কামরুজ্জামান হেলাল, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি
প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল জজ হচ্ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক নুসরাত জাহান চৌধুরী। পেশা হিসেবে তিনি একজন আইনজীবী।
দেশটির নিউইয়র্ক শহরের একটি ফেডারেল জেলা আদালতে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন তিনি। এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাকে বিচারক হিসেবে মনোনীত করেছেন।
বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বিভিন্ন বিচার বিভাগীয় মনোনীতদের তালিকা ঘোষণা করার সময় হোয়াইট হাউস থেকে তথ্যটি জানানো হয়। মার্কিন সিনেটে অনুমোদিত হলে তিনিই হবেন প্রথম মুসলিম নারী এবং দ্বিতীয় মুসলমান বিচারক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল জজ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক।
নুসরাত চৌধুরী বর্তমানে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের (এসিএলইউ) ইলিনয় অধ্যায়ের আইনি পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। এটি মূলত একটি নাগরিক অধিকার আদায়ের সংগঠন। তিনি এর আগে নিউইয়র্কে এসিএলইউর জাতিগত বিচার কর্মসূচির উপপরিচালকসহ বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন।
তিনি ফেডারেল সরকারের নো ফ্লাই লিস্ট এবং নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের শহরের মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নজরদারির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করে মামলাসহ অসংখ্য নাগরিক অধিকারের মামলায় জড়িত ছিলেন।
আরও পড়ুন : রোহানাকে ভালো মুসলিম হিসেবে গড়ে তুলেছি
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ডেমোক্র্যাটিক সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা চাক শুমার আনুষ্ঠানিকভাবে নুসরাত চৌধুরীকে নিউইয়র্কের ফেডারেল বেঞ্চে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছিলেন এবং তাকে ‘নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতার বিশেষজ্ঞ’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
মুসলিম-আমেরিকান আইনজীবীদের সংস্থা মুসলিম অ্যাডভোকেটস শুমার এবং তার সহযোগী নিউইয়র্কের সিনেটর কার্স্টেন গিলিব্র্যান্ডকে সেই বছরের শুরুতে নুসরাত চৌধুরীর মনোনয়নের জন্য অনুরোধ করেছিল।
বুধবার গ্রুপটি ‘এই ঐতিহাসিক মনোনয়ন দেওয়ার জন্য’ জো বাইডেন এবং শুমারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। মুসলিম অ্যাডভোকেটস বলছে, নুসরাত চৌধুরী এমন এক সময়ে মুসলিম এবং অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার রক্ষার জন্য তার কর্মজীবন উৎসর্গ করেছেন, যখন বিচারব্যবস্থায় স্পষ্টতই বৈষম্য চলছিল। তিনি বিচারব্যবস্থাকে ন্যায়বিচারের দিকে ঠেলে নিয়ে যাবেন এবং এমন এক সময়ে নুসরাত চৌধুরী প্রথম মুসলিম নারী, প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান এবং দ্বিতীয় আমেরিকান মুসলিম হিসেবে একজন ফেডারেল বিচারক হিসেবে কাজ করবেন, যখন ঘৃণা এবং বিভাজন আমাদের আলাদা করে দিচ্ছে।
নুসরাত জাহানের বাবার নাম ড. নুরের আর চৌধুরী এবং মায়ের নাম নুসরাত নাফিসা এ চৌধুরী। তার জন্মের আগে তার বাবা বাংলাদেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।
তার মা নর্থব্রুক, ইলিনয় এবং আশপাশের অঞ্চলে ব্যাকরণ স্কুল এবং মিডল স্কুলগুলোর জন্য খাদ্য-পরিষেবা সমন্বয়কারী ছিলেন।
আরও পড়ুন : বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যের শীর্ষে দুবাই
ডা. নুরের আর চৌধুরী শিকাগোর নাজারেথ হাসপাতালের সেন্ট মেরিসের নিউরোলজির প্রধান এবং শিকাগোর ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজির সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। ২০১২ সালে গ্রাফিক ডিজাইনার মাইকেল আর্লিকে বিয়ে করেন নুসরাত।
ইউএস ফেডারেল আদালত ফেডারেল অপরাধ এবং দেওয়ানি মামলার আইনি প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করে। বিচারিক পর্যালোচনা করার এবং মার্কিন সংবিধানের লঙ্ঘন করলে রাষ্ট্র ও ফেডারেল আইনগুলো রদ করারও ক্ষমতা রয়েছে তাদের।
সমস্ত মার্কিন ফেডারেল মামলা প্রথমে জেলা আদালতে শুরু হয় এবং মার্কিন আপিল আদালতে আপিল করতে পারে। আর দেশের শীর্ষ আদালত হিসেবে ফেডারেল বিচারব্যবস্থায় আপিলের তৃতীয় এবং চূড়ান্ত স্তর হলো মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট সমস্ত ফেডারেল বিচারক নিয়োগ করেন। যদিও তার মনোনয়নের পর মার্কিন সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের মাধ্যমে তাদের নিয়োগ নিশ্চিত হতে হয়। বুধবার হোয়াইট হাউস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিচার বিভাগীয় মনোনয়নের বৈচিত্র্য তুলে ধরে।
আরও পড়ুন : রুশ জ্বালানির নির্ভরতা কমাতে চায় ফ্রান্স
উল্লেখ্য, ফেডারেল পাবলিক ডিফেন্ডার হিসেবে আরিয়ানা ফ্রিম্যান নামে একজনকে নিয়োগ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যিনি তৃতীয় সার্কিটের জন্য ফিলাডেলফিয়া-ভিত্তিক আপিল আদালতে প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান নারী হিসেবে কাজ করবেন।
ওডি/কেএইচআর
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন
সহযোগী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118241, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড