• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ইরাকে সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু 

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১০ অক্টোবর ২০২১, ১৬:২৬
ইরাকে সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু 
ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন ইরাকি জনগণ (ছবি : আনাদোলু এজেন্সি)

দুর্নীতি, অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় জর্জরিত মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্র ইরাকে সাধারণ নির্বাচনে ভোট দিচ্ছে জনগণ।

রবিবার (১০ অক্টোবর) এ ভোটকে দেশটিতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির পরীক্ষা হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

অনেক ইরাকিই বলছেন, ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বাহিনীর আগ্রাসনের হাত ধরে যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি এসেছে তার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন তারা।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সুবিধা দিতে করা নতুন একটি আইনের আওতায় নির্ধারিত সময়ের কয়েক মাস আগেই এবারের সাধারণ নির্বাচনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। দুই বছর আগে সরকারবিরোধী বড় গণআন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় এ আইনটি করা হয়।

২০১৯ সালের ওই আন্দোলন দেশটির যে অভিজাত শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হয়েছিল, এবারের নির্বাচনেও তারাই সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এবারের ভোটের ফল ইরাক বা মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যে নাটকীয় কোনো পরিবর্তন আনবে না বলে মনে করছেন ইরাকি কর্মকর্তা, বিদেশি কূটনীতিক ও বিশ্লেষকরাও; তবে তারপরও আশাবাদী অনেক ইরাকি।

২০০৩ সালের পর দেশটিতে হতে যাওয়া পঞ্চম সংসদীয় ভোট নিয়ে তাদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহও দেখা গেছে।

‘আমি অনেক সকালে এসেছি যেন সবার আগে ভোট দিতে পারি, আশা করছি এই ভোট পরিবর্তন নিয়ে আসছে। পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হবে বলে প্রত্যাশা আমাদের’। উত্তরাঞ্চলীয় শহর কিরকুকের এক ভোটকেন্দ্রের বাইরে এমনটাই বলেছেন কেন্দ্র খোলার ঘণ্টা খানেক আগে চলে আসা আবু আব্দুল্লাহ।

আরও পড়ুন : ইরান-রাশিয়া ইস্যুতে ভারতের ‘কাবুল-তাস’

এবারের নির্বাচনে পার্লামেন্টের ৩২৯টি আসনের জন্য অন্তত ১৬৭টি দল ও তিন হাজার ২০০-র বেশি প্রার্থী লড়ছে বলে জানিয়েছে ইরাকের নির্বাচন কমিশন।

দেশটিতে গত কয়েক দশক ধরেই নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা ঠিক করতে বিভিন্ন দলের মধ্যে মাসের পর মাস আলোচনা, দরকষাকষি হয়ে আসছে।

পশ্চিমাপন্থি হিসেবে পরিচিত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা আল-কাদিমি রবিবার ভোট দেওয়ার সময় বলেছেন, ইরাকি জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, এখনো সময় আছে। বেরিয়ে আসুন, ইরাকের জন্য ভোট দিন, আপনার ভবিষ্যতের জন্য ভোট দিন।

২০১৯ সালে হওয়া শাসকগোষ্ঠী বিরোধী আন্দোলনের চাপে কাদিমির আগের প্রশাসনকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল। বিক্ষোভকারীদের দাবির মধ্যে ছিল, অভিজাত শাসকগোষ্ঠীর অপসারণ; বেশিরভাগ ইরাকিই এই অভিজাতদের ‘দুর্নীতিবাজ’ হিসেবে দেখে, দেশের ‘ভগ্নদশার’ জন্য তাদের দায়ী মনে করে।

কয়েক মাসের ওই বিক্ষোভকে চাপা দেওয়া হয়েছিল ব্যাপক দমন-পীড়নের মাধ্যমে, সে সময় নিহত হয়েছিল প্রায় ৬০০ জন।

কয়েক বছর আগেও সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) যখন সক্রিয় ছিল, সে সময়কার পরিস্থিতির তুলনায় দেশটি এখন অনেক নিরাপদ। সহিংস গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও অনেক কম।

২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক সামরিক জোট ও ইরানের সহায়তায় ইরাক থেকে আইএসকে হটিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল।

যদিও মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় ৪ কোটি জনসংখ্যার দেশটির অসংখ্য মানুষ এখন কর্মহীন; স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বিদ্যুতের ঘাটতিও প্রকট।

আরও পড়ুন : আফগান ইস্যুতে আলোচনায় বসছে রাশিয়া

ইরাকের ওপর প্রভাব বিস্তারে দুটি পক্ষ সক্রিয়। এক পক্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র, উপসাগরীয় আরব দেশগুলো এবং ইসরায়েল। অন্য পক্ষে ইরান। সিরিয়া ও লেবাননে সক্রিয় ছায়া মিলিশিয়া বাহিনীগুলোকে তেহরান ইরাকের ভেতর দিয়েই সহায়তা পাঠিয়ে আসছে।

২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর অভিযান সুন্নি মুসলিম সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া এবং কুর্দিদের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে। সাদ্দামের আমলে শিয়া ও কুর্দিরা নিষ্পেষিত ছিল।

ক্ষমতার এই পালাবদল দেশটিকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার দিকে ঠেলে দেয়, যার ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট ইরাকের এক তৃতীয়াংশ দখলে রাখতে পারে।

রবিবারের নির্বাচনে শিয়া ধর্মীয় নেতা মোক্তাদা আল-সদরের প্রভাব আরও সুসংহত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইরাকে বিদেশিদের প্রভাব বিস্তারের বিরোধিতা করে আসা সদর ইরাকের ইরানপন্থি শিয়া গোষ্ঠীগুলোরও বিরোধী।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই দুই পক্ষকেই ইরাকের ক্ষমতায় কে বসতে যাচ্ছেন, কারা নতুন প্রধানমন্ত্রী-প্রেসিডেন্ট হবেন, তা নির্ধারণে দরকষাকষিতে বসতে হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

রবিবার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে কারবালা ও আনবার প্রদেশের দুটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কয়েক মিনিট দেরিতে শুরু হয়। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তেলসমৃদ্ধ প্রদেশ বসরার বেশ কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট শুরুতেও আধা ঘণ্টার বেশি দেরি হয়েছে।

ভোটের ফল বের হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট বারহাম সালিহ ১৫ দিনের মধ্যে নতুন পার্লামেন্টের বৈঠক ডাকবেন, যেখানে স্পিকার নির্বাচিত হবে। এর পরের ৩০ দিনে পার্লামেন্টকে নতুন প্রেসিডেন্টও ঠিক করতে হবে।

আরও পড়ুন : নজিরবিহীন কয়লা সংকটে ভারত, আঁধারে ডুবার শঙ্কায় দিল্লি

নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া জোট এরপর নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করে তাকে সরকার গঠন করতে বলবে। এই পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে।

ওডি/কেএইচআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড