আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ার রাজধানী পেশোয়ারের পুলিশ লাইন এলাকার মসজিদে বোমা হামলার ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮৩ জনে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে আহতের সংখ্যা বেড়ে ১৫৭ জনে পৌঁছে গেছে। খবর দ্য ইনডিপেন্ডেন্ট।
হামলায় হতাহতদের যে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, সেই লেডি রিডিং হাসপাতালের মুখপাত্র মোহাম্মদ আসিম পাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক ডনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গতকাল সোমবার (৩০ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে পেশোয়ারের সেই মসজিদটিতে যখন বোমা বিস্ফোরিত হয়, তখন জোহরের নামাজ পড়ানো হচ্ছিল। আজ মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তাদের বরাতে পাক মিডিয়া জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়- নামাজের সময় পুলিশ লাইন্স এলাকার সেই মসজিদের সামনের সারিতে উপস্থিত ছিলেন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী। যেখানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেকেও উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
শক্তিশালী সেই বিস্ফোরণের ধাক্কায় মসজিদটির একপাশের দেয়াল ও ছাদ ধসে পড়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনেকে চাপা পড়ে আছেন। আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধারে অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন পেশোয়ারের পুলিশ কমিশনার রিয়াজ মেহসুদ।
রিয়াজ মেহসুদ দ্য ডনকে বলেন, পেশোয়ারের হাসপাতালগুলোতে ইতোমধ্যে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে এবং হতাহতদের সেরা চিকিৎসা সেবা দিতে বলা হয়েছে।
ভয়াবহ এই হামলায় নিহতদের অধিকাংশই দেশটির পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তা। যদিও বোমা হামলাকারী কীভাবে প্রাচীর ঘেরা মসজিদের ভেতরে ঢুকে পড়েছিলেন তা স্পষ্ট নয়। নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জিও নিউজ বলছে, সোমবার যোহরের নামাজের সময় পুলিশ লাইন্স এলাকার মসজিদের সামনের সারিতে উপস্থিত ছিলেন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী। যেখানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেকেও উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
এবার যে এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেখানে পেশোয়ার পুলিশ, সিটিডি, এফআরপি, এলিট ফোর্স এবং টেলিযোগাযোগ বিভাগের সদর দফতর রয়েছে।
সশস্ত্র কট্টরপন্থি তালেবান গোষ্ঠীর পাকিস্তান শাখা তেহরিক-ই তালেবান (টিটিপি) ইতোমধ্যে হামলার দায় স্বীকার করেছে। টিটির কমান্ডার সারবাকাফ মোহমান্দ টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, গত বছরের আগস্টে নিরাপত্তা বাহিনীর এক অভিযানে তার ভাই উমর খালিদ মোহমান্দ নিহত হয়েছিলেন। ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতেই পেশোয়ারের মসজিদে সে হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন সারবাকাফ।
খাইবার পাখতুনওয়া প্রাদেশিক সরকারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) জ্যেষ্ঠ নেতা মাহমুদ খান হতাহতদের জন্য রক্ত দিতে পিটিআই নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) প্রেসিডেন্ট শেহবাজ শরিফও নিজ দলের নেতা-কর্মীদের রক্ত দিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
পাকিস্তানি তালেবান কারা?
যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্র আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন সশস্ত্র তালেবান গোষ্ঠীর মতোই পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক সরকারকে উচ্ছেদ করে নিজেদের সরকার গঠন করতে চায় তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। পাকিস্তানজুড়ে শরিয়া আইন চালুর দাবিতে বেশ কয়েক বছর ধরে তৎপরতা চালিয়ে আসছে তেহরিক-ই-তালেবান। এর আগে কয়েকবার টিটিপি ও পাকিস্তানের সরকারের মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে সেসব উদ্যোগ।
দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে এই গোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সর্বশেষ গত বছরের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত উভয়পক্ষের অস্ত্রবিরতি কার্যকর ছিল।
পাকিস্তানের নারী শিক্ষা অধিকার কর্মী ও শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাইকে হত্যাচেষ্টার মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বে পরিচিতি পায় টিটিপি। রয়টার্সের তথ্যমতে, টিটিপির একের পর এক আত্মঘাতী হামলা ও বোমা হামলায় এরই মধ্যে পাকিস্তানের কয়েক হাজার সামরিক-বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় টিটিপির সক্রিয়তা থাকলেও খাইবার-পাখতুনখোয়া তাদের প্রধান ঘাঁটি অঞ্চল। আফগানিস্তানের সঙ্গে এই প্রদেশের সীমান্ত থাকায় আফগান তালেবানদের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ বেশ ঘনিষ্ঠ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে এক বছরের অস্ত্র বিরতির চুক্তি করেছিল টিটিপি। সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২২ সালের নভেম্বরে। পরে সেই চুক্তি নবায়নের কোনো উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি।
এ দিকে চুক্তি শেষ হওয়ার পর চলতি বছরের শুরু থেকেই নাশকতা শুরু করেছে টিটিপি। গত ১৪ জানুয়ারি পেশোয়ার পুলিশের ডেপুটি সুপারিন্ডেন্টসহ দুই কনস্টেবলকে গুলি করে হত্যা করেছে টিটিপি। তারপর ২২ জানুয়ারি পুলিশের একটি গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ার ঘটনাও ঘটেছে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড