• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ফিরে দেখা ২০২০ : কেমন কেটেছে মধ্যপ্রাচ্যে?

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

৩০ ডিসেম্বর ২০২০, ১৮:১১
ফিরে দেখা ২০২০ : কেমন কেটেছে মধ্যপ্রাচ্যে?
হামলায় বিধ্বস্ত স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে (ফাইল ছবি)

মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ২০২০ ঘটনাবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর। ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী করোনা মহামারির খবরই সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে বছরের শেষ দিকে বেশকিছু রাজনৈতিক পরিবর্তন আলোচনার শীর্ষে উঠে আসে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ লিবিয়া ও ইয়েমেনে সংঘর্ষবিরতি ও সমঝোতা চুক্তির ঘটনা কিছুটা আশা জাগিয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ঘটনা ফিলিস্তিনসহ গোটা আরব বিশ্বের জনসাধারণকে হতাশ করেছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের বিখ্যাত কলামিস্ট টমাস এল ফ্রিডম্যান এই ঘটনাকে মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক ভূমিকম্প বলে ব্যাখ্যা করেছেন।

চলুন এক নজরে দেখে আসি ২০২০ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো কেমন ছিল-

সিরিয়া :

২০২০ সাল ছিল সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের দশম বছর। এই যুদ্ধ পাঁচ লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। প্রায় এক কোটি ত্রিশ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে।

মার্চের শুরুতে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব প্রদেশে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয় রাশিয়া ও তুরস্ক। কিন্তু প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সিরিয়ার প্রতি ইঞ্চি ভূমির ওপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা। তিনি সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন : সিরিয়ায় ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল (ভিডিয়ো)

মস্কো ও আঙ্কারার যুদ্ধবিরতি হলেও ইসরায়েল সিরিয়ায় ইরানি লক্ষ্যবস্তুর ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) আবারও সক্রিয় হচ্ছে। করোনা মহামারি এবং কিছু অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের ফলে তৈরি হওয়া শূন্যতার সুযোগে আইএস পুনরায় শক্তি অর্জন করছে।

ইরাক :

বছরের শুরুতে ৩ জানুয়ারি ইরাকের রাজধানী বাগদাদের বিমানবন্দরের কাছে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রধান জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ভয়াবহ সেই হামলায় সোলাইমানি ও ইরাকি পপুলার মোবিলাইজেশন ইউনিটসের (পিএমইউ) সেকেন্ড-ইন-কমান্ড আবু মাহদি আল-মুহানদিস ওই হামলায় নিহত হন।

এর জবাবে ইরানও ইরাকের মাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ঘাঁটির ওপর রকেট নিক্ষেপ করে। ইরান ও ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। ইরাকে বছরজুড়েই সোলাইমানি হত্যাকাণ্ডের জের ধরে সহিংসতা অব্যাহত ছিল। গত ২০ ডিসেম্বর ইরাকের রাজধানী বাগদাদের মার্কিন দূতাবাসের কাছে রকেট হামলা চালানো হয়। সেখানে অন্তত ৫টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনার পরে ইরাকি সেনাবাহিনীর দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ওই হামলায় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, মার্কিন দূতাবাসের নিকটবর্তী অত্যন্ত সুরক্ষিত এলাকা গ্রিন জোনে অন্তত ৩টি রকেট ভূপাতিত হয়েছে। আর অন্য দুটি রকেট আঘাত হেনেছে পার্শ্ববর্তী আবাসিক এলাকায়।

ইয়েমেন :

যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্র ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে সরকারি বাহিনী এবং সাউদার্ন ট্র্যানজিশনাল কাউন্সিলের (এসটিসি) মধ্যে যুদ্ধ অব্যাহত ছিল। উত্তরাঞ্চলে বিদ্রোহী হুথিরা সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোট ও সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছে।

আরও পড়ুন : উত্তেজনা বাড়িয়ে সৌদিকে ২৪ লাখ কোটি টাকার অস্ত্র দিচ্ছেন ট্রাম্প

ইয়েমেনের সরকারি বাহিনীর পাশাপাশি সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে ২০১৫ সাল থেকে। হুথিরা রাজধানী সানাসহ দেশের উত্তর ও পশ্চিমের বিরাট একটা অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে।

এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইয়েমেনে লাখ লাখ মানুষ মারা গেছে। ইয়েমেনের পরিস্থিতিকে এখন বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।

ডিসেম্বরের শেষ দিকে মঈন আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠনের নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট আব্দু রাব্বি মনসুর হাদি। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে রিয়াদ চুক্তির আলোকে এই নতুন সরকার গঠন করা হয়। এতে ইয়েমেনের বর্তমান সরকার ও সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের (এসটিসি) মধ্যে সমঝোতা হয়।

লিবিয়া :

বিদেশি শক্তিগুলো লিবিয়ায় জাতিসংঘের স্বীকৃত গভর্নর অব ন্যাশনাল অ্যাকর্ড (জিএনএ) এবং খলিফা হাফতারের গঠিত লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির (এলএনএ) মধ্যে যুদ্ধ উস্কে দিয়েছিল।

তুরস্ক-সমর্থিত জিএনএ চলতি বছরের গোড়ার দিকে রাশিয়া, ফ্রান্স এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশকিছু দেশের সমর্থনপুষ্ট হাফতার বাহিনীর বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। হাফতার বাহিনী এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দখল করে রাখার পর জিএনএ ত্রিপলির উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে।

আরও পড়ুন : পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্রেপ্তার

এরপর গত আগস্টে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘ কার্যালয়ে পাঁচ দিনব্যাপী আলোচনার পর দু'পক্ষের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। নভেম্বরে লিবিয়ার জাতিসংঘ মিশন জানায় লিবিয়ার সুধী সমাজ ও রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিরা আগামী বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন।

মিশর :

মিশরের সিনাই উপদ্বীপে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে আইএস। তবে পুরো দেশের ওপর প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির নিয়ন্ত্রণ আরও দৃঢ় হয়েছে। সংবাদমাধ্যমগুলোর কণ্ঠরোধ করে রাখা হয়েছে। সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন চলছে আগের মতোই।

গত সেপ্টেম্বরে মিশরজুড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিয়োতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা ব্যানার প্রদর্শন করে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছে। গিজায় বিক্ষোভকারীরা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে।

মানবাধিকার কর্মীদের ওপর নির্যাতন চালানোর প্রতিবাদে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পার্লামেন্ট এর সদস্য দেশগুলোকে মিশরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করার আহ্বান জানায়। মিসর সরকার যে কোনো আন্তর্জাতিক সমালোচনা অব্যাহতভাবে প্রত্যাখ্যান করে যাচ্ছে এবং এগুলোকে অনধিকার হস্তক্ষেপ বলে অভিহিত করেছে।

ফিলিস্তিন :

বেশ কয়েকটি আরব রাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের চুক্তির ফলে ফিলিস্তিনিরা ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে হামাসের সঙ্গে ফাতাহের সমঝোতা এখনো সেভাবে এগোয়নি।

ডেনভার বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর মিডেল ইস্ট স্টাডিজের পরিচালক নাদের হাশেমী বলেন, নতুন বছরে স্বৈরাচারী আরব সরকারগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কোন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। তারা ফিলিস্তিনিদের আরও দূরে ঠেলে দেবে।

আরও পড়ুন : করোনা মহামারির বছরটি যেভাবে কাটাল শরণার্থীরা

ইহুদিবাদী দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েল যেভাবে তার বসতি সম্প্রসারণ করেছে, তাতে বেথেলহাম শহর থেকে আলাদা হয়ে গেছে পূর্ব জেরুজালেম। পূর্বের প্রতিশ্রুত দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানে পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী করার যে পরিকল্পনা পেশ করা হয়েছিল, তা এখন অকল্পনীয় ব্যাপার হয়ে গেছে।

হাশেমী বলেন, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে থাকার এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি মার্কিন অর্থসহায়তা আবার চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু বিদ্যমান অবস্থায় উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আনার চেষ্টা তিনি করবেন না।

নতুন বছরেও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন অব্যাহত থাকবে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়ের কারণে এর গতি কিছুটা ধীর হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

ইসরায়েল :

মধ্যপ্রাচ্যের ইহুদিবাদী দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলের জন্য ২০২০ একটি দারুণ বছর। কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে তেল আবিবের সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার বিষয়টিকে তাদের জন্য একটি বড় সফলতা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহু গোপনে মুসলমানদের তীর্থস্থান সৌদি আরব সফর করেছেন। এটাও আরব বিশ্বের স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে ইসরায়েলের একটি বড় অগ্রগতি।

আরও পড়ুন : ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে কিমের বোন ইয়োর গোপন তথ্য প্রকাশ

নাদের হাশেমী বলেন, ২০২১ সালেও ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন সমর্থন অব্যাহত থাকবে। জো বাইডেন সম্ভবত ওবামা যুগের নীতি অনুসরণ করবেন। তা হলো ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী সমর্থন অব্যাহত রাখা, পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কাজে লাগিয়ে ইসরায়েল যেন আন্তর্জাতিক কোনো আইন লঙ্ঘন করতে না পারে সেদিকে নজর রাখা। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা নেই।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড