• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পাঞ্জশিরে তালেবানের হয়ে ড্রোন হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান?

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪:১৬
পাঞ্জশিরে তালেবানের হয়ে ড্রোন হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান?
পাঞ্জশিরে তালেবানের হয়ে ড্রোন হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান? (ছবি : প্রতীকী)

যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্র আফগানিস্তানে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ সমৃদ্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে সশস্ত্র সংগঠন তালেবান। যদিও এর মধ্যেই দাবি উঠছে যে- বিরোধী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে তালেবান যোদ্ধাদের সহায়তা করছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তান। যদিও এ দাবি পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামাবাদ। কিন্তু পাক ড্রোন সম্পর্কিত দাবিগুলো কতটা সঠিক? এমনটাই প্রশ্ন বিশ্লেষকদের।

তালেবান যোদ্ধারা কাবুলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জশির উপত্যকায় লড়াই করছিল এবং এটি ছিল কার্যত তালেবান বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা সর্বশেষ কোনো এলাকা। গত কয়েকদিনে দাবি উঠেছে যে, তালেবান বিরোধী অবস্থানগুলোকে লক্ষ্য করে পাকিস্তানি কয়েকটি ড্রোন ব্যবহৃত হয়।

বিতর্কিত এ দাবির একটি সূত্র ছিল- আফগান সাংবাদিক তাজুদ্দিন সরৌশ, যিনি দাবি করেছেন যে- তাকে পাঞ্জশিরের গভর্নর কামালুদ্দিন নিজামি বলেছেন, ড্রোন ব্যবহার করে পাঞ্জশিরে বোমা হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান।

আরেকটি দাবি হলো- কিছু লক্ষ্যবস্তুতে বিমান থেকে হামলা করা হয়েছে আর সেটি সেখানে একমাত্র পাকিস্তানের দ্বারাই সম্ভব। আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরেকটি দাবি ছড়িয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে- আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে পাক সরকার। যদিও এসব দাবিগুলো পাকিস্তান যেমন উড়িয়ে দিয়েছে, তেমনি প্রত্যাখ্যান করেছে তালেবানও।

পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র জেনারেল বাবর ইফতেখার ব্রিটিশ মিডিয়া বিবিসি নিউজকে বলেছেন, এগুলো পুরোপুরি মিথ্যা। একই সঙ্গে তিনি এসব দাবিকে ভারতের অযৌক্তিক প্রোপাগান্ডা হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন।

জেনারেল বাবর ইফতেখার বলছেন, আফগানিস্তানের ভেতরে যা হচ্ছে, তা নিয়ে পাকিস্তানের কিছু করার নেই, সেটি পাঞ্জশিরই হোক আর অন্য কোথাও হোক।

আরও পড়ুন : তালেবানের অধীনে প্রথম আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের কাবুল ত্যাগ

যদিও যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন ধরেই তালেবানদের সহায়তার জন্য পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করে আসছিল, যা দেশটি বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। তবে সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার একাংশ আফগানিস্তানে তালেবানের মতো বিভিন্ন গোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ রাখছিল।

পাকিস্তানের নিজস্ব ড্রোন আছে?

হ্যাঁ, আছে। ২০১৫ সালের মার্চে দেশটি জানিয়েছিল যে, তারা উত্তর ওয়াজিরিস্তানে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে ড্রোন ব্যবহার করেছে। পাকিস্তান সেসময় নিজেদের তৈরি বুরাক ড্রোন ব্যবহার করে, যা আকাশ থেকে ভূমিতে লেজার গাইডেড মিসাইল বহনে সক্ষম।

বুরাক ড্রোনটির ডিজাইন ও ডেভেলপ করার কাজ করেছে ন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্টিফিক কমিশন ইন পাকিস্তান। এছাড়া পাকিস্তান, তুরস্ক ও চীন বা তাদের উভয়ের সহযোগিতা নিয়ে দূরপাল্লার ড্রোন সক্ষমতা তৈরি করেছে এমন খবরও প্রকাশ হয়েছে।

গত বছরই খবর বেরিয়েছিল, পাকিস্তান চীন নির্মিত উইং লুং ২ ক্রয় করেছে, যেটি লিবিয়ার সংঘাতের সময় আরব আমিরাত ব্যবহার করেছিল বলে বিবিসি নিউজের অনুসন্ধানে জানা গিয়েছিল। তবে এসব রিপোর্টের মধ্যে একটি খবর বেশ কৌতূহল তৈরি করেছিল; আর তা হলো পাকিস্তান চীনর সিএইচ-৪ ড্রোন সংগ্রহ করেছে।

সিএইচ-৪ ড্রোনটি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও হামলা- দু’টি কাজেই ব্যবহার করা যায়। ডিফেন্স জার্নাল জেইন ডিফেন্স উইকলি বলছে, এটি উৎকৃষ্ট মানের মনুষ্যহীন যান। এটি মূলত নজরদারিতে ব্যবহার করা হয়, যা আকাশে একনাগাড়ে ৩০ ঘণ্টারও বেশি সময় থাকতে পারে।

এর আরেকটি ধরণ হলো- সিএইচ-৪বি যা ৩৪৫ কেজি পর্যন্ত বিস্ফোরক বহন করতে পারে, তবে আকাশে মাত্র ১৪ ঘণ্টা অবস্থান করতে পারে। এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে এর মধ্যে কোনটি পাকিস্তানের কাছে আছে। যদিও পাকিস্তান দূরপাল্লার ড্রোন সক্ষমতার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

আরও পড়ুন : গভীর রাতে প্যারেড ময়দানে কিম জং উন

এছাড়া পাকিস্তানের শাপার-২ ড্রোন ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত উড়তে পারে আকাশে। দেশটির আরও ড্রোন আছে, যা মূলত নজরদারির কাজে ব্যবহৃত হলেও মিসাইল বহন করতে পারে না।

পাকিস্তান আফগানিস্তানে ড্রোন ব্যবহার করতে পারে?

এ মুহূর্তে নিশ্চিত কোনো প্রমাণ নেই, তবে কিছু সন্দেহ বা ধারণা তৈরি হয়েছে। পাকিস্তানের ড্রোন কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করে এমন সূত্রগুলো এরিয়াল একটি ইমেজ শেয়ার করেছে, যাতে মনে হচ্ছে সিএইচ-৪ ড্রোন।

এটা চলতি বছরের ১২ জুলাই থেকে এবং বাহাওয়ালপুর বিমান ঘাঁটিতে চারটি ড্রোনের ছবি গুগল আর্থও পরিষ্কার ভাবে দেখাচ্ছে। এটা পাকিস্তানের ড্রোন সক্ষমতা পর্যালোচনার জন্য ব্যবহার করা যায়, তবে এর মানে এই নয় যে এগুলোই পাঞ্জশিরে ব্যবহৃত হয়েছে।

লন্ডনভিত্তিক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসের জাস্টিন ব্রঙ্ক অবশ্য বলছেন, চীনের সিএইচ-৪ চীন পরিচালিত একটি স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। তার মতে, ‘চীনারা হয়তো পাকিস্তানকে সীমান্ত লঙ্ঘন করার সুযোগ দিতে চাইবে না।’

সেক্ষেত্রে সিএইচ-৪ এর গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে সরাসরি রেডিও কন্ট্রোল লিংক দরকার হবে, যা পাকিস্তানের মাটি থেকে উল্লেখযোগ্য দূরত্বে পাঠাতে কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। আবার পাঞ্জশিরে হামলা করে পাকিস্তান কী অর্জন করতে চায়, সেটি নিয়েও প্রশ্ন আছে।

আরও পড়ুন : আফগানিস্তান ক্ষত বইবে বহুকাল

ইসলামাবাদ ভিত্তিক সামরিক বিশ্লেষক ড. মারিয়া সুলতান বলছেন, এ ধরনের হামলার মধ্যে কোনো কৌশলগত অর্জন আছে বলে মনে হয় না। একই ধরনের কথা বলেছেন জাস্টিন ব্রঙ্কও।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

ওডি/কেএইচআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড