আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান অভিযোগ করে বলেছেন, আমাকে আগামী ১০ বছরের জন্য কারাগারে বন্দি রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আমার বিরুদ্ধে এই পরিকল্পনা হচ্ছে।
এছাড়া জীবনের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার। আজ সোমবার (১৫ মে) প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে তথ্যটি জানিয়েছে পাক মিডিয়া দ্য ডন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার ভোররাতে একাধিক টুইট বার্তায় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ প্রধান ইমরান খান এসব মন্তব্য করেন। মূলত পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী তার লাহোরের বাসভবনে পিটিআই নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার পর এই টুইটগুলো করা হয়।
ভোররাতের এসব টুইট বার্তায় ইমরান বলেছেন, তো লন্ডন পরিকল্পনা সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ্যে এসেছে। আমি জেলের ভেতরে থাকাকালীন সহিংসতার অজুহাতে তারা বিচারক, জুরি এবং জল্লাদের ভূমিকা গ্রহণ করেছে। এখন পরিকল্পনা হলো- বুশরা বেগমকে (ইমরান খানের স্ত্রী) কারাগারে রেখে আমাকে অপমান করা এবং কিছু রাষ্ট্রদ্রোহ আইন প্রয়োগ করে আমাকে আগামী দশ বছর কারাগারে আটকে রাখা।
৭০ বছর বয়সী এই নেতা বর্তমানে ১০০ টিরও বেশি মামলায় জামিনে মুক্ত রয়েছেন। টুইটে তিনি আরও বলেন, জনসাধারণের যেন কোনো প্রতিক্রিয়া না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার দুটি কাজ করেছে- প্রথমত, ইচ্ছাকৃত সন্ত্রাস কেবল পিটিআই কর্মীদের ওপর নয় বরং সাধারণ নাগরিকদের ওপরও চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, মিডিয়া সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রিত এবং স্তব্ধ করা হয়েছে।
অভিযোগ করে তিনি বলেন, এই ‘অপরাধীরা’ (সরকার) যেভাবে চাদর ও চর দেওয়ারীর বা পর্দা ও চার দেওয়ালের পবিত্রতা এমনভাবে লঙ্ঘন করেছে যা কখনোই করা হয়নি।
ইমরান আরও বলেন, এটা ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষের মধ্যে ভয় জাগানোর চেষ্টা যে, তারা যখন আগামীকাল আমাকে গ্রেফতার করতে আসবে, লোকেরা যেন বাইরে না আসে। এবং আগামীকাল তারা আবার ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করবে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে নিষিদ্ধ করবে (যা শুধুমাত্র আংশিকভাবে খোলা আছে)। আমরা যেমনটা বলছি, ঘর ভেঙে ভেতরে ঢুকে পুলিশ নির্লজ্জভাবে বাড়ির মহিলাদের মারধর করছে।
পাকিস্তানের জনগণকে তার বার্তা দিতে গিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের জনগণের কাছে আমার বার্তা; আমি আমার রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত হাকীকী আজাদীর (সত্যিকারের স্বাধীনতার) জন্য লড়াই করব, কারণ আমার জন্য এই ধরনের বদমাইশদের দাসত্ব করার চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়।
ইমরান খান আরও বলেছেন, আমি আমার সমস্ত লোককে এটাই মনে রাখার জন্য অনুরোধ করছি যে, আমরা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। অর্থাৎ আমরা এক (আল্লাহ) ছাড়া আর কারও কাছে মাথা নত করব না। যদি আমরা ভয়ের মূর্তির কাছে মাথা নত করি তবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কেবল অপমান এবং বিভাজন থাকবে। যে দেশে অন্যায় ও জঙ্গলের আইন বিরাজ করে, সেসব দেশ বেশিদিন টিকে থাকে না।
এ দিকে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের সামনে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন জোটের অন্যতম দল জমিয়তে উলেমা-ই-ইসলাম (জেইউআই-এফ)। ইমরান খান এটিকে নাটক হিসেবে অভিহিত করে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের বাইরে জেইউআই-এফ-এর এই নাটক শুধুমাত্র একটি উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে আর তা হলো- পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতিকে ভয় দেখানো যাতে তিনি সংবিধান অনুযায়ী রায় না দেন।
দুর্নীতির মামলায় গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে নাটকীয়ভাবে গ্রেফতার করা হয় ইমরান খানকে। তার সেই গ্রেফতার পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দেশে মারাত্মক অস্থিরতা সৃষ্টি করে এবং এরই এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট ইমরানের গ্রেফতারকে অবৈধ এবং বেআইনি বলে রায় দেয়।
মূলত গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে থেকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হয়। আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর (এনএবি) ওয়ারেন্টে পাকিস্তানের আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স তাকে গ্রেফতার করে।
পাকিস্তানের দুর্নীতি বিরোধী সংস্থার এই পদক্ষেপে দেশজুড়ে সেদিনই সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শেহবাজ শরিফের সরকার খাইবার পাখতুনখাওয়া, পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান এবং ইসলামাবাদসহ দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সেনাবাহিনীকে ডাকতে বাধ্য হয়।
পাক মিডিয়া বলছে, আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স ইমরান খানকে গ্রেফতারের ফলে পাকিস্তানে যে অস্থিরতা শুরু হয় তা শুক্রবার পর্যন্ত অব্যাহত ছিল এবং বিক্ষোভকারীদের বেশ কয়েকজনের মৃত্যু এবং কয়েক ডজন সামরিক ও রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যায়।
এছাড়া পাকিস্তানের ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে রাওয়ালপিন্ডিতে দেশটির সেনা সদর দপ্তরে (জিএইচকিউ) প্রবেশ করে এবং লাহোরে কর্পস কমান্ডারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড