তালেবানের অধীনে প্রথম আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের কাবুল ত্যাগ

মার্কিন নাগরিকসহ আনুমানিক ২০০ যাত্রী নিয়ে বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) কাবুল বিমানবন্দর ছেড়ে গেছে একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্র আফগানিস্তান তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পর তাদের অধীনে রাজধানী কাবুল থেকে ছেড়ে যাওয়া এটিই প্রথম বিদেশি ফ্লাইট। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে টানা দুই সপ্তাহের বিশৃঙ্খল উদ্ধার অভিযান শেষে গত ৩১ আগস্ট বিমানবন্দরটির দখল নেয় তালেবান বাহিনী। মূলত এরপর থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত কাবুল থেকে আর কোনো ফ্লাইট ছেড়ে যায়নি।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাতারের ব্যবস্থাপনায় চলা বিশেষ ফ্লাইটটির গন্তব্য দোহা। বৃহস্পতিবার বিকালে প্রায় ২০০ আরোহী নিয়ে কাতার এয়ারওয়েজের বিমানটি কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। এর আগে আফগানিস্তানে আটকে পড়া বিদেশি নাগরিকদের দেশে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয় তালেবান সরকার।

পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে কাতার এয়ারওয়েজের ওই ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষায় থাকা একজন আফগান-আমেরিকান নাগরিক এএফপিকে বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে আমি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে টেলিফোন পাই। তখন তারা আমাকে দ্রুত বিমানবন্দরে যাওয়ার কথা বলেন। যদিও নাম জানতে চাইলে নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি এএফপির কাছে নিজের পরিচয় প্রকাশ করেননি।

সশস্ত্র ইসলামিক সংগঠন তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর প্রতিহিংসার শিকার হয়ে ভয়ে অনেক আফগান, বিশেষ করে যারা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য কাজ করছেন, তারা মরিয়া হয়ে বিমানবন্দরের দিকে ছুটতে শুরু করেন। মার্কিন প্রশাসনও নিজেদের নাগরিকদের পাশাপাশি আফগান সহযোগীদের যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যেতে শুরু করে। তখন কাবুল বিমানবন্দরে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।

আরও পড়ুন : আফগানিস্তান ক্ষত বইবে বহুকাল

সংকটময় এমন পরিস্থিতির মধ্যে বিমানবন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ১৩ সদস্য এবং ১৭০ জন আফগান প্রাণ হারান। এতে আহত হন আরও বহু মানুষ। পরবর্তীকালে বিমানবন্দরে ভয়াবহ সেই আক্রমণের দায় স্বীকার করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আফগানিস্তান শাখা ইসলামিক স্টেট অব খোরাশান প্রভিন্স বা আইএস-কেপি।

মূলত এ ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ তাদের উদ্ধার কার্যক্রমের গতি আরও বাড়িয়ে দেয়। গত ৩০ আগস্ট মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ সেনা একটি সামরিক বিমানে ওঠার মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ দুই দশকের যুদ্ধ তথা সামরিক আগ্রাসনের সমাপ্তি ঘটে। তখনই বিজয় উদযাপন করে কাবুলের মসনদে বসে তালেবান। গত মঙ্গলবার তালেবান নিজেদের সরকার ঘোষণা করেছে।

আরও পড়ুন : ক্ষমা চাইলেন আশরাফ ঘানি

তালেবান নেতারা সরকার ঘোষণার পর কাতার কাবুল বিমানবন্দর সচল করার জন্য সব রকমের চেষ্টা চালাতে থাকে। দোহার ব্যবস্থাপনায় সম্প্রতি কাবুল বিমানবন্দরে পৌঁছায় বিমানবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি দল। মূলত সেই দলের অধীনে কাবুল বিমানবন্দর আবার সচল করে দেওয়া হলো। দোয়া জানিয়েছে, ধীরে ধীরে কাবুল বিমানবন্দরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

ওডি/কেএইচআর