিশু, হুমকি-ধামকির শিকার মানুষ আর যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া নারীদের হাতে।'

যৌন নিপীড়নের ঘটনায় খনিজ সম্পদের সুবিধাভোগী এই শ্রেণির নীরবতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন তিনি বলেন, 'কেবল সহিংসতা সৃষ্টিকারীরাই নয়, দায়ী তারাও যারা এসব অপরাধের বিরুদ্ধে নির্বিকার'।

যৌন নিপীড়নের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে এবং নিপীড়নের শিকার মানুষদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মুকওয়েজি।

ছবি : সংগৃহীত

'আজ আমার জন্য একটি বিশেষ দিন। সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত, যখন আলোকিত পথের জয় হয়েছে, বিজয়ী হয়েছে মানবতা, পরাজিত হয়েছে সন্ত্রাসবাদ। আজ সেই দিন, যখন দীর্ঘদিনের ভোগান্তির পর বিজয়ী হয়েছে নারী আর শিশুরা। আমি আশা করি আজকের দিনটি নতুন এক যুগের ইশারা দেবে, যেখানে সর্বত্র শান্তি বিরাজমান থাকবে। নারী-শিশুর সুরক্ষা আর যৌন নিপীড়নের অবসানে পুরো বিশ্বকে নতুন একটি রূপরেখা তৈরি করার জন্য কাজ করতে হবে।' বলে তিনি যুক্ত করেন।

যৌন নিপীড়নের শিকার লাখো মানুষকে চিকিৎসা দিয়েছেন মুকাওয়েজি ও তার সহকারীরা। নিজ দেশে 'জাদুকরী চিকিৎসক' হিসেবে পরিচিত এই ব্যক্তি অসাধারণ দক্ষতায় অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে সারিয়ে তোলেন অত্যাচারিত ও ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীদের ক্ষত। যৌন সহিংসতার শিকার নারীদের ট্রমা থেকে বের করে আনতেও তিনি নিবেদিতপ্রাণ। গৃহযুদ্ধবিধ্বস্ত কঙ্গোয় বহু নির্যাতিত ও ধর্ষিত নারীকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি।

ছবি : সংগৃহীত

নারীদের বাঁচাতে দিনে ১০টিরও বেশি অস্ত্রোপচার করা ছাড়াও ৩০ হাজারের বেশি নারীকে একা হাতে চিকিৎসা করে বাঁচিয়ে তুলেছেন তিনি। অন্যদিকে ইয়াজিদি তরুণী নাদিয়া সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে নিজেই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং অন্য ধর্ষণের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। ২০১৪ সালের আগস্টে জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর সদস্যরা ইরাকে অন্য ইয়াজিদি নারীদের সঙ্গে নাদিয়া মুরাদকেও অপহরণ করেছিল। সিনজারের কোচো থেকে তাদের অপহরণ করা হয়। আইএস-এর সদস্যরা নাদিয়ার ছয় ভাই ও মাকে হত্যা করেছিল। তার বোনদেরও অপহরণ করে আইএস। ধর্ষণের শিকার হওয়া ও অন্যদের ধর্ষণের শিকার হতে দেখা এ নারী সাহসীভাবে সেই সহিংসতার কথা বর্ণনা করেছিলেন।

ছবি : সংগৃহীত

মুকাওয়েজি ও মুরাদ সোমবার (১০ ডিসেম্বর) যৌথভাবে গোল্ড মেডেল, ডিপ্লোমা ও ৯০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার গ্রহণ করেছেন। পুরস্কারের অর্থ তাদের দুজনকে ভাগাভাগি করতে হবে। নাদিয়া তার ৫ লাখ ডলার পুরস্কারের অর্ধেক অর্থ নাদিয়া'স ইনিশিয়েটিভকে দেবেন। তার উদ্যোগে গড়ে ওঠা এ সংস্থাটি ইয়াজিদিদের ওপর সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে। ইয়াজিদিদের ওপর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনআইএস-এর চালানো যুদ্ধাপরাদের তদন্ত করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ওপরও চাপ দিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি। 'আল-জাজিরা'

ইরাকের ২৫ বছর বয়সী নাদিয়া মুরাদ শান্তিতে নোবেল পাওয়া দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি। এর আগে, ১৭ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে শান্তিতে নোবেল পান মালালা ইউসুফজাই। ২০১৪ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। ইয়াজিদি তরুণী নাদিয়া সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে নিজেই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং অন্য ধর্ষণের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। ২০১৪ সালের আগস্টে জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর সদস্যরা ইরাকে অন্য ইয়াজিদি নারীদের সঙ্গে নাদিয়া মুরাদকেও অপহরণ করেছিল। সিনজারের কোচো থেকে তাদেরকে অপহরণ করা হয়।

ছবি : সংগৃহীত

আইএস-এর সদস্যরা নাদিয়ার ছয় ভাই ও মাকে হত্যা করেছিল। তার বোনদেরও অপহরণ করে আইএস। ধর্ষণের শিকার হওয়া ও অন্যদের ধর্ষণের শিকার হতে দেখা এ নারী সাহসীভাবে সেই সহিংসতার কথা বর্ণনা করেছিলেন। সোমবার (১০ ডিসেম্বর) এ দুই নোবেল বিজয়ীর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড