আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মধ্যপ্রাচ্যের ইহুদিবাদী দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। রবিবার (৪ এপ্রিল) পবিত্র জেরুজালেম শহরের একটি আদালতে প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন দেশটির অনলাইন সংবাদমাধ্যম ওয়ালা নিউজ সাইটের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলান ইয়েশুয়া।
আদালতের একটি সূত্র ব্রিটিশ মিডিয়া বিবিসি নিউজকে জানিয়েছে, সাক্ষীর তালিকায় ইয়েশুয়ার পরে যাদের রাখা হয়েছে, তারা হলেন— ওয়ালা নিউজ সাইটের প্রধান নির্বাহী সম্পাদক আভিরাম এলাদ, সাবেক সংবাদ নির্দেশক মিখাল ক্লেইন এবং বার্তা বিভাগের সাবেক প্রধান আমিত ইশেল। এছাড়া ইসরায়েলের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মহাপরিচালক আভি বার্গারও রয়েছেন এই তালিকায়।
ঘুষ, অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণার অভিযোগে ২০১৯ সালের মে মাসে ইসরায়েলের জেরুজালেমে অবস্থিত জেলা আদালতে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়। পরে মহামারির কারণে স্থগিত করা হলেও গতবছর নভেম্বর থেকে আবার শুরু হয় বিচার কার্যক্রম।
মামলার অভিযোগে যা যা বলা হয়েছে
ইসরায়েলের আদালতে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যে তিনটি দুর্নীতি মামলা চলছে, তার প্রথমটির (মামলা নাম্বার ১,০০০) অভিযোগে বলা হয়েছে— ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন সময়ে কয়েকজন ব্যবাসায়ীকে অবৈধ সুবিধা দিয়েছিলেন তিনি। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে উপহার হিসেবে নিয়েছেন দামী সিগার ও শ্যাম্পেন।
দ্বিতীয়টির (মামলা নাম্বার ২,০০০) অভিযোগে বলা হয়েছে, নিজের ইতিবাচক প্রচারের (পজিটিভ কভারেজের) বিনিময়ে ইসরায়েলের দৈনিক এদিয়ত আহরোনোতের বিক্রি বা সার্কুলেশন বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন নেতানিয়াহু।
তৃতীয়টির (মামলা নাম্বার ৪,০০০) অভিযোগে বলা হয়েছে, দেশের প্রধানমন্ত্রী ও যোগাযোগ মন্ত্রীর পদে থাকাকালে ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান টেলিকম প্রতিষ্ঠান বেজেক টেলিকমের প্রধান শেয়ারহোল্ডার শাওল এলোভিচকে অবৈধ সুবিধা দিয়েছিলেন তিনি। বিনিময়ে এলোভিচ তার পত্রিকা ওয়ালা নিউজ সাইটে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে দিয়েছিলেন পজিটিভ কভারেজ।
তিন মামালার মধ্যে তৃতীয়টিকে সবচেয়ে গুরুতর বলে মনে করছেন ইসরায়েলের রাজনীতি বিশ্লেষকরা; কারণ ঘুষ আদান-প্রদানের বিষয়টি এখানে প্রায় সরাসরি এসেছে। রোববার জেরুজালেমের আদালতে তৃতীয় মামলাটিরই সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।
ইসরায়েলের সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচনে বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দুর্নীতি মামলা। দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে তাকে সরানোর দাবিতে টানা বিক্ষোভ করেছেন দেশটির সাধারণ জনগণ। এমনকি তার দল লিকুদ পার্টি ও ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির রক্ষণশীল ব্লকের একাংশ নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল।
নেতানিয়াহু অবশ্য বরাবরই তার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। গত জানুয়ারিতে আদালতে দেওয়া এক চিঠিতে তিনি জানিয়েছিলেন, নিজের শাসনকালীন মেয়াদে কখনও কোনে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না তিনি।
তারপর ফেব্রুয়ারিতে আদালতে উপস্থিত হয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে অভিযোগগুলো আমার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে সেগুলো সঠিক নয়, তথাকথিত প্রগতিশীলরা তাদের ষড়যন্ত্র সফল করতে আমার বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ দায়ের করেছে।
তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনাকে বিরোধী শিবিরের ‘ডাইনি নিধন’ বা উইচ হান্ট কার্যক্রম বলেও বিভিন্ন সময়ে সমালোচনা করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন : ইরাকি মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ভয়াবহ রকেট হামলা
ইসরায়েলের ইতিহাসে প্রধানমন্ত্রী হিসবে সবচেয়ে দীর্ঘসময় দায়িত্বপালনের রেকর্ড রয়েছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর। ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথম দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরের দুই মেয়াদে জিতে না পারলেও ২০০৯ সাল থেকে আবারও দেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করে আসছেন তিনি।
সূত্র : বিবিসি নিউজ
ওডি/কেএইচআর
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118241, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড