আন্তর্জাতিক ডেস্ক
রাশিয়ায় সদ্য সমাপ্ত পার্লামেন্ট নির্বাচনে ৪৯ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দল ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি। সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে তথ্যটি নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দেশটিতে শুরু হয়েছিল জাতীয় আইনসভা দুমার নির্বাচন। আর তা রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬ টার দিকে শেষ হয়েছে। রাশিয়ার মোট ভোটারের ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবারের নির্বাচনে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
ভোটগ্রহণ সমাপ্ত হওয়ার পর শুরু হয় ভোট গণনার কাজ। সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত ৭৪ শতাংশ ব্যালট গণনার পর দেখা যায়, ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি পেয়েছে ৪৯ শতাংশ ভোট এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কমিউনিস্ট পার্টি পেয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ ভোট।
এছাড়া রাশিয়ার জাতীয়তাবাদী অপর দুই দল এলডিপিআর পার্টি ও ফেয়ার রাশিয়া পার্টির ঝুলিতে গিয়েছে যথাক্রমে ৮ শতাংশ ও ৭ শতাংশ ভোট। এছাড়া চলতি জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাশিয়ায় গড়ে ওঠা নতুন রাজনৈতিক দল নিউ পিপল পেয়েছে ৫ শতাংশ ভোট।
বিশ্লেষকদের মতে, কমিউনিস্ট পার্টি, এলডিপিআর পার্টি এবং ফেয়ার রাশিয়া পার্টি অবশ্য নামে বিরোধী দল হলেও বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পুতিনের দল ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টিকেই সমর্থন দিয়ে থাকে।
আরও পড়ুন : নিরাপত্তারক্ষীর হাতে মার খেলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ক্ষুব্ধ মোদী
এবারের নির্বাচনে ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির প্রধান বিরোধীপক্ষ ছিল রাশিয়ায় পুতিনের সবচেয়ে বড় সমালোচক এবং দেশটির দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি ও তার সমর্থকরা।
দুর্নীতিতে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বর্তমানে কারাগারে আছেন নাভালনি। বিরোধী এই নেতার কারাবাস শুরুর পর চরমপন্থার অভিযোগ তুলে গত জুনে তার সরকারবিরোধী আন্দোলনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি, সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে নাভালনির মিত্রদেরও।
নাভালনির একাধিক সমর্থক বলেন, আমরা নোংরা নির্বাচনি কৌশলের শিকার হচ্ছি। এমনকি আমাদের নির্বাচনে সঠিকভাবে প্রতিযোগিতা করতেও দেওয়া হচ্ছে না।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দফতর ক্রেমলিন অবশ্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দমন-পীড়নের কথা অস্বীকার করেছে। নির্বাচনে যাদের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে, তা আইনানুগ ও বিধিসম্মত ভাবে হয়েছে বলে দাবি ক্রেমলিনের।
একই সঙ্গে প্রার্থীদের নিবন্ধকরণ বা রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব খাটানো হয়নি বলেও দাবি ক্রেমলিন এবং ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির।
আরও পড়ুন : যুক্তরাজ্যের সঙ্গে প্রতিরক্ষা বৈঠক বাতিল ফ্রান্সের
উল্লেখ্য, সোমবার নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত ইউনাইটেড পার্টির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা।
এদিন দেশটির জাতীয় নির্বাচন কমিশন ভোটের ফল ঘোষণার পরই রাজধানী মস্কোতে বিজয় মিছিল বের করে ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি। আর যার নেতৃত্বে ছিলেন মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন। মিছিলে সবার সামনে দলের পতাকা উঁচিয়ে তিনি স্লোগান দিচ্ছিলেন- ‘পুতিন, পুতিন, পুতিন’। আর অন্যান্যরাও তাকে অনুসরণ করছিল।
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় আইনসভা দুমার ৪৫০ আসনের মধ্যে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ আসন রয়েছে ইউনাইটেড রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। আর এই সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরেই গেল বছর দেশের সংবিধান সংস্কারের পদক্ষেপ নেয় ক্রেমলিন।
ওই সংস্কারের ফলে ২০২৪ সালের পর পুতিন আরও দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানোর অনুমোদন পান। ফলে তার সামনে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন : দক্ষিণ চীন সাগরে ‘জল ঘোলা’ করছে যুক্তরাষ্ট্র
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বছরের পর বছর যাবত জীবনযাত্রার মান নিয়ে অসন্তোষ চলছে রাশিয়ায়। তবে তা সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন দল ইউনাইটেড রাশিয়ার প্রত্যাশিত জয়কে প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতি জনসমর্থনের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন পুতিনের সমর্থকরা।
সূত্র : রয়টার্স
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড