আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্র আফগানিস্তানে পুরুষের সঙ্গে নারীদের কাজ করার অনুমতি দেওয়া উচিৎ হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন কট্টর ইসলামপন্থি নতুন শাসকগোষ্ঠী তালেবানের জ্যেষ্ঠ নেতা ওয়াহিদুল্লাহ হাশিমি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তালেবান সরকারের এই পরিকল্পনার বিষয়ে বিস্তারিত জানান তিনি।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বার্তা সংস্থাটি বলছে, তালেবানের এই সিদ্ধান্ত যদি আনুষ্ঠানিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে আফগান সরকার, ব্যাংক, অফিস, গণমাধ্যম এবং অন্যান্য কর্মক্ষেত্রেও নারীদের কাজে নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি কার্যকর হবে।
তালেবান নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ এবং কট্টর এই গোষ্ঠীর জ্যেষ্ঠ নেতা মনে করেন, তালেবান আফগানিস্তানে পুরোপুরি শরিয়া আইন বা ইসলামি আইনের বাস্তবায়ন করতে চায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নারীদের চাওয়া অনুযায়ী কাজের অনুমতি প্রদানের চাপ প্রয়োগ করলেও দেশটির নতুন শাসকগোষ্ঠী নিজেদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
তড়িৎ গতির অভিযানের মাধ্যমে গেল মাসে গোটা দেশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর তালেবানের নেতারা বলেছিলেন, শরিয়া আইনের সীমার মধ্যে থেকে আফগান নারীরা কাজ এবং পড়াশোনার অনুমতি পাবেন। তাদের এমন আশ্বাসের পরও শরিয়া আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নারীরা আদৌ কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকতে পারবেন কি-না তা নিয়ে ব্যাপক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তালেবান যখন ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের শাসন করেছিল, তখনো চাকরি এবং শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন নারীরা।
বিশ্লেষকদের মতে, বিদ্যমান এই সংকট আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ এবং আফগানিস্তানে দেওয়া আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তার ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে। তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে দেশটিতে ব্যাপক মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক আফগান নাগরিক নিজেদের পুরনো আসবাবপত্র, এমনকি লেপ-তোষক, থালা-বাটিও বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
হাশিমি দাবি করেন, আফগানিস্তানে শরিয়া আইনি ব্যবস্থা আনার জন্য আমরা প্রায় ৪০ বছর যাবত সংগ্রাম করেছি। শরিয়া... পুরুষ এবং নারীকে পরিবারের বাইরে এক ছাদের নিচে কখনোই একত্রিত হওয়া অথবা এক সঙ্গে বসার অনুমতি দেয় না।
আরও পড়ুন : মিশরের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ
তার মতে, পুরুষ এবং নারীরা এক সঙ্গে কাজ করতে পারেন না। এটা পরিষ্কার। তারা আমাদের অফিসে আসার এবং মন্ত্রণালয়ে কাজ করার অনুমতি পাবেন না।
তালেবানের নতুন সরকারের নীতিতে হাশিমির এই মন্তব্যের কতটা প্রতিফলিত হবে সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। যদিও অন্যান্য কিছু কর্মকর্তার জনসম্মুখে করা মন্তব্য তার তুলনায় বেশি বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রাজধানী কাবুল জয়ের পর তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছিলেন, আমাদের সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছেন নারীরা। তারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন খাতে কাজ করবেন। তিনি আফগানিস্তানের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে ফেরার যে আহ্বান জানিয়েছিলেন, তাতে নারীদের কথাও বলা হয়েছিল।
আফগান মন্ত্রিসভাতে শুধুই পুরুষ
গত ৭ সেপ্টেম্বর দেশটিতে যে মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তাতে একজন নারীও স্থান পাননি। এমনকি এরপর কর্মক্ষেত্র থেকে নারীদের নিজ নিজ বাড়িতে ফেরত পাঠানোর অভিযোগও আসতে শুরু করেছে।
হাশিমি জানিয়েছেন, নারীদের কাজে নিষেধাজ্ঞা অবশ্য ব্যাংকিং এবং গণমাধ্যম খাতের ওপরও প্রযোজ্য হবে। ২০০১ সালে তালেবানের পতন এবং পশ্চিমা-বিশ্ব সমর্থিত সরকার ক্ষমতাগ্রহণের পর এই দুই খাতে আফগান নারীদের অংশগ্রহণ ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে যায়।
তিনি বলেছেন, বাড়ির বাইরে পুরুষ এবং নারীদের যোগাযোগের অনুমতি কেবল মাত্র নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে দেওয়া হবে। উদাহরণ হিসেবে নারীরা পুরুষ চিকিৎসকের কাছে যেতে পারবেন। এমনকি নারীদের শিক্ষা এবং মেডিক্যাল খাতে কাজ এবং পড়াশোনা করার অনুমতি দেওয়া উচিৎ। যদিও তাদের সেখানে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
আরও পড়ুন : যোদ্ধাদের ইউনিফর্ম পরতে বলছে তালেবান
হাশিমি আরও বলেন, অবশ্যই নারীদের আমাদের প্রয়োজন। যেমন— শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে। আমরা তাদের জন্য পৃথক ইনস্টিটিউশন করব। আলাদা স্কুল, আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়, আলাদা হাসপাতাল এবং আলাদা মাদরাসাও হতে পারে।
এর আগে রবিবার তালেবানের নতুন শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, আফগান নারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন। যদিও শ্রেণিকক্ষে অবশ্যই পুরুষদের থেকে তাদের আলাদা বসার ব্যবস্থা করতে হবে।
এ দিকে গত দুই দশকে আফগান নারীরা যেসব অধিকার অর্জন করেছেন, তালেবান ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকে সেগুলো রক্ষার দাবিতে দেশজুড়ে কয়েকটি বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন নারীরা। এ সময় তালেবানের সশস্ত্র যোদ্ধারা ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২০ বছরে মার্কিন সামরিক অভিযানের অন্যতম বড় সফলতা হিসেবে আফগান ভূখণ্ডে অধিক রক্ষণশীল প্রত্যন্ত এলাকার তুলনায় নগরগুলোতে নারীদের অধিকারের উন্নতি হয়েছে দাবি বিশেষজ্ঞদের। যার অবসান ঘটে গত ৩১ আগস্ট দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক বাহিনীর চলে যাওয়ার মাধ্যমে।
আরও পড়ুন : ১০০ কোটি ডলার সহায়তা পাচ্ছে আফগানিস্তান
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, গত বছর আফগানিস্তানে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের হার ছিল ২৩ শতাংশ। তালেবান যখন ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে দেশ শাসন করেছিল সেই সময় এই হার ছিল একেবারে শূন্য।
সূত্র : রয়টার্স
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড