আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মিয়ানমারের একটি গ্রামে একত্রে ১১ জনকে গুলি করে ও পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে বার্মিজ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। সাগাইং নামে ওই গ্রামটিতে বর্বর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে বিতর্কিত সামরিক অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনীর বিরোধিতা করে দেশটিতে গড়ে ওঠা মিলিশিয়া বাহিনীর সাথে ওই গ্রামে এর আগে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, একের পর এক গুলি চালিয়ে শরীরে আগুন দেওয়ার সময়ও কয়েকজন জীবিত ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনার একটি ভিডিয়ো ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া মিয়ানমার নাউয়ের মতো কিছু পোর্টালে ঘটনার ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নিয়ে যে জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) গঠিত হয়েছিল ওই সরকার নিহত ১১ জনের একটি তালিকাও প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, নিহতদের মধ্যে ১৪ বছরের এক কিশোরসহ আরও ৫ কিশোর রয়েছে। তাদের সবাইকে জীবিত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
আরও পড়ুন : সাজা কমল সু চির
ভয়াবহ এ ঘটনার বিষয়ে জান্তা সরকারের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ দিকে এলাকাটিতে কাজ করা একজন স্বেচ্ছাসেবক পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকালের দিকে সৈন্যরা ওই গ্রাসে প্রবেশ করে। এরপর বেলা ১১টার দিকে তারা হত্যাকাণ্ডটি চালায়। তবে এবার যাদের হত্যা করা হয়েছে তারা মিলিশিয়া সদস্য না সাধারণ নাগরিক তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ওই এলাকার সক্রিয় একজন মিলিশিয়া সদস্য জানান, গুলি চালাতে চালাতে গ্রামে সেনাবাহিনী ঢোকার খবর তিনি পেয়েছিলেন। যাদের আটক করা হয়েছিল তাদের হত্যা করার আগে একটি মাঠেও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিভাবে তিনি খবরটি পেয়েছেন সে সম্পর্ক কোনো মুখ খোলেননি এই সদস্য।
নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হিতেত কো নামে একজনের স্বজন রয়টার্সকে বলেছেন, সে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করত এবং সে কোনো মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্যও ছিল না। এটা ভীষণই অমানবিক।
বিশ্লেষকদের মতে, চলতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। বন্দি করা হয় গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) বিভিন্ন স্তরের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে। সু চিকে উৎখাতের মাধ্যমে বার্মিজ সেনাবাহিনী মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই দেশটিতে সংঘাত-সংঘর্ষ লেগেই আছে। সেনাবিরোধিতায় তৈরি হয়েছে পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) নামে মিলিশিয়া।
আরও পড়ুন : ফেসবুকের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ১৫০ বিলিয়ন ডলারের মামলা
অভ্যুত্থানের পর ৭৬ বছর বয়সী গৃহবন্দি সু চির বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দায়ের করে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকার। মামলাগুলো যেসব অভিযোগে করা হয়েছে তার মধ্যে, রাষ্ট্রের গোপন তথ্য পাচার, নিয়ম বহির্ভূতভাবে ওয়াকি টকি রাখা ও ব্যবহার, ক্ষমতায় থাকাকালে ঘুষ গ্রহণ, নিজের দাতব্য সংস্থার নামে অবৈধভাবে ভূমি অধিগ্রহণ ও করোনা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ায় গাফিলতিসহ উত্তেজনা সৃষ্টি এবং কোভিড-১৯ প্রোটোকল লঙ্ঘনের মাধ্যমে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ভাঙার বিষয়টি রয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ক্ষমতাচ্যুত হলেও মূলত গত জুন থেকে রাজধানী নেইপিদোর বিশেষ সামরিক আদালতে এসব মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। রয়টার্স বলছে, এসব মামলায় সু চির সর্বোচ্চ শাস্তি হলে মোট কারাদণ্ডের মেয়াদ ১০০ বছর ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি এবং দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট তাদের বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
৭৬ বছর বয়সী সু চির সমর্থকরা বলছেন, তাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে জান্তা সরকারের দায়ের করা এসব মামলা ভিত্তিহীন। তাদের অভিযোগ, সু চির রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করতেই এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অবশ্য মিয়ানমারের জান্তা সরকার বলছে, সু চির প্রশাসনের নিয়োগ করা বিচারক এবং স্বাধীন আদালতে সুষ্ঠু কার্যবিধি মেনেই এই বিচার কার্যক্রম চলছে।
আরও পড়ুন : সব ধর্মের সম্মিলন চায় চীন : জিনপিং
উল্লেখ্য, গৃহবন্দি হওয়ার পর থেকে সু চিকে খুব একটা দেখা যায়নি। যদিও জান্তা সরকারের দাবি, সু চি বর্তমানে সুস্থ আছেন এবং এরই মধ্যে তাকে মহামারি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিনও দেওয়া হয়েছে।
সূত্র : রয়টার্স, এবিসি
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড