আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আরবি বর্ষপঞ্জিতে আজ ৯ জিলহজ। ইয়াওমুল আরাফা বা হাজিদের আরাফার ময়দানে অবস্থানের দিন। গুরুত্বপূর্ণ এই দিনকেই মুসলমানদের কাছে হজের দিনও বলা হয়। এ বছর শুক্রবার (৮ জুলাই) ইয়াওমে আরাফা। আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে বিশ্বের ১০ লক্ষাধিক হজযাত্রী সমবেত হচ্ছেন ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে।
তাদের কণ্ঠে সমস্বরে উচ্চারিত হচ্ছে- লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়ালমুক। অর্থাৎ- আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সম্রাজ্যও তোমার।
মহামারি করোনা ভাইরাসের ভয়াল সংক্রমণের কারণে গত দুই বছর সীমিত পরিসরে হজ পালনের পর এবার ১০ লাখ মুসলিম আরাফার মাঠে সমবেত হবেন। এখানেই হজের খুতবা প্রদান করা হবে। এই সেই আরাফাতের ময়দান, যেখানে দাঁড়িয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তার বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি বুকে ধারণ করে মুসলিমরা সমবেত হচ্ছেন এই মরুর প্রান্তরে।
কোভিডের বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার পর এই হজ নিয়ে দারুণ খুশি হজযাত্রীরা। পবিত্র কাবা ঘরকে তাওয়াফ করে বুধবার থেকে হজযাত্রীরা মিনায় সমবেত হতে শুরু করেন। গত বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) মক্কায় তাপমাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই প্রখর রোদে হজযাত্রীরা অবস্থান করেন মিনায়।
আজ ফজরের পর থেকেই হাজিগণ মিনা থেকে আরাফার ময়দানে উপস্থিত হবেন। এখানে জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে আদায় করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করতে হবে। আরাফার ময়দানে অবস্থান তথা উ’কুফে আরাফা হজের একটি ফরজ আমল। যদিও দুপুরে সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে যাওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফার ময়দানে অবস্থান করা ওয়াজিব। কেউ যদি সূর্যাস্তের পূর্বে আরাফার সীমা অতিক্রম (ত্যাগ) করে তাহলে তাকে অবশ্যই দম (অতিরিক্ত পশু কুরবানি করা) দিতে হবে। মাগরিবের আজান পরে হাজিগণ মুজদালিফার উদ্দেশে রওয়ানা করবেন। মুজদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে আদায় করে বিশ্রাম নেবেন।
এরপর পাথর সংগ্রহ করবেন জামারায় প্রতীকী শয়তানকে নিক্ষেপের জন্য। এদিন রাতে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করবেন তারা। তারপর শনিবার সকালে সূর্যোদয়ের পর পাথর নিক্ষেপ করবেন হজযাত্রীরা। এরপর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কুরবানি করবেন। কুরবানি করে মাথা মুণ্ডন করবেন। এহরাম খুলে পরবেন সাধারণ পোশাক। আবার কাবাঘর তাওয়াফ করবেন। সাফা-মারওয়ায় সাতবার চক্কর দেবেন। এরপর আবার ফিরে যাবেন মিনায়।
বিদেশি হজযাত্রীদের জন্য কোভিড মহামারির ২ বছর পর সীমান্ত খুলে দেওয়া রিয়াদ সরকার অবশ্য বিগত যে কোনো বছরের তুলনায় এবার হাজিদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়ে অত্যন্ত সজাগ। কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সৌদি দৈনিক আরব নিউজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চলতি বছর হজযাত্রীদের জন্য ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র দুই শহর মক্কা ও মদিনায় ২৩টি হাসপাতাল ও ১৪৭টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এছাড়া মিনা শহরেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৪টি হাসপাতাল ও ২৬টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। হাসপাতালগুলোর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ১ হাজারেরও বেশি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে, আর এসব শয্যার মধ্যে ২০০টিরও বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের জন্য।
পবিত্র মক্কা, মদিনা ও মিনায় হজযাত্রীদের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা দিতে নিয়োগ করা হয়েছে হাজার হাজার ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী। কেবল মিনাতেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে।
করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর পবিত্র হজে ছিল নানা বাধ্যবাধকতা। তবে এবার অনেকটা মুক্ত অবস্থায় পালিত হচ্ছে হজ। তাই হজযাত্রীদের মধ্যে অন্যরকম এক আবেগ কাজ করছে। তারা মুখে মাস্ক ছাড়াই হজ করতে পারছেন। করোনা ভাইরাসের অনুমোদিত টিকার সম্পূর্ণ ডোজ নিয়েছেন- এমন ১০ লাখ হজযাত্রী হজ পালন করছেন। এর মধ্যে ৮ লাখ ৫০ হাজার হজযাত্রী বিদেশি। বাকিরা সৌদি আরবের নাগরিক।
উল্লেখ্য, ইসলাম ধর্মের পাঁচটি প্রধান স্তম্ভের মধ্যে হজ অন্যতম। করোনা মহামারির আগ পর্যন্ত প্রতি বছর লাখ লাখ মুসলিম সৌদি আরবে যেতেন হজ পালন করতে। মহামারির আগের বছর দেশটিতে হজ পালন করতে গিয়েছিলেন ২৫ লাখ হজযাত্রী। মহামারির ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে কারণে ২০২০ সালে বিদেশি হজযাত্রীদের জন্য সীমান্ত বন্ধ করে সৌদি সরকার, দেশের নাগরিকদেরও হজ করতে নিরুৎসাহিত করা হয়। বিশেষ অনুমতিতে ওই বছর মাত্র কয়েক হাজার মানুষ হজ করেছিলেন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড