• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ভারতে বাবরী মসজিদ-রাম মন্দির ইস্যুতে ফের ধর্মীয় রাজনীতি!   

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৫ নভেম্বর ২০১৮, ২২:৪৯
ছবি : সম্পাদিত

ভারতের আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে দেশটির উত্তর প্রদেশের অযোধ্যার বাবরী মসজিদ-রাম মন্দির ইস্যুতে। দেশটির বর্তমান ক্ষমতাসীন বিজেপির কট্টর হিন্দুত্ববাদী নীতির আদলে সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলো ফের বাবরী মসজিদ ভাঙার দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে।

অযোধ্যার বাবরী মসজিদ-রাম জন্মভূমি মামলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের হুমকি দেয়ার অভিযোগ করেছেন।

অন্যদিকে, কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী কপিল সিব্বল ওই অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে লোকসভা নির্বাচনের সামনে ওই ইস্যুতে ফায়দা লাভের জন্য প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি টেনে আনছেন বলে মন্তব্য করেছেন।

রবিবার রাজস্থানের আলওয়ারে এক নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অযোধ্যা ইস্যুর মতো কোনও স্পর্শকাতর বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা দেশকে সুবিচার দেয়ার চেষ্টা করছেন। এজন্য আদালত সকলের মতামত জানতে চায়। কিন্তু কংগ্রেসের রাজ্যসভার এমপি ও আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ইমপিচ করার হুমকি দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছেন। বিচারব্যবস্থার ওপরে কংগ্রেসের কোনো আস্থা নেই। এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রবণতা!’

তিনি বলেন, ‘যখনই সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যা মামলার শুনানি করতে চায়, ঠিক তখনই কংগ্রেসের এক রাজ্যসভার এমপি বলেন, ২০১৯ পর্যন্ত এই মামলার শুনানি করবেন না, ওই বছর দেশে ভোট। এভাবে দেশের বিচার ব্যবস্থার পথরোধ করা কি উচিত?’

প্রধানমন্ত্রীর পাল্টা জবাবে কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, ‘ওই মামলায় কংগ্রেস বা বিজেপি কেউই পক্ষ নয়। আমি কেবল একপক্ষের আইনজীবী মাত্র। আমি গত জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে উপস্থিত ছিলাম না। গত ১০/১১ মাস ধরে সুপ্রিম কোর্টকে কে বাধা দিয়েছিল মামলার শুনানিতে? কীভাবে কংগ্রেস দল বাধা দিয়েছে? গত অক্টোবরে মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, আজ এর অগ্রাধিকার নেই। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ওই মামলা বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। এরকম অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী কি প্রধান বিচারপতির মন্তব্যের বিরুদ্ধে বলার সাহস দেখাচ্ছেন, কেন শুনানি হচ্ছে না এজন্য?’

অযোধ্যার বাবরী মসজিদ-রাম জন্মভূমি মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে ওই মামলার শুনানি হওয়ার কথা আছে। কিন্তু তার আগেই অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের দাবিতে হিন্দুত্ববাদীদের জোরালো তৎপরতা শুরু হয়েছে।

বাবরী মসজিদ ভাঙার দাবি বিজেপির

ভারতের দিল্লির ঐতিহাসিক জামে মসজিদ ভাঙার দাবি তুলেছেন বিজেপি’র সচ্চিদানন্দ হরি সাক্ষী মহারাজ এমপি। শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) এক সভায় ওই দাবি জানান তিনি।

সাক্ষী মহারাজ বলেন, ‘আমি প্রথম রাজনীতিতে আসার পর মথুরায় বলেছিলাম, অযোধ্যা, মথুরা, কাশীর দরকার নেই, দিল্লির জামে মসজিদ ভাঙো। সিঁড়ির নীচে যদি মূর্তি না পাওয়া যায় তাহলে আমাকে ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে দিও। ওই বক্তব্যে আমি অটল রয়েছি।’ তার দাবি, মুঘল আমলে মন্দির ভেঙে তিন হাজারেরও বেশি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, মুঘল সম্রাট শাহজাহান ১৬৪৪ থেকে ১৬৫৬ সালের মধ্যে দিল্লির ঐতিহাসিক জামে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।

‘১৭ মিনিটে বাবরী মসজিদ ভেঙেছি’

শুক্রবার ভারতের মহারাষ্ট্রের শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আমরা ১৭ মিনিটের মধ্যে বাবরী ভেঙেছি, (রাম মন্দির নির্মাণের জন্য) আইন তৈরি করতে কত সময় লাগে?’

এসব প্রসঙ্গে, জামায়াতে ইসলামী হিন্দ-এর পশ্চিমবঙ্গের সভাপতি মুহাম্মদ নুরুদ্দিন শনিবার রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘সম্প্রতি কিছু রাজনৈতিক দল আবার মন্দির-মসজিদ ইস্যুতে সাম্প্রদায়িক বিভাজন করে রাজনীতির ময়দান গরম করতে চাচ্ছে। যেমন পশ্চিমবঙ্গে রথযাত্রা শুরু করা হয়েছে। এখন ভারতের চারটে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচন।

এই রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে ভারতীয় জনতা পার্টি যারা কেন্দ্রীয় সরকারে শাসন ক্ষমতায় আছে, তারা কোনও উন্নয়নের ইস্যু খুঁজে না পেয়ে, জনগণের সমর্থন হারাবার ভয়ে, মন্দির-মসজিদ ইস্যু, সাম্প্রদায়িক উসকানিকে সামনে আনতে চাচ্ছে। সাক্ষী মহারাজ দিল্লির জামে মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়াসহ তার ভিতরে দেবতার মূর্তি পাওয়া যাবে বলে যে দাবি করেছেন, তা আসলে রাজনৈতিক গিমিক এবং মানুষের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করা ছাড়া আর কিছুই নয়। সঞ্জয় রাউত যে মন্তব্য করেছেন তাও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আসলে এর মধ্যে না ধর্ম আছে, না কোনও সৎ উদ্দেশ্য আছে। সবসময়ই এরা নির্বাচনকে সামনে রেখে মন্দির-মসজিদ ইস্যু তুলে ধরতে চায়। মন্দির-মসজিদের ভাবনায় জনগণকে ডুবিয়ে রেখে, জনগণকে সেই উত্তেজনার মধ্যে রেখে উত্তেজিত করে সেই আগুনে তারা রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়। আমার মনে হয় ভারতের জনগণ এ ধরণের সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক মানসিকতাকে প্রত্যাখ্যান করবে।’

মুহাম্মদ নুরুদ্দিন বলেন, ‘ভারত চিরকাল সম্প্রীতির দেশ। এখানে মুসলিমরা প্রায় এক হাজার বছর শাসন করেছে। তারা যদি মন্দির ভেঙে সব মসজিদ তৈরি করত, তারা যদি হিন্দুদেরকে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করত, তাহলে ভারতে মন্দিরের অস্তিত্ব থাকার কথা নয়। মাত্র চার বছর ক্ষমতায় এসে বিজেপি যেভাবে তাজমহল থেকে শুরু করে, জামে মসজিদ, লালকেল্লাসহ মুসলিম ঐতিহ্য ধ্বংস করতে চাচ্ছে, মুসলিম নামগুলো (শহর ও জেলা) পরিবর্তন করে দিয়ে মুসলিমদের নিশ্চিহ্ন করতে চাচ্ছে। মুসলিমরা যদি হাজার বছর ধরে এটা করত তাহলে ওদের অস্তিত্ব থাকত না। সুতরাং, এসব জিনিস বর্জন করা উচিত, ভারতের জনগণ তা বর্জন করবে। কখনোই সাম্প্রদায়িক বিভাজনের মধ্য দিয়ে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে দেশের কোনও উন্নতি হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সমস্ত মানুষের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানাচ্ছি এ ধরণের ভুল প্রচারণায় আপনারা কর্ণপাত করবেন না। ভারতে যে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের ঐতিহ্য আছে তা রক্ষা করতে হবে।’

গতকাল শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে শুরু করে উত্তর প্রদেশ পর্যন্ত বিজেপির সরকার রয়েছে। রাজ্যসভায় (সংসদের উচ্চকক্ষ) এমন অনেক এমপি আছেন যারা রাম মন্দিরের পাশে দাঁড়াবেন। যারা বিরোধিতা করবেন দেশে তাদের ঘুরে বেড়ানো মুশকিল হবে।’

অন্যদিকে, শুক্রবার শিবসেনার দলীয় মুখপত্র ‘সামনা’য় কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন বিজেপি’র তীব্র সমালোচনা করে বলা হয়েছে, ‘ক্ষমতাসীন লোকেদের শিবসৈনিকদের নিয়ে গর্ব হওয়া উচিত যারা রাম জন্মভূমিতে বাবর রাজকে শেষ করে দিয়েছে।’

দলটি বলেছে, ‘অযোধ্যায় এখন রাম রাজত্ব নয়, সুপ্রিম কোর্টের রাজত্ব। ১৯৯২ সালে বালা সাহেবের (প্রয়াত শিবসেনা প্রধান) শিব সৈনিকরা রাম জন্মভূমিতে বাবরের রাজত্বকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্ষমতায় বসে থাকা লোকেরা (বিজেপি) ওই শিব সৈনিকদের বিষয়ে গর্ব করার পরিবর্তে তাদের থেকে ভয় অনুভব করছে। আপনারা মন্দির নির্মাণের তারিখ কেন ঘোষণা করছেন না? যদি রাম মন্দির ইস্যু আপনাদের হাত থেকে ফসকে যায় তাহলে ২০১৯ সালে আপনাদের রুটিরুজি ছাড়াও কিছু লোকের মুখও বন্ধ হয়ে যাবে।’

২৫ নভেম্বর অযোধ্যার প্রস্তাবিত ধর্মসভায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দলসহ বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন শামিল হবে। শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরেও ওইদিন অযোধ্যায় যাবেন। দুই লাখেরও বেশি মানুষ ধর্মসভায় উপস্থিত হবেন বলা দাবি করা হয়েছে। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় বাবরী মসজিদ ভাঙার ২৬ বছর পরে এই প্রথম অযোধ্যায় একসঙ্গে এত মানুষ জড়ো হতে চলেছেন। পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদিও সংখ্যালঘু মুসলিমদের একাংশ গোলযোগের আশঙ্কায় সাময়িকভাবে অন্যত্র চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। বাবরী মসজিদ মামলার বাদী ইকবাল আনসারী বলেছেন, আরএসএসের ধর্মসংসদকে কেন্দ্র করে অযোধ্যার মুসলিমদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। মুসলিমদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য তিনি জেলাপ্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন বলে জানান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড