• সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন

জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বাংলাদেশের কাছ থেকে শিখতে পারে ব্রিটেন

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

৩১ মার্চ ২০২৩, ১৫:১৯
জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বাংলাদেশের কাছ থেকে শিখতে পারে ব্রিটেন
শুষ্ক জমিতে প্রাণের ছোঁয়া (ছবি : বিবিসি নিউজ)

বিশ্বের সামনে এখন যেসব হুমকি রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন সেগুলোর একটি। বিশ্বে ইতোমধ্যেই এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এটি মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এখনো খুব বেশি ফল মেলেনি।

এমন পরিস্থিতিতে জলবায়ু সংকটের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাজ্য দক্ষিণ এশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারে বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রভাবশালী মিডিয়া ব্লুমবার্গ। আজ শুক্রবার (৩১ মার্চ) গণমাধ্যমটির মতামত বিভাগে প্রকাশিত একটি লেখায় এমন দাবি করা হয়।

সেখানে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে অনেকেই এখন রেকর্ড-উচ্চ তাপমাত্রায় বা বন্যার পানির কারণে কষ্ট পাচ্ছেন, তবে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ ব্রিটেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য ‘আশ্চর্যজনকভাবে অপ্রস্তুত’। ব্রিটিশ সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন কমিটির গত বুধবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের উপসংহারে এই কথাই বলা হয়েছে। ওই কমিটি জলবায়ু নীতি সম্পর্কিত যুক্তরাজ্যের স্বাধীন উপদেষ্টা সংস্থা।

এটি বেশ আশ্চর্যজনক মনে হতে পারে যে, যুক্তরাজ্যের মতো একটি ধনী দেশ এই ধরনের চ্যালেঞ্জের জন্য এতটা প্রস্তুত নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘন ঘন দুর্যোগসহ আবহাওয়া এখন আরও চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে। মূলত উন্নয়নশীল দেশগুলোর দুর্বল জনগোষ্ঠীই জলবায়ু পরিবর্তনের এই ক্ষতিকর প্রভাবের সম্মুখীন হয়েছে। যদিও এর বিপরীতে সাধারণত অভিযোজন বা মানিয়ে নেওয়ার বিষয়েও কথা শোনা যায়। যা মূলত জলবায়ু সংকটের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রভাব মোকাবিলা করার প্রক্রিয়া ও কাঠামোর পরিবর্তন বুঝিয়ে থাকে।

তবে ইউরোপের দেশ জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব বনের উন্নয়নমূলক ভূগোলের অধ্যাপক লিসা শিপার এই ধরনের প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন। তিনি বলছেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এমন একটি ছবি আঁকা হয়েছে, যেখানে কার্যত দেখানো হয়েছে- দরিদ্র দেশগুলোতেই কেবল জলবায়ু বিপর্যয় ঘটে থাকে। আর এটি মানুষকে আত্মতুষ্টির দিকে পরিচালিত করেছে যা থেকে আমরা সম্ভবত জেগে উঠছি।

যদিও বেশিরভাগ সময়ই সংকটের মধ্যে থাকা দরিদ্র দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরেই এই ধরনের অভিযোজন প্রক্রিয়ায় আরও স্পষ্টভাবে নজর দিয়েছে। ২০২১ সালে জার্মানির বিপর্যয়কর বন্যায় ১৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই বন্যার প্রতিক্রিয়ায় ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ’র ডিরেক্টর সালেমুল হক পত্রিকার নিবন্ধে লিখেছিলেন, কীভাবে ধনী দেশগুলো তার নিজের দেশ (বাংলাদেশ) থেকে শিখতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যা নিয়মিতভাবে আঘাত হানায় সেই ধরনের পরিস্থিতিতে মানুষের প্রাণহানি কমিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছে। এবং মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে আনা ও আশ্রয় দেওয়ার সক্ষমতাসহ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ‘সর্বোত্তম দুর্যোগ সতর্কীকরণ ব্যবস্থা’ নিশ্চিতের বিষয়টি বাংলাদেশ এখন গর্বের সঙ্গে বলে থাকে।

এর অর্থ এই নয় যে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর টেকসই উন্নয়নের জন্য আরও সাহায্যের প্রয়োজন নেই, বা উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য এই বিষয়ে ব্যাপকভাবে অপ্রস্তুত। সাম্প্রতিক ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ রিপোর্টের সারাংশ অনুযায়ী, নীতির ফাঁক-ফোকর সব জায়গায় জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা তৈরিতে বাধা দিচ্ছে।

যদিও অভিযোজন ব্যবস্থায় বিনিয়োগ বাড়ছে, তারপরও প্রয়োজনীয় অর্থের চেয়ে সেটি এখনও বেশ কম এবং হাতে থাকা বিশাল কাজের জন্য অপর্যাপ্তও। আমরা যেসব সমস্যা মোকাবিলা করার চেষ্টা করছি সেখানেও অর্থ আটকে থাকছে। এছাড়া ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়লে ভবিষ্যতের সুরক্ষা নিশ্চিতের চেয়ে ক্ষতি মেরামতের কাজেই আরও বেশি অর্থ ব্যয় হয়ে যায়।

যুক্তরাজ্যের পরিস্থিতি বেশ গুরুতর। ২০২২ সালের গ্রীষ্মে ইংল্যান্ডে যে তাপপ্রবাহ দেখা গেছে তা দাবানল, দীর্ঘস্থায়ী খরা এবং তাপ-সম্পর্কিত অতিরিক্ত মৃত্যুর সর্বোচ্চ হার সৃষ্টিতে অবদান রেখেছিল। এছাড়া এটি অন্যান্য ঝুঁকিও সামনে এনেছে।

চরম তাপমাত্রার কারণে একে অপরের ব্যাক আপ হিসাবে কাজ করার জন্য ডিজাইন করা দু’টি ডেটা সেন্টার এসময় অকার্যকর হয়ে যায়। এতে লন্ডনের বেশ কয়েকটি হাসপাতাল এবং কমিউনিটি পরিষেবা কেন্দ্রের বেশিরভাগ ক্লিনিকাল আইটি সিস্টেম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, যার ফলে রোগীর সেবা-যত্নে ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটে।

এমনকি অন্য দেশের পরিবর্তিত অবস্থার কারণেও ক্ষতির মুখে পড়েছে ইংল্যান্ড : যেমন, স্পেনের অসময়ের ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে যুক্তরাজ্যে সালাদ ঘাটতি দেখা দিয়েছিল।

উদ্বেগজনক-ভাবে, বর্তমানে যা দেখা যাচ্ছে তা কেবল শুরু। সিসিসি-এর অভিযোজন কমিটির প্রধান জুলিয়া কিং এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাপমাত্রার এই বৃদ্ধি আরও ক্রমবর্ধমান প্রভাব সৃষ্টি করবে এবং যতক্ষণ না আমরা নেট জিরো-তে না পৌঁছাই ততক্ষণ পর্যন্ত তাপমাত্রার এই বৃদ্ধি বন্ধ হবে না।

আমরা মোটামুটি আরও তিন দশক ধরে ক্রমবর্ধমান জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা করছি। আর তাই গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়ায় ছাড়িয়ে যাওয়া মোটামুটি স্বাভাবিক হতে বেশি সময় লাগবে না।

অবশ্য পরিচিত এই ঝুঁকির জন্য প্রস্তুতি এবং সংকট মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য ‘একটি দশক’ হারিয়ে ফেলেছে বলে মনে করেন কিং। যুক্তরাজ্যে সরকারি ব্যয় বহু বছর ধরে অনেক কম, যার মানে হলো- অবকাঠামো এবং পরিষেবাগুলো পুরনো ও দুর্বল। তবে জ্বালানিখাতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের ব্যবহারকে ত্বরান্বিত করার জন্য বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা একটি সরকারি পরিকল্পনায় সামান্য কিছু নতুন ব্যয় রয়েছে।

বৈশ্বিকভাবে এবং অভ্যন্তরীণভাবে যে কোনো দুর্যোগে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইউনিভার্সিটি অব বনের অধ্যাপক লিসা শিপার জোর দিয়ে বলছেন, সকল অভিযোজন পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে সমতা। আর সেটি না হলে ছোট অংশের লোকদের সাহায্য করতে গিয়ে সম্ভবত অন্যদের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তোলার মতোই কাজ হবে।

উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে- প্লাবনভূমি নির্মূল করা পুরুষদের জীবিকা রক্ষা করে ঠিকই, কিন্তু দরিদ্র ও ভূমিহীন নারীদের খাদ্য ও অর্থনৈতিক সুযোগ বন্ধ করে দেয়।

সিসিসি-এর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ক্রিস স্টার্কের মতে, যুক্তরাজ্যের লোকেরা ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন, বিশেষ করে যাদের অনেকেই প্লাবনভূমিতে বা অত্যধিক গরম হয়ে যাওয়া বাড়িতে বাস করেন এবং তারা এখন এই বিষয়ে পদক্ষেপ চাইছেন। আর তাই অর্থনীতিকে আরও জলবায়ু সহনশীল করার দায়িত্ব পরিবেশ, খাদ্য ও গ্রামীণ বিষয়ক বিভাগের।

যেমন শহুরে নকশায় গাছকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা বন্যার ঝুঁকি কমাতে পারে, শহরকে শীতল রাখতে সাহায্য করতে পারে, সুস্থতা ও স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে এবং বায়ু দূষণও কমাতে পারে।

ব্রিটিশ সরকার ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে তার তৃতীয় জাতীয় অভিযোজন প্রোগ্রাম প্রকাশ করবে। আশা করা যায়, ওই প্রোগ্রামে সিসিসি-এর সুপারিশগুলো গ্রহণ করা হবে এবং সেই সব দরিদ্র দেশগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে সরকার শিখবে যারা এই বিষয়ে আদর্শ দেশে পরিণত হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড