আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় ১১ মাসের মাথায় প্রথমবারের মতো চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জো বাইডেন।
সোমবার (১৬ নভেম্বর) ভার্চ্যুয়ালি এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উভয় নেতা এমন এক সময়ে এই বৈঠকে বসলেন যখন তাইওয়ান, হংকং এবং উইঘুরদের সাথে বেইজিংয়ের আচরণ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে।
ভার্চ্যুয়াল এই বৈঠকে অংশ নিয়ে জো বাইডেন এবং শি জিনপিং তাইওয়ানের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছেন। বৈঠকে বৈশ্বিক এই দুই পরাশক্তি নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযাগ ও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়ানোর কথা বললেও সংঘাতের ব্যাপারে সুরও চড়িয়েছে।
বৈঠকের পর মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা দেন যে, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তাইওয়ানকে উৎসাহিত করা বা সামনে ঠেলে দিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। এবং তাইওয়ান ইস্যুতে নিজেদের নীতিও পরিবর্তন করবে না ওয়াশিংটন। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে রুশ সংবাদমাধ্যম স্পুটনিক।
হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, ‘আমরা কোনোভাবেই আমাদের নীতি পরিবর্তন করবো না। (স্বাধীনতার ব্যাপারে) তাইওয়ানকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা নেব না। স্বাধীনতার ব্যাপারে আমরা উৎসাহ দেবো না। তবে তাইওয়ান চুক্তি মেনে চলার ব্যাপারে আমরা বলতে পারি।’
১৯৭৯ সালের তাইওয়ান চুক্তি বা ‘তাইওয়ান রিলেশনস অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, কূটনৈতিক সম্পর্কের দিক থেকে তাইপের বদলে বেইজিংকে প্রাধান্য দেবে ওয়াশিংটন। এর বদলে চীন তাইওয়ানে অস্থিরতা সৃষ্টি থেকে বিরত থাকবে এবং তাইওয়ানের ভবিষ্যৎ শান্তিপূর্ণভাবে নির্ধারিত হবে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যে জো বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কারভাবে বলেছি যে- আমরা তাইওয়ান চুক্তি সমর্থন করি এবং এটিই (মূল কথা)।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘তারা (তাইওয়ান) স্বাধীন। তারা নিজেরাই তাদের সিদ্ধান্তগুলো নেবে।’
এর আগে সোমবার এই চীনা ও মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সময় ধরে চলা ওই বৈঠকটি সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের পর চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, শি জিনপিং বাইডেনকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন— তাইওয়ানের স্বাধীনতায় উৎসাহ দেওয়া হলে তা আগুন নিয়ে খেলার মতো হবে।
‘যুক্তরাষ্ট্রের কিছু মানুষ চীনকে নিয়ন্ত্রণের জন্য তাইওয়ানকে ব্যবহার করতে চায়। এই প্রবণতা অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং এটি আগুন নিয়ে খেলার মতোই। যারা আগুন নিয়ে খেলবে, তারা পুড়ে যাবে।’ শি জিনপিং মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এভাবে সতর্ক করে দিয়েছেন, বলছে সিনহুয়া।
অন্যদিকে এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস জানায়, ‘তাইওয়ানের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জোর দিয়ে বলেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র... তাইওয়ানের মর্যাদার পরিবর্তন অথবা তাইওয়ান প্রণালীজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার একতরফা প্রচেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করে।’
বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের তাইওয়ানের স্বাধীনতার স্বীকৃতি না দেওয়ার নীতির পুনরাবৃত্তি করা হলেও এই দ্বীপের প্রতিরক্ষায় সমর্থন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, বৈঠকে তাইওয়ানের বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ চীন সাগরে তাইওয়ান নিয়ে বৈশ্বিক এই দুই পরাশক্তির মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে রয়েছে। তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে চীন। সম্প্রতি তাইওয়ানের আকাশসীমা লঙ্ঘন থেকে শুরু করে একাধিক সামরিক শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে বেইজিং।
আরও পড়ুন : ফের আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, নিহত ২২
দক্ষিণ চীন সাগরে তাই এখন যুদ্ধের পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আর তাইওয়ান নিজেদের স্বাধীনতা হারানোর ভয়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলেন, চীনের হাত থেকে তাইওয়ানকে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর যুক্তরাষ্ট্র। আর বাইডেনের এই ঘোষণায় কোনো ভাবেই সন্তুষ্ট ছিল না চীন।
আর তাই তাইওয়ানকে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর বাইডেনের সঙ্গে তাইওয়ানের স্বাধীনতায় উৎসাহ না দেওয়া বা তাইওয়ান চুক্তি মেনে চলার বিষয়ে তার ঘোষণায় এটিই বোঝা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম এই প্রেসিডেন্ট কার্যত সাপ মারতে চান, তবে লাঠিটা অক্ষত রেখেই।
ওডি/জেআই
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড