আন্তর্জাতিক ডেস্ক
শরণার্থী ইস্যুতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একত্রে কাজ করতে চায় ইউরোপের দেশ ফ্রান্স। ফরাসি কর্তৃপক্ষের দাবি, যদিও সেই আলোচনা হতে হবে গুরুতর। রবিবার (২৮ নভেম্বর) ইউরোপিয়ান কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর মন্তব্যটি করেছেন ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন।
ব্রিটিশ মিডিয়া বিবিসি নিউজ বলছে, গত সপ্তাহে ফ্রান্স থেকে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে ব্রিটেনে প্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে নৌকা ডুবে ২৭ অভিবাসন প্রত্যাশীর মৃত্যু হয়। ভয়াবহ ওই ঘটনার পর ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন। কূটনৈতিক টানাপোড়েনে ওই আলোচনায় লন্ডনের আমন্ত্রণ বাতিল করে প্যারিস।
ক্যালাইসে অনুষ্ঠিত হওয়া ওই বৈঠকে নিজের অনুপস্থিতিকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যায়িত করেছেন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল। ব্রিটেনে পৌঁছানো শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোকে প্রকাশ্য চিঠি লেখার পর আমন্ত্রণটি বাতিল করে প্যারিস।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করে বলেন, চিঠিটি টুইটারে প্রকাশ করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পরিস্থিতির গুরুত্ব প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছেন। যদিও ব্রিটেন সরকার জোর দিয়ে দাবি করে দায়িত্ব নিয়েই চিঠিটি প্রকাশ করা হয় এবং ফ্রান্সকে আমন্ত্রণ পুনর্বিবেচনার তাগিদ দেওয়া হয়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মতে, বিদ্যমান এই সংকট আমাদের যৌথভাবে নিরসন করতে হবে।
ক্যালাইসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ সেই বৈঠকের শুরুতে ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন জানান, তিনি এই সংকট মোকাবিলায় ব্রিটেনের সঙ্গে কাজ করতে চান।
জেরাল্ড ডারমানিন দাবি করেন, ব্রিটেন ইউরোপ ছেড়েছে, কিন্তু বিশ্ব নয়। যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কাছে জিম্মি হওয়া বাদ রেখে আমাদের এই প্রশ্নে গুরুত্ব সহকারে কাজ করা উচিৎ। তিনি আরও বলেন, আমরা আর কোনো মানুষের মৃত্যু মেনে নিতে পারি না।
আরও পড়ুন : রোমানিয়ায় মার্কিন ঘাঁটি থেকে ২০ লাখ ডলারের জ্বালানি চুরি
ফরাসি প্রেসিডেন্টকে লেখা চিঠিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যে পাঁচটি পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন সেগুলো হলো-
১. ফ্রান্সের উপকূল থেকে আরও নৌকা ছেড়ে যাওয়া ঠেকাতে যৌথ টহল,
২. সেন্সর ও রাডারের মতো উন্নত প্রযুক্তি মোতায়েন,
৩. পরস্পরের আঞ্চলিক জলসীমায় টহল এবং আকাশপথে নজরদারি,
৪. যৌথ গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরালো করা,
৫. তাৎক্ষণিকভাবে ফিরিয়ে নিতে ফ্রান্সের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি।
এর আগে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে সাম্প্রতিক সময়গুলোতে বহু সংখ্যক শরণার্থী ইংল্যান্ডে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। এর আগেও বেশকিছু শরণার্থী ছোট নৌকা ভাড়া করে ইংলিশ চ্যানেল পার করার চেষ্টা করেছিলেন। এছাড়া ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে ইউরোপ থেকে বহু শরণার্থী ব্রিটিশ ভূখণ্ডে চলে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন। এর আগেও নৌকাডুবিতে মৃত্যু হয়েছে অনেক মানুষের।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানায়, ইংলিশ চ্যানেলে একটি খালি ডিঙ্গি নৌকা এবং আশপাশে বহু নিশ্চল ও নিথর মানুষকে ভেসে থাকতে দেখে স্থানীয় এক ব্যক্তি উদ্ধারকারী সংস্থার কাছে বার্তা পাঠান। মূলত এর পরপরই ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য যৌথভাবে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। উভয় দেশের এই উদ্ধার তৎপরতায় কমপক্ষে তিনটি নৌকা এবং তিনটি হেলিকপ্টার অংশগ্রহণ করে।
আরও পড়ুন : করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ব
সম্প্রতি ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন জানিয়েছিলেন, নৌকাডুবির এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এরই মধ্যে চার ব্যক্তিকে আটক করেছে ফ্রান্সের পুলিশ। তিনি ইংলিশ চ্যানেলে এই নৌকাডুবি ও হতাহতের ঘটনাটিকে তার দেখা সবচেয়ে বড় অভিবাসী বিপর্যয় বলে মন্তব্য করেছেন।
এছাড়া ইংলিশ চ্যানেল থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দু’জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এরপর তাদেরকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। দীর্ঘসময় ধরে তীব্র ঠান্ডা পানির মধ্যে থাকার করণে তারা গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া নিহতদের পরিচয় এবং তারা ঠিক কোন দেশের নাগরিক তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
অবশ্য, ইংলিশ চ্যানেলে নৌকাডুবির এমন ঘটনা এবারই প্রথম নয়। অতীতে সাঁতার কেটে ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতেও চেষ্টা করেছিলেন শরণার্থীরা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইংলিশ চ্যানেল পার করার সময় এক হাজার ৩০০ শরণার্থীকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি ফ্রান্স সরকারের।
আরও পড়ুন : পেরুতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছিল। আর ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ব্রিটেন-ফ্রান্সকে বিভক্তকারী এই পানিতে সাতজনের মৃত্যু হয়।
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড