• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সরকারবিরোধী ‘ইয়েলো ভেস্ট' বিক্ষোভ

উত্তাল ফ্রান্স : আটক ১৪শ

  কে এইচ আর রাব্বী

০৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:০১
উত্তাল ফ্রান্স
সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ফ্রান্স। (ছবি : সম্পাদিত)

রাজধানী প্যারিসসহ ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে শনিবার (৮ ডিসেম্বর) দিনভর ‘ইয়েলো ভেস্ট' পরিহিত বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। টানা চার সপ্তাহের মতো চলা বিক্ষোভে অসংখ্য গাড়ি ভাঙচুরসহ বহু দোকানপাট লুটের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফরাসি কর্তৃপক্ষ দেশব্যাপী প্রায় ৯০ হাজারের বেশি পুলিশ মোতায়েন করেছে।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া লোকদের উপর পুলিশের নিক্ষেপ করা টিয়ারগ্যাসে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন চারজন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৩৫ জন। ইতোমধ্যে ১৪শ’র বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বন্ধ রাখা হয়েছে দেশের প্রধান ল্যান্ডমার্ক আইফেল টাওয়ার। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম 'ভয়েস অফ আমেরিকা'।

ফ্রান্স

সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে পুলিশি বাঁধার মুখে বিক্ষোভকারীরা। (ছবিসূত্র : বিবিসি)

প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে জ্বালানি তেলের উপর অতিরিক্ত করারোপের পরিকল্পনা নেওয়ায় গত চার সপ্তাহ আগে গোটা ফ্রান্স জুড়ে এ বিক্ষোভের সূচনা হয়। সে সময় আন্দোলনকারীরা ‘ইয়েলো ভেস্ট' পরে সড়কে নেমে আসেন।

চলমান এ বিক্ষোভের ফলে সরকার বাড়তি কর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিলেও তাতে এখনো সন্তুষ্ট নন আন্দোলনকারীরা। বরং দেশটিতে জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যান তারা। তাদের দাবি, ‘এবার সরকারকে দেশের শ্রমিক, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং শিক্ষার্থীদের উপর নজর দিতে হবে।’

od

প্যারিসে বিক্ষোভকারীদের উপর টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করছে পুলিশ সদস্যরা। (ছবিসূত্র : বিবিসি)

শনিবার স্থানীয় সময় সকাল থেকে ঐতিহাসিক চ্যাম্প্স এলিসির কাছে এসে মিলিত হন বিক্ষোভকারীরা। পরে আন্দোলনের এক পর্যায় পুলিশের বেঁধে দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে দিয়ে সংঘর্ষ শুরু করেন তারা। সে সময় আন্দোলনরত লোকজন বিভিন্ন গাড়িতে ভাংচুর করেন এবং আগুন দেন। আশপাশের অসংখ্য দোকানেও হামলা চালান বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা। পরে সড়কে সাঁজোয়া যান নামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ।

আন্দোলনে 'হলুদ জ্যাকেট' পরিহিত লোকদের সড়ক থেকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। নিক্ষেপে ক্ষতি অথবা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এমন সকল সম্ভাব্য জিনিস সড়ক থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। সংঘাতের আশংকায় সড়কের আশেপাশের ক্যাফেগুলোর সকল আসবাবপত্রও সরিইয়ে ফেলা হয়।

od

প্যারিসে পুলিশের ছোঁড়া টিয়ারগ্যাসের ঝাঁঝালো গন্ধে ছত্রভঙ্গ বিক্ষোভকারী দল। (ছবিসূত্র : বিবিসি)

এদিকে কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ শনিবার প্যারিসের অদূরে দাঙ্গা দমনকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন। জানা যায়, তিনি সে সময় পুলিশকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

অন্যদিকে প্যারিসে আন্দোলনরত জনাথন গনজেলস নামক এক বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর উদ্দেশে বলেন, ‘বর্তমানে আপনার জনপ্রিয়তার গ্রাফ ক্রমশ নিচে নেমে যাচ্ছে। প্রশাসন ব্যবহার করে এভাবে আর থাকা যাবে না।’

od

টিয়ারগ্যাসের ঝাঁঝালো ধোয়া থেকে নিজের চোখকে প্রতিষেধক দিয়ে রক্ষা করছেন এক বিক্ষোভকারী। (ছবিসূত্র : বিবিসি)

সেই বিক্ষোভকারী ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, ‘ফ্রান্স বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশগুলোর মধ্যে একটি, কিন্তু গত কয়েক দশক যাবত সরকারের দুর্ব্যবহারের কারণে ফরাসি জনগণ দরিদ্রতার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। আমরা শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি চাই এবং সরকারী কর্মকর্তাদের বেতন কমাতে চাই।’

তখন অন্যান্য বিক্ষোভকারীরা ‘জনগণের কথা শুনুন’ স্লোগান দিয়ে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর পদত্যাগের দাবি করতে থাকেন। অনেকেই কঠোর সংস্কারের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, ‘সরকারের দাবি, ফ্রান্সকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করা হচ্ছে। তবে রাষ্ট্রপতি দরিদ্রদের নয়, শুধুমাত্র ধনী ব্যক্তিদের জন্যই চিন্তায় ব্যস্ত।’

od

প্যারিসে পুলিশি তোপের মুখে আত্মসমর্পণ করছেন এক বিক্ষোভকারী। (ছবিসূত্র : বিবিসি)

সে সময় বিক্ষোভের মাঝ থেকে হুগো নামের এক বিক্ষোভকারী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা এমন একটি সিস্টেমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি যা কাজ করছে না। তবে আমাদের ঠিক কি করা উচিত এবং কি উচিত নয় তা আমার বলা ঠিক হবে না। তাই দেশের পেশাদার রাজনীতিবিদদের কাছে আমরা এ বিষয়ে বার্তা পাঠিয়েছি। আপনারা এখন কিছু করুন এবং তা খুব দ্রুত করুন।’

od

পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করার পরও মার খাচ্ছেন সেই বিক্ষোভকারী। (ছবিসূত্র : বিবিসি)

উল্লেখ্য, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত কর আরোপের বিরুদ্ধে গত নভেম্বরে দেশটিতে এমন অস্থিরতা দেখা দেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত চার জন বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অসংখ্য লোক।

সরকারি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘গেল কয়েক সপ্তাহের সহিংসতার পুনরাবৃত্তি দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেবে।’ একইসঙ্গে এ আন্দোলনের ফলে সরকারের টিকে থাকার বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তারা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড