আন্তর্জাতিক ডেস্ক
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জলবায়ু সম্মেলনে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় ধনী দেশগুলো বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার করে সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা ও দাবদাহের মতো একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করতে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, গ্লাসগোতে কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনের শুক্রবার শেষ দিন। আগামী বছরের শুরুর দিকে খসড়া প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু তার আগেই এএফপি এই প্রতিবেদন–সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে।
চার হাজার পাতার ওই খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের হিসাব–নিকাশ বদলে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে খরচের যে পরিমাণ ধারণা করা হয়েছিল, দেখা যাচ্ছে তা যথেষ্ট নয়।
ছয় বছর আগে প্রাক-শিল্পায়নের সময় থেকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য ১৯৬টি দেশ প্যারিস চুক্তিতে সম্মত হয়। এর মধ্যেই ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পযুগ থেকে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে।
আর এতেই বিশ্বব্যাপী বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, দাবানলসহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয় বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। জাতিসংঘের হিসাব বলছে, এবারের সম্মেলনে বিভিন্ন দেশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর কথা বললেও, তাপমাত্রা ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়াবে।
এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে এরই মধ্যে আইপিসিসি সতর্কতা জারি করেছে। তারা বলছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি মানেই এর প্রভাব থেকে মানুষকে বাঁচাতে খরচ বেড়ে যাওয়া। ২০৫০ সালের মধ্যে এই খরচের পরিমাণ বছরে এক ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। আর তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে শুধু আফ্রিকাতেই প্রতি বছর কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
১০০ বিলিয়নের সহায়তা একেবারেই সেকেলে
২০০৯ সালে জলবায়ু পরিবর্তন সামলাতে ভুক্তভোগী রাষ্ট্রগুলোকে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার করে সহায়তার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বলা হয়েছিল, ২০২০ সালের মধ্যে এই সহায়তা কার্যকর হবে। তবে তা আবার ২০২৩ সাল পর্যন্ত পেছানো হয়েছে।
আরও পড়ুন : ভৌতিক সৈন্যদের কারণেই আফগান সরকারের পতন
প্রায় এক দশক পুরনো ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তার পরিমাণকে একেবারেই সেকেলে বলে মন্তব্য করেছেন ইউনিয়ন অব কনসার্নড সায়েন্টিস্টের অর্থনীতিবিদ রাচেল ক্লিটাস। এএফপির প্রতিবেদককে তিনি বলেন, আমরা যদি ২০২৫ সালের পরের কথা বলি, তখন আদতে ট্রিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন পড়বে।
কেনিয়ার থিংক ট্যাংক পাওয়ার শিফট আফ্রিকার প্রধান মোহাম্মদ আদৌও একই কথা বলছেন। তিনি বলছেন, জলবায়ু–সংকট নিরসনে উন্নয়নশীল বিশ্বের আর্থিক চাহিদার কানাকড়িও মিটবে না ১০০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তায়।
দক্ষিণ মাদাগাস্কারে খরা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছে যে ওই অঞ্চলের মানুষ এখন ক্ষুধার জ্বালায় পোকামাকড়ও খাচ্ছে
দক্ষিণ মাদাগাস্কারে খরা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছে যে ওই অঞ্চলের মানুষ এখন ক্ষুধার জ্বালায় পোকামাকড়ও খাচ্ছে।
এড়ানো যাবে বড় অঙ্কের ক্ষতি
বিদ্যমান জলবায়ু–সংকটের কারণে মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে বিশ্ব। আইপিসিসি বলছে, অভিযোজন ব্যয় বাড়ালে ক্ষতি বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান পরিস্থিতিতে আগে থেকেই বন্যা ঠেকানো বা এ ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হলে শুধু চীনের গুয়াংঝাউ এলাকায় বন্যায় বছরে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে এক ট্রিলিয়ন ডলারের চার ভাগের এক ভাগ।
তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে সংকট আরও গভীর হবে। পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হলে বছরে শহরটিতে ক্ষতির পরিমাণ হবে এক ট্রিলিয়ন ডলারের পুরোটাই। একই ধরনের ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বে ভারতের মুম্বাইসহ নিচু এলাকার শহরগুলোও।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, বন্যার কারণে আফ্রিকায় প্রতিবছর গড়ে ২৭ লাখ মানুষ বসবাসের স্থান ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবে। এটা ঘটবে চলতি শতকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই। এ ছাড়া শস্যের ফলন কমবে। পড়তির দিকে যাবে ফসলের পুষ্টিগুণও। এতে পুষ্টিহীনতা দেখা দেবে। শুধু তা–ই নয়, তাপমাত্রা বৃদ্ধি মানুষের উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেবে। চাপ পড়বে স্বাস্থ্যসেবার ওপর।
আরও পড়ুন : আফগান ইস্যুতে পাকিস্তানের ওপর ক্ষিপ্ত ভারত
আইপিসিসির হিসাব অনুযায়ী, জলবায়ু–সংকট মোকাবিলায় অবকাঠামো নির্মাণ, কৃষিকাজ, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সংরক্ষণের মতো খাতগুলোতে আগামী এক দশকে ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করলে তা থেকে ৭ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব।
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড